অথবা, বাউল নামের উৎপত্তি ঘটেছে কীভাবে
উত্তর : মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বাউল পদ বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ‘বাউল’ শব্দের প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। পনেরো শতকের শাহ মুহম্মদ সগীরের ‘ইউসুফ জুলেখা’ মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণবিষয়’; ষোলো শতকের বাহরাম খানের ‘লায়লী মজনু’; এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ প্রভৃতি গ্রন্থে বাউল শব্দের ব্যবহার আছে। ‘বাউল’ শব্দটি বাউর থেকে উৎপত্তি। কারো কারো মতে, আকুল থেকে আউল যেমন ব্যাকুল থেকে বাউল শব্দের তেমন উৎপত্তি। কেউ কেউ বলেন, যারা দীন-দুঃখী উলঝুল একতারা বাজিয়ে গান গাইত তাদেরকে জনসাধারণ বাতুল বলে উপহাস করতো। তাদের মতে, এ বাতুল শব্দ থেকেই বাউল শব্দের উৎপত্তি। কারো মতে, সংস্কৃত ‘বায়ু’ শব্দের ‘ল’ যুক্ত হয়ে বাউল অর্থাৎ বায়ুভোজী উন্মাদ তথা শ্বাস প্রশ্বাসের দ্বারা সাধনাকারী অর্থে বাউল শব্দে উৎপত্তি। দার্শনিক ব্রজেন্দ্রনাথশীল বলেন, আউল থেকে বাউল শব্দের উৎপত্তি। উপর্যুক্ত এ কয়টি ব্যাখ্যার কোনোটিই উড়িয়ে দেবার মতো নয়। তবে সম্ভবত বাতুল (অপদার্থ) বা ব্যাকুল (ভাবোন্মত্ত) থেকেই বাউল শব্দের উৎপত্তি। সুতরাং বাউলরা কোনো কালেই সমাজের উঁচু স্তর থেকে শ্রদ্ধা বা মর্যাদা পায়নি বলেই তাদের বাতুল বা ব্যাকুল বলা হতো বলে। মনে করা হয়। পরিশেষে একথা বলাই সংগত যে, ‘বাউল’ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে পাঠক সমাজে বেশ কৌতূহল, উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
Leave a comment