বক্তব্যের উপস্থাপনা : সমর সেন তাঁর একটি কবিতায় লিখেছিলেন— “কালক্রমে টেকনিক নিয়ে যাবে নব্যকাব্যলােকে।” সমর সেনের কবিতার আঙ্গিকের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল সংক্ষিপ্ত আয়তনে গম্ভীর বক্তব্যকে তুলে ধরা। এই বিশেষত্ব ‘মহুয়ার দেশ কবিতাতেও প্রকাশ পায়। মাত্র বাইশটি পঙক্তিতে কবি নগরজীবনের ক্লান্তি আর শূন্যতাকে তুলে ধরেন, সঙ্গে থাকে এক আশ্চর্য রােমান্টিকতা—যা এই ক্লান্ত জীবনের বহু আকাঙ্ক্ষিত রােমান্টিকতা হিসেবে উঠে আসে।
কাব্যিক শব্দের প্রয়ােগ : বিষয়কে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ভাষা হয়ে ওঠে কবির অস্ত্র। মাঝেমধ্যে তির্যক কথ্য শব্দের ব্যবহার, সমর সেনের রচনাশৈলীর বৈশিষ্ট্য হলেও ‘মহুয়ার দেশ’-এ সেই ধরন নেই। পরিবর্তে রয়েছে কাব্যিক শব্দের প্রয়ােগ।
চিত্রকল্পের ব্যবহার : চিত্রকল্পগুলি ভাষার এবং বর্ণনার সহজতার কারণে নিটোল হয়ে ওঠে। “মাঝে মাঝে সন্ধ্যার জলস্রোতে/অলস সূর্য দেয় একে/গলিত সােনার মতাে উজ্জ্বল আলাের স্তম্ভ”—সান্ধ্য প্রকৃতির একটা গােটা ছবিকে তার রং-সহ এভাবেই এঁকে দেন সমর সেন। ‘অলস সূর্য’, ‘উজ্জ্বল স্তখতা’, ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’ শব্দবন্ধগুলি তৈরি করে দেয় অপরূপ কাব্যময়তা।
ব্যঞ্জনধর্মিতা : আবার যন্ত্রসভ্যতার ক্লান্ডিকে বােঝাতে কবি যখন লেখেন—“ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়/কীসের ক্লান্ড দুঃস্বপ্ন।”- ক্লান্তির ব্যঞ্জনা যেন সীমাহীন হয়ে যায়। এভাবেই সমগ্র কবিতাটি কবির সৃষ্টিশীলতার অসামান্য উদাহরণ হয়ে থাকে।