কথামুখ: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুবাদ-নাটক ‘নানা রঙের দিন’ -এ আটষটি বছরের প্রবীণ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ই মুখ্য চরিত্র। নাটকটিতে দর্শকশূন্য অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে কখনও একা, কখনও প্রস্পটার কালীনাথ সেনের সঙ্গে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রজনীকান্ত যে কথাবার্তা বলেছেন, তা থেকে তার চরিত্রের দুটি দিক উন্মোচিত হয়েছে। কখনও ব্যক্তি রজনীকান্ত, কখনও অভিনেতা রজনীকান্তের জীবন উঠে এলেও শেষপর্যন্ত একই সুতােয় গাঁথা হয়েছে এই দুটি জীবন।
ব্যক্তি রজনীকান্ত : রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় পারিবারিক সূত্রে রাঢ়বাংলার সদ্বংশজাত ব্রাহ্মণ। যৌবনে সুপুরুষ রজনীকান্ত শুধুমাত্র অভিনয়ের নেশায় পুলিশের চাকরিতে ইস্তফা দেন। অভিনয়ের কারণেই প্রেমিকার সঙ্গেও তাঁর বিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু প্রৌঢ়ত্বে পৌছে তিনি বুঝতে পারেন তিনি একজন নিঃস্ব, রিক্ত, একাকী মানুষ। বিশাল পৃথিবীতে কোনাে স্বজন না থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ক্রমাগত বিদ্ধ হতে থাকেন তিনি।
অভিনেতা রজনীকান্ত : পয়তাল্লিশ বছর থিয়েটারে জীবন কাটানাের পর রজনীকান্ত জীবনের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে পুরােনো স্মৃতির মধ্যেও আনন্দকে খুঁজেছেন। ‘রিজিয়া’ নাটকের বক্তিয়ার কিংবা ‘সাজাহান’ নাটকের ঔরঙ্গজেবের সংলাপ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে তিনি যেন অভিনেতা রজনীকান্তকে জীবিত রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই আবার হতাশ গ্রাস করেছে তাকে। ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার বা তার অভিনয়ের দিন শেষ হতে চলার যন্ত্রণা তাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। তার মনে হয়েছে যে, তিনি আসলে একা, কারণ সমাজজীবনে অভিনেতার কোনাে স্বীকৃতি নেই, সম্মান নেই।