উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পে লেখকের কাছে একজন লোক তার অতীত জীবনের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি গল্পকথক ছিলেন তার দিনের সাথে রাতের বিরোধ-বাধার প্রসঙ্গটি তুলে ধরা হয়েছে।
লোকটি একসময় আড়াইশত বছরের পুরনো শাহ-মামুদের ভোগবিলাসের প্রাসাদে ছিল। নির্জন পরিত্যক্ত এ প্রাসাদ স্থানীয় লোকজন এড়িয়ে চলত। দিনে লোকজন থাকত কিন্তু রাতে কেউ থাকত না। কিন্তু কথক সে কথা হেসে উড়িয়ে দিত। তবে আস্তে আন্তে সে এই বাড়ির মোহে পড়ে। সমস্ত বাড়িটি একটি জীর্ণ সজীব পদার্থের মতো মোহ রসে তাকে জীর্ণ করতে শুরু করে। সে সন্ধ্যায় প্রাসাদে ফিরলে পূর্বের সেই ইরানি রমণীর অস্তিত্ব অনুভব করে। সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শুনতে পায়। তার মনে হয় সখিগণ পরস্পরের গায়ে জল ছুড়ে মারছে। দিনের বেলা তার কাছে এসব ঘটনা হাস্যকর বলে মনে হয় কিন্তু সন্ধ্যা হতে না হতেই বাড়িটি তাকে টানে। সমস্ত রাত সে একটি মোহের মধ্য দিয়ে কাটায়। তার কাছে অবাস্তব ব্যাপারই সত্য বলে মনে হয় আর সমস্তই, মিথ্যা মনে হয়। তার কাছে তার নিজের পরিচয় হাস্যকর বলে মনে হয়। এভাবে রাতে সে হয়ে উঠে অন্য মানুষ। স্পষ্টতই সে দিনে যেটা ভাবে সেটা রাতের আঁধারে সেই ভাবনায় ছেদ পড়ে। অর্থাৎ দিন ও রাতের মধ্যে সে সহজেই তার মানসিক বিরোধকে লক্ষ্য করে।
Leave a comment