অথবা, “পাতায়-পাতায় জয়/জয়ােৎসবের ভােজ বানাত কারা?”— পাতায় পাতায় কাদের জয় লেখা? ‘জয়ােৎসবের ভােজ’ যারা বানাত তাদের প্রতি কবির কী মনােভাব প্রকাশ পেয়েছে?
জয়ােৎসবের ভােজ : বের্টোল্ট ব্রেখট তাঁর ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ কবিতায় জয়ােৎসবের ভােজ কথাটির দ্বারা সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তিদের যুদ্ধজয়ের যে উদ্যাপন হয়, সেদিকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন। আলােচ্য কবিতাটিতে কবি বলেছেন, সাত দরজাওয়ালা থিবৃস, ব্যাবিলনের প্রাসাদ কিংবা লিমা নগরী গড়ে তােলা, সিজারের বিজয়গাথা কিংবা আলেকজান্ডারের ভারতজয়, দীর্ঘযুদ্ধে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের জয়—প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইতিহাস আসলে রাজারাজড়াদেরই স্তুতি করেছে। তাদের বিজয়ের এই উল্লাস এবং উদ্যাপনকেই কবি ‘পাতায় পাতায় জয়’ এবং ‘জয়ােৎসবের ভােজ’ কথাটির দ্বারা বুঝিয়েছেন।
কবির মনােভাব
স্বীকৃতি দান : যারা জয়োৎসব করত কবির সহানুভূতি এবং সমর্থন তাদের জন্য নয়, যারা সেই ‘জয়ােৎসবের ভােজ’ বানাত তাদের জন্য। অর্থাৎ সাধারণ শ্রমজীবী মানুষই কবির চেতনায় ইতিহাসের নায়ক। যে শ্রমিক থি নির্মাণে পাথর ঘাড়ে করে এনেছিল, কিংবা গুঁড়াে হয়ে যাওয়া ব্যাবিলনকে কিংবা লিমাকে গড়ে তুলেছিল তাদের অবদানকে এই কবিতাটিতে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছেন কবি।
প্রতিবাদী সুর : চিনের প্রাচীর নির্মাণ করেছিল। যে রাজমিস্ত্রিরা, কবি তাদের কুর্নিশ করেছেন। আলেকজান্ডারের সঙ্গে থাকা সৈনিকেরা, স্পেনের আর্মাডা ডুবে যাওয়ায় কাতর দেশের সাধারণ মানুষেরা দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের দীর্ঘ যুদ্ধের ছায়াসঙ্গীরা—তাদেরকেই ইতিহাসের নায়ক ভেবেছেন কবি। তাই রাজ্যজয় নয়, সেই জয়ের ‘ভােজ’-এর আয়ােজন করত যে সাধারণ মানুষ ইতিহাসে তাদের উপেক্ষিত অবস্থান দেখে কবির মনে প্রতিবাদের সুর জেগে উঠেছে।