শুরুর কথা: জীবনানন্দ দাশের মহাপৃথিবীকাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া শিকার কবিতার প্রথম অংশে কবি ভােরের আগমনে প্রকৃতির যে রূপান্তর ঘটে তার বর্ণনা দিয়েছেন।
প্রকৃতি দৃশ্যের পরিবর্তন : সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আকাশের রং যেমন পালটে যায়, প্রকৃতি হয়ে ওঠে সবুজ—ঠিক সেভাবেই হিমের রাতে দেশােয়ালি মানুষরা তাদের শরীর গরম রাখার জন্য সারারাত মাঠে যে আগুন জেলেছিল- “মােরগযফুলের মতাে লাল আগুন”- সে আগুনও নিভে আসে।
আগুনের রূপের পরিবর্তন : শুকনাে অশ্বখপাতায় সে আগুনের অবশেষ জ্বলতে থাকে, কিন্তু তার তেজ আর রং আগের মতাে থাকে না। কবির কথায়, সূর্যের আলােয় সেই আগুনের রং আর কুকুমের মতাে থাকে না, হয়ে যায় “রােগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতাে।” একটি অসাধারণ উপমানের ব্যবহার করেছেন কবি এখানে, যার সম্পূর্ণটাই আসলে এক অসামান্য চিত্রকল্প।
আগুন ও প্রকৃতির অনুষঙ্গ : রাতের অবসানে আগুন নিভে আসে, সূর্যের আলােয় তা ম্লান হয়ে যায়, আর তাকে কবি মিলিয়ে দেন অল্পপ্রাণ এক শালিকের হৃদয়ের ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ইচ্ছার সঙ্গে। সামান্য একটি স্পর্শযােগ্য বিষয় এখানে অনুভূতির বিষয় হয়ে ওঠে। আর তার থেকে অনেক দীপ্তিমান হয়ে ওঠে চারদিকের বন ও আকাশ, যা সকালের আলােয় টলমল শিশিরে ময়ূরের সবুজ-নীল ডানার মতাে ঝিলমিল করে।