অথবা, “তারপর দিন দিন কেমন যেন হয়ে যেতে লাগল মৃত্যুঞ্জয়।” মৃত্যুঞ্জয় ধীরে ধীরে যেভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল তা গল্প অবলম্বনে লেখাে।
অথবা, “তারপর মৃত্যুঞ্জয়ের গা থেকে ধূলিমলিন সিল্কের জামা অদৃশ্য হয়ে যায়।”- মন্তব্যটির আলােকে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের ভূমিকা বিশ্লেষণ করাে।
কথামুখ: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কে বাঁচায়, কে বাঁচে ছোট গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় একদিন বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথে ফুটপাথে অনাহার মৃত্যু দেখে। সেই দৃশ্য দেখেই তার শারীরিক ও মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হতে শুরু করে।
মানসিক পরিবর্তন: অনাহার-মৃত্যু দেখে নিজেকে চরম অপরাধী বলে ভাবতে শুরু করে মৃত্যুঞ্জয়। দুর্ভিক্ষের দেশে চারবেলা পেট ভরে খাওয়া এবং অবসরযাপনের সুখকল্পনায় দিন কাটানাের গ্লানিতে তার মন ভরে ওঠে। বাড়িতে ভালাে করে খেতে ও ঘুমােতে পারে না সে। সস্ত্রীক একবেলা না খেয়ে ওই খাবার সে অভুক্তদের বিলােনাে শুরু করে। কিন্তু এতেও তার হতাশা দূর হয় না। নিখিলের মাধ্যমে পুরাে মাসের মাইনেটা সে ত্রাণ-তহবিলে দান করে দেয়।
শারীরিক পরিবর্তন: ক্রমশ সে অফিসে অনিয়মিত হয়ে পড়ে, কাজে ভুল করে, প্রায়ই চুপচাপ বসে ভাবে। শহরের গাছতলায়, ডাস্টবিনের ধারে বা ফুটপাথে পড়ে থাকা দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষগুলিকে দেখতে ঘুরে বেড়ায়। এভাবে ধীরে ধীরে ফুটপাথই হয়ে ওঠে তার আস্তানা। এরপর তার গা থেকে ধূলিমলিন সিল্কের জামা ও ধুতি অদৃশ্য হয়ে তার পােশাক হয়ে দাঁড়ায় ছেড়া কাপড়। আদুল গায়ে জমে মাটির স্তর, দাড়িতে মুখ ঢেকে যায়। একটি ছােটো মগ হাতে আরও দশজন অনাহারীর মতাে সেও লঙ্গরখানায় লাইন দিয়ে কাড়াকাড়ি করে খিচুড়ি খায়, গ্রাম থেকে আসা দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ গুলোর মতাে একঘেয়ে সুরে সে বলা শুরু করে- “গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাইনে বাবা। আমায় খেতে দাও!”
শেষের কথা: এভাবেই মৃত্যুঞ্জয় মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তার পেশা, পরিবার ও সমাজকে ত্যাগ করে ফুটপাথের জীবনে মিশে যায়।