উত্তর: বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ। বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধনসংগীত। বৌদ্ধ সহজিয়াগণ তাঁদের আধ্যাত্মিক তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে যেয়ে প্রাচীন বাংলার মানুষের জীবন ও সমাজের বিশ্বাস, সংস্কার, আচার, রীতিনীতিকে সহজভাবে তুলে ধরেছেন। চর্যার বাঙালি সমাজ মূলত ডোম, শবর, জেলে, কাপালিক, তাঁতিসহ সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের জীবনের রূপায়ণ। কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক সমাজে নারী পুরুষের নির্দিষ্ট শ্রম বিভাগ ছিল না। ঘরে বাইরে সমান কাজে থাকত নারী পুরুষ। চর্যায় নদী আর নৌকার কথা আছে। পশু শিকার, বাঁশের বিভিন্ন কৃষিপণ্য, তুলা ধুনার কথাও আছে। ভাত, মাংস, মদ প্রিয় খাবার ছিল। সাজসজ্জা, নাচগান, পালা-পার্বণ, উৎসব-বাজনা, প্রেম-বিয়ে, যৌথ সংসার সব মিলিয়েই বর্ণিত হয়েছে প্রাচীন বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের চালচিত্র। দৈনন্দিন ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- চাঙ্গারি, তুলার তৈরি বস্ত্র, নৌকা, শাড়ি, টাঙ্গি, কুঠার, তালাচাবি, হাড়ি, পীঠা, ঘড়া ইত্যাদি। নারীদের অলঙ্কার হিসেবে ছিল- কঙ্কণ, কুণ্ডল, হার, নূপুর, মালা ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন ফুল লতাপাতা দিয়েও তারা নিজেকে সাজাত। সে সমাজে বিভিন্ন উৎসবে যেসব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হতো, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পটহ, মাদল, করণ্ড, কসালা, দুন্দুভি ইত্যাদি।