পটভূমি: ১৩৫০ বঙ্গাব্দে (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে) অবিভক্ত বঙ্গদেশে যে মর্মান্তিক মন্বন্তর হয়েছিল, তা পঞ্চাশের মন্বন্তর’ নামে পরিচিত। সেই মন্বন্তরের পটভূমিতেই রচিত হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’।
মৃত্যুঞ্জয়ের অনাহার জনিত চিন্তাভাবনা : বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথে ফুটপাথে অনাহার-মৃত্যুর দৃশ্য দেখার মতাে সাধারণ সহজবােধ্য ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না মৃত্যুঞ্জয়। তার সেদিনের উদ্ভ্রান্ত আচরণ বলে দিচ্ছিল যে, একজন মানুষ না খেতে পেয়ে মরলে কীরকম কষ্ট পায়, সেকথা সে ক্রমাগত ভেবেই চলেছে। খিদের যন্ত্রণা না মৃত্যু যন্ত্রণা কোন্টা বেশি কষ্টদায়ক প্রশ্নও তাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তার সহকর্মী-বন্ধু নিখিলকে সে বলেছিল যে, একজন মানুষ না খেতে পেয়ে মারা গেল, সেটা আসলে তারই অপরাধ। কারণ মন্বন্তরকালে সব জেনেশুনেও প্রতিদিন সে চারবেলা করে খেয়েছে। তা ছাড়া, ত্রাণকার্যে লােকাভাব থাকা সত্ত্বেও মৃত্যুঞ্জয় এতদিন তার অফুরন্ত অবসর কাটানাের চিন্তায় মশগুল ছিল। এসব কারণে নিখিলের সামনে নিজেকে ধিক্কার দিয়েছে সে। টুনুর মার বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি, দুঃসহ মন্বন্তর থেকে মানুষকে বাঁচানাের চিন্তাতেই মৃত্যুঞ্জয়ের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছে। সে বুঝতে পেরেছে, যথাসর্বস্ব দান করলেও এই অনাহারক্লিষ্ট মানুষগুলাের কিছু ভালো করতে পারবে না সে। এসব চিন্তা করেই হতাশ মৃত্যুঞ্জয় অনাহারক্লিষ্ট মানুষের ভিড়ে ক্রমে ক্রমে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছে।