অথবা, কৃষ্ণের বাঁশির মোহিনী সুরে জগৎ জুড়ায় – বিশ্লেষণ কর
উত্তর: মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ভুবনে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য অতুলনীয়। এ কাব্যের প্রধান চরিত্র রাধা এবং কৃষ্ণ। উভয়ের প্রেম প্রণয় কাব্যের গঠন বিন্যাস। কৃষ্ণ বড়ায়ির মুখে রাধা রূপের বর্ণনা শুনে উন্মাদ। এজন্য রাধাকে পাবার জন্য সে নানা ছল করে। আর এসবের মধ্যে তার বাঁশিটি প্রধান উপকরণ। বাঁশির মধুর সুর ধ্বনি রাধাকে পাগল করে তোলে। এর সুর শুনে তার রান্না এলোমেলো হয়। তাই সে উদভ্রান্ত হয়ে কৃষ্ণকে খোঁজ করতে থাকে। কিন্তু কৃষ্ণ বাঁশি বাজিয়ে অন্যত্র চলে যায়। এমতাবস্থায় রাধা কৃষ্ণকে পাবার জন্য বড়ায়ির পরামর্শে কৃষ্ণের রাশি চুরি করে কলসির মধ্যে লুকিয়ে রাখে। অন্যদিকে কৃষ্ণ ঘুম থেকে উঠে বাঁশি না পেয়ে সর্বত্র ছুটাছুটি করে। কৃষ্ণের ভাষায় এ বাঁশিটি রত্নখচিত। এর শব্দে জগৎসংসার মোহিত হয়ে যায়। এর দুপাশে মুক্তার ঝালর এবং পাটের গুচ্ছ। মানিকে খচিত সোনার। পাত দিয়ে তা মোড়া। দেখতে অতি মনোহর। বাঁশিটিতে আছে হীরার কাজ। এছাড়া নগদ অর্থে সাত লাখ টাকা এর দাম। সুতরাং এ শোভনীয় বাঁশি দিয়েই কৃষ্ণ ঋক-সাম-যজু-অথর্ব- এ চারটি বেদ গান করে। এ বাঁশিই কৃষ্ণের সব। এর সুরে কৃষ্ণ দুষ্ট মন মিষ্টি করে, পরকে আত্মসম করে।
তাই বাঁশির বর্ণনায় আমরা একথা বলতে পারি যে, রাধা কৃষ্ণের রূপে যতটা না মুগ্ধ তার চাইতে বেশি মুগ্ধ কৃষ্ণের গুণে। তাই বাঁশির সুরের মোহিনী শক্তি ‘সহ্য করতে না পেরে রাধা বাঁশিটি চুরি করে। আর এ বাঁশিই জগৎ মোহিত করে তোলে।
Leave a comment