সুসং পরগনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: সুভাষ মুখােপাধ্যায় তাঁর ‘গারাে পাহাড়ের নীচে’ শীর্ষক রচনায় গারাে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সুসং পরগনার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। রেললাইন থেকে অনেকটা দূরে অবস্থিত এই সুসং পরগনার রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালাে নয়। শস্যশ্যামলা এই উপত্যকার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী সােমেশ্বরী। এতে শীতকালে জল খুব কম থাকে। কিন্তু এই নদীর ঠান্ডা জলে এমন স্রোত থাকে যে, তাতে পা ডােবালে মনে হয় কুমিরে দাঁত বসিয়ে যেন পা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তাই ফেরিনৌকোতেই মানুষজনকে পারাপার করতে হয়।
জীবনযাত্রা : সুসং পরগনায় হাজং, গারাে, কোচ, বানাই, ডালু, মার্গান প্রভৃতি নানা উপজাতির মানুষের বাস। গারাে পাহাড়তলিতে হাজংরাই সংখ্যায় বেশি। চাষাবাদে দক্ষ এই উপজাতিই এ অঞ্চলে প্রথম পা রেখেছিল। এ অঞ্লে গারােদের বাসস্থানের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। গাছের উপর মাচা বেঁধে বাসস্থান তৈরি করে সেখানেই শােওয়া বসা, রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া করে তারা। পােষা হাঁস-মুরগিকেও বন্যজন্তুর থেকে বাঁচাতে তারা মাচাঘরেই রাখে। তবে এখানকার প্রতিটি উপজাতির চোখে-মুখে পাহাড়ি ছাপ থাকলেও তাদের ভাষা কিন্তু আলাদা। অবশ্য বাংলা ভাষার প্রভাবে গারাে ভাষা ছাড়া অন্য ভাষাগুলির অস্তিত্ব আর বিশেষ নেই। এইসব উপজাতির মানুষের উচ্চারণে বাংলা শব্দ অনেকটাই বদলে যায়। তারা তি’কে ‘ট’, ‘ট’কে ‘ত’, ‘ড’-কে ‘দ’ এবং ‘দ-কে ‘ড’ বলে। তাই তারা ‘দুধ’-কে ‘ডুড এবং ‘তামাক’-কে ‘টামাক’ বলে থাকে।