‘বাড়ি’ ও ‘বাসা’ দুটোই বাসস্থান। অভিধানেও এমন উল্লেখ আছে। তবে উভয় শব্দের আভিধানিক অর্থে কিছু পার্থক্য আছে। মানুষের ক্ষেত্রে যা বাসা তা বাড়ি হলেও পাখিদের বাসস্থান সবসময় বাসা। তাদের বাসস্থানকে বাড়ি বলা হয় না। অতএব একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেল, পাখিদের বাসস্থানকে বাসা বলা হয়।
‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী ‘বাড়ি’ অর্থ, ‘বাসস্থান’, ‘আদিনিবাস’ এবং ‘বাসা’ অর্থ,
(১)‘পৈতৃক ভিটা ভিন্ন বাসস্থান’, ‘শহরের ভাড়া করা বাড়ি’ এবং
(২) ‘কুলায়’, ‘নীড়’। অভিধানিক অর্থ বিচারে পাখির বাসস্থানকে কোনোরূপ সংশয় ছাড়া ‘বাসা’ বলা যায় কিন্তু মানুষের বাসস্থানকে নিঃসশয়ে বাসা বলা যায় না। মানুষের জন্য বাসা হচ্ছে পৈতৃকভিটা ছাড়া অন্যকোনো বাসস্থান বা আদিনিবাস। এ হিসেবে শুধু শহরের ভাড়া করা বাড়ি নয়, কেউ তার আদিনিবাস বা পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে অন্যকোথাও বাসস্থান নির্মাণ করে বসবাস করলে সেটিও বাসা হয়ে যায়। আবার অভিধান অনুযায়ী বাড়ি হচ্ছে, আদিনিবাস, পৈতৃক বাসস্থান এবং নিজের বাড়ি। হয়তো এজন্য বাড়ির মালিক অন্যকে ভাড়া-দেওয়া বাসস্থানকে সাধারণত বাড়ি বলেন। তবে নিজে যে বাসস্থানে থাকে সেটি স্বমালিকানাধীন হলেও সাধারণত ‘বাসা’ বলেন।
অভিধানে যা-ই লেখা থাকুক না কেন, এখন শব্দ দুটোর প্রায়োগিক অর্থ শুধু আভিধানিক অর্থে সীমাবদ্ধ নেই। বড়ো বড়ো আবাসন এলাকাসমূহে নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্বিচারে বাসা নম্বর বা বাড়ি নম্বর উল্লেখ করা হচ্ছে। শহরাঞ্চলে লোকমুখে এবং দাপ্তরিক দলিলপত্রেও অভিধানের মতো ‘বাসা’ ও ‘বাড়ি’র কোনো পার্থক্য লক্ষ করা যায় না। এখানে যা বাসা, তাই বাড়ি। আসেলে, শহুরেদের অধিকাংশ বাসস্থানই পাখির নীড়ের মতো ক্ষুদ্র, অস্থায়ী এবং অনিরাপদ। এসব বাসা পাখির বাসার মতোই, আজ এখানে কাল ওখানে, বস্তি তো পুরো শহরই – হয়তো এজন্য শহরে মানুষের বাস্থানকে বলা হয় বাসা।