উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সমস্যাপূরণ’ গল্পটিতে কৃষ্ণগোপাল সরকার জ্যেষ্ঠপুত্রের প্রতি জমিদারি এবং সংসারের ভার দিয়ে কাশী যাত্রা করলেন। কৃষ্ণগোপালের জ্যেষ্ঠপুত্র বিপিনবিহারী সুশিক্ষিত ভদ্রলোক, দাড়ি রাখেন, চশমা পরেন, অতিশয় সৎব্যক্তি এমনকি তামাকটি পর্যন্ত টানেন না। কিন্তু তিনি ভদ্রলোক হলেও খাজনা আদায় বা তার পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে খুবই কঠোর ছিলেন। তার বাবা বিভিন্ন সময় বিনা খাজনায় যাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন বা বিনা লাভে সম্পত্তি দান করেছেন- সেগুলো তিনি উদ্ধার করতে উঠেপড়ে লাগলেন। তার ভাষ্য: “এ কখনো হইতে পারে না; অর্ধেক জমিদারি আমি লাখেরাজ ছাড়িয়া দিতে পারি না।” তিনি জানতেন বিষয় রক্ষা এবং কুলসম্ভ্রম রক্ষা করতে হলে তাকে এগুলো করতেই হবে। তার বাবার কালের নিয়ম দিয়ে একালে চলবে না। তিনি মনে মনে ভাবলেন তাদের যে অর্ধেক সম্পত্তি হাতছাড়া হয়েছে তা আবার উদ্ধার করতে হবে। তাই তিনি একটা নিয়মনীতি ধরে চলতে লাগলেন। একে একে তিনি প্রায় হাতছাড়া হওয়া সব সম্পত্তিই উদ্ধার করলেন। এর মধ্যে অছিমদ্দির সম্পত্তিও ছিল। তিনি বাবার নির্দেশে অছিমদ্দির সম্পত্তি ফেরত দেন এবং তাকে বিচারের হাত থেকে রক্ষা করেন। অছিমদ্দি তার ভাই জানতে পেরেও তিনি পিতার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। তিনি তার বাবার ধর্মনিষ্ঠা সম্পর্কে কোনো কিছুই বললেন না। গল্পের ভাষায়:

“শিক্ষা ও চরিত্রে আপনাকে আপনার পিতার চেয়ে ঢের শ্রেষ্ঠ বোধ হইল। স্থির করিলেন, একটা প্রিন্সিপল না থাকার কারণে এই ফল।”

সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, শাসক হিসেবে নিজ অঞ্চলে জনপ্রিয় না হলেও ব্যক্তি হিসেবে বিপিনবিহারী অসাধারণ। তাই তিনি সহজেই অছিমদ্দির সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন এবং বাবার আদেশ পালন করতে সমর্থ হয়েছেন।