শুরুর কথা: জীবনানন্দ দাশ মহাপৃথিবী কাব্যগ্রন্থের ‘শিকার’ কবিতায় তথাকথিত সভ্যসমাজের ছবি তুলে ধরেছেন।
তথাকথিত সভ্যসমাজের প্রতিনিধি : মুখে সিগারেটের ধোঁয়া, টেরিকাটা মাথা, হাতে বন্দুক নিয়ে মানুষেরা তাদের নির্মমতার প্রকাশ ঘটায়। সারারাত চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে একটি বাদামি হরিণ ভােরবেলা বেঁচে থাকার তাগিদে কচি বাতাবিলেবুর মতাে সবুজ সুগন্ধি ঘাস ছিড়ে খায়।
প্রকৃতির বুকে সভ্যসমাজের নৃশংসতা প্রয়ােগ : এরপর যখন ক্লান্ত শরীরটাকে সে নদীর জলে এলিয়ে দেয়, ঠিক তখনই একটা অদ্ভুত শব্দ হয়। নির্মল প্রকৃতির বুকে বন্দুকের গুলির এই শব্দ হয়ে ওঠে বাদামি হরিণের মৃত্যুর শব্দ। হরিণের এই ট্র্যাজিক পরিণতি ঘটে মানুষের হাতে। ধোঁয়া সেবনকারী, টেরিকাটা মানুষের দল তাদের রসনাতৃপ্তির জন্য বন্দুকের গুলিতে সৌন্দর্যের প্রতীক হরিণকে বিদ্ধ করে। জীবনসংগ্রামে হরিণটিও বাঁচতে চেয়েছিল। ভাের হলে যখন সে ভাবছিল চিতাবাঘিনির’ ভয় আর নেই, ঠিক তখনই তথাকথিত সভ্য মানুষের হাতে ঘটল তার জীবনের করুণ পরিণতি।
অন্ধ মানবসভ্যতার বিকৃত ইচ্ছা : অন্ধ মানবসভ্যতার বিকৃত ইচ্ছার বলি হতে হল হরিণটিকে। যাদের উচিত ছিল হরিণটিকে রক্ষা করা, তারাই তার মৃত্যুর কারণ হল।
ইতিকথা : ‘শিকার’ কবিতাটিতে তথাকথিত সভ্য মানুষের চেতনায় আঘাত করতে চেয়েছেন কবি। আলােচ্য কবিতায় জীবনানন্দ দাশ মানুষের চেতনাহীনতার এই নির্মম সত্যকেই তুলে ধরেছেন।