ভূমিকা:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস একটি ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আমাদের জীবনে এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি নব প্রত্যয় ও শপথ গ্রহণের দিন। ১৯৭১ সালের ২৬-এ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। দেশকে স্বাধীন করার জন্য বাঙালি নিয়েছিল দৃপ্ত শপথ। পশ্চিম পাকিস্তানের শােষণের নাগপাশ থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য এবং আপন পরিচয় খোঁজার নিমিত্তে সেদিন বাঙালি গর্জে উঠেছিল। দীর্ঘদিনের শােষণ ও নিপীড়ন ভেঙে আবহমানকালের গৌরবময় সাহসিকতার ইতিহাস যেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেদিন এ জাতির ভেতরে। তাই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করে সেদিন বাঙালি অর্জন করেছিল স্বাধীনতার সােনালি সূর্য।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস:
বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা দিবস আত্মত্যাগ ও আত্ম-অহংকারের একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৬-এ মার্চ এদেশের মানুষ পৃথিবীর বুকে নতুন একটি মানচিত্রের সৃষ্টি করে। বাঙালির মুক্তির সমস্ত আকাঙ্ক্ষা সমন্বিত হয়েছিল সেদিন। আকাশের নক্ষত্ররাজির মতাে ছােটো-বড়াে হাজারাে ঘটনার জন্ম হয়েছিল সেদিন। সমস্ত জাতি যেন একই অঙ্গীকারে শপথ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। রক্তস্নাত হয়ে এ সবুজ-শ্যামল বাংলা অন্যরূপ পেয়েছিল সে সময়। বাঙালির সে ক্ষণের বীরত্বের ইতিহাস চর্চিত হয়েছে বহুভাবে বহুস্থানে। এ ইতিহাস আজন্মকাল ধরে বাঙালির হৃদয়ে জাগরূক থাকবে।
স্বাধীনতা দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি:
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়; তবে সে সময় এই ভূখণ্ডের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। দীর্ঘদিনের ইংরেজ শশাষণ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার সুবাতাস পাবে তা ছিল এই অঞ্চলের মানুষের একান্ত প্রত্যাশা, কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলেও এ অঞ্চলের মানুষের শােষণমুক্তি ঘটেনি। স্বীয় রাষ্ট্রের অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। পাকিস্তানিদের প্রকৃত চেহারা উপলদ্ধি করে। মানুষের মনে ধীরে ধীরে দানা বেঁধে ওঠে স্বাধীনতার স্বপ্ন। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের পূর্বেই, অর্থাৎ ছাব্বিশে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭-এ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘােষণা। স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম একদিনে সংঘটিত হয়নি; বহুদিন ধরে ধীরে ধীরে এ সংগ্রাম মহিরুহ রূপ পেয়েছে । ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সােপান। ইতিহাসবিদদের মতে, ভাষা আন্দোলনেই স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল। এরপর ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা প্রণয়ন ও তৎপরবর্তী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান প্রভৃতি ঘটনার মধ্যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন নিহিত ছিল । ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এদেশের মানুষ ভােট দিয়েছিল। কিন্তু শাসকদের চক্রান্তে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারেনি তারা। সেই প্ৰবনা ও পরবর্তীকালে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যাই বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলনকে চরমতম রূপ দেয়।
স্বাধীনতা অর্জনের মুক্তিযুদ্ধ:
স্বাধীনতা অর্জনে এদেশের মানুষ সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে এদেশের ত্রিশলাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে— সম্ভ্রম হারিয়েছেন কয়েক লক্ষ মা-বােন। আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা পাকিস্তানিদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। এদেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, তখন দেশীয় এই রাজকারদের তৎপরতায় বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে, সম্ভ্রম হারিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে। বহু মুক্তিযােদ্ধাদের নিজেরা হত্যা করেছে, পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছে এই রাজাকার বাহিনী। দেশের অভ্যন্তরে এই শত্রুদের বিনাশ করে স্বাধীনতা অর্জন করতেই একটি সামরিক পরিকল্পনা করে তৎকালীন (১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে গঠিত হয় অস্থায়ী সরকার) অস্থায়ী সরকার। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন কর্নেল এমএজি ওসমানী। তাঁর নেতৃত্বে এবং বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের মিত্রবাহিনীর তৎপরতায় ও সহযােগিতায় ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এদেশ স্বাধীন হয়।
স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য:
জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম। এ দিনটি বাঙালির জীবনে বয়ে আনে আনন্দ-বেদনার অম্ল-মধুর অনুভূতি। একদিকে হারানোর কষ্ট অন্যদিকে প্রাপ্তির আনন্দ। শেষ পর্যন্ত সর্বস্ব হারিয়ে যেন স্বাধীনতা প্রাপ্তির অপার আনন্দটা বড় হয়ে ওঠে প্রতিটি বাঙালির কাছে।আমাদের জন্য স্বাধীনতা দিবসের মূল তাৎপর্য হলাে— এটি আমাদের ত্যাগ ও মুক্তিসংগ্রামের গৌরবময় একটি দিন। এদিন আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল; ত্যাগে ও বেদনায় মহীয়ান। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশের বতি নিপীড়িত সাধারণ মানুষ মুক্তির নতুন দিশা অর্জন করেছিল। স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে ইতিহাস রচিত হয়েছে তা এদেশের মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সােচ্চার হতে যুগে যুগে প্রেরণা জোগাবে। তাই প্রতিবছর ২৬-এ মার্চ এলেই বাঙালি নতুন শপথ গ্রহণের মাধ্যমে উজ্জীবিত হয় ।
স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের মূল্যায়ন:
স্বাধীনতার মূল অর্থ হলাে অধীনতা থেকে মুক্তি; আত্মােন্নয়নের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে নিজেকে বিকশিত করার সুযােগ লাভ । প্রতিটি স্বাধীনতা দিবস আমাদের জীবনে এনে দেয় নতুন সম্ভাবনা। আমরা নিজেদের ভেতরে স্বাধীনতার স্বাদ কতটা অনুভব করতে সমর্থ হচ্ছি তা মূল্যায়ন করি। স্বাধীনতার সুফল আমরা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারছি কিনা তাও আমরা ভেবে দেখি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের যেমন আশা জাগানাের কিছু দিক রয়েছে তেমনি অনেক দিক রয়েছে হতাশার। স্বাধীনতার সুফল সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলেই কেবল শহিদদের আত্মত্যাগ সার্থক হতে পারে।
স্বাধীনতার স্বপ্ন:
“এই দেশের বাঁশবাগানে জোছনা দেখতে চাইব
বিভেদ ভুলে আমরা সে পথেই অগ্রসর হব ”
স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল একটি শােষণমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রাষ্ট্র প্রবর্তন করা। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবাইকে স্বনির্ভর করেছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই লক্ষ্য নিয়েই দেশ গঠন শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন একনায়ক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে। ১৯৯০-এ স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা সূচিত হয়। আশার কথা এই যে, বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রয়াসের মধ্য দিয়ে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে।
স্বাধীনতার বর্তমান বাস্তবতা:
চেতনার কুৎসিত রাজনৈতিক ব্যবহার দেখে আতঙ্ক হয় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য না জানি চেতনা অর্থ শুধুই একটি মতের মানুষের নিরঙ্কুশ আধিপত্য, শোষণ, নিপীড়ন আর স্বৈরতন্ত্র হয়ে ধরা দেয়। যে মুক্তিযুদ্ধ একদিন একতাবদ্ধ করেছিল ৭ কোটি মানুষকে, রাজনীতির ঘৃণ্য চক্রে তা আজ স্পষ্টভাবে বিভাজিত করেছে ১৬ কোটি মানুষকে। কেবল রাজনীতি নয়, মানুষের চেতনায় এসেছে আমূল পরিবর্তন।দেশ সেবার নামে দেশ লুটপাট এখন নিত্য। তবুও উন্নতির চূড়ায় উঠতি বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির ভিত স্বাধীনতা।ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, বেকারত্বের দুর্বিপাকে এখনও যেন ঘুরপাক খাচ্ছে বাঙালি। দেখা যায়, আজো মূল্যবোধের অবক্ষয়, হিংসাত্মক অপরাজনীতি, লেজুড় বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি কিংবা সীমাহীন দুর্নীতিসহ নানা বিষয়েই যেন স্বাধীনতার স্বপ্ন আজও বাস্তবায়নের লাগাম টেনে ধরে আছে। স্বাধীনতার চেতনা দিনে দিনেই ম্লান হয়ে আসছে আর আমরা ক্রমশই যেন পিছিয়ে যাচ্ছি। সংকট গুলো উত্তরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আশার কথা হলো, আমাদের বর্তমান প্রজন্ম স্বাধীনতার ব্যাপারেই যথেষ্ট আগ্রহী। এই প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেই এই দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দীক্ষায় দীক্ষিত করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শত্রুকে প্রতিহত করে দেশ রক্ষার লক্ষ্যে সেই ৭ কোটি বাঙালির মুক্তির চেতনাই পারে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে পৃথিবীর বুকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে।
সমাজ-প্রগতি ও স্বাধীনতা:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন,
“২৬ মার্চ আমাদের জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন। পরাধীনতার শিকল ভাঙার দিন। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন।”
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবের ইতিহাস, অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে জেতার ইতিহাস। এ লড়াই শুধুমাত্র একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড লাভের লড়াই ছিল না, এ লড়াই ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং জাতিগত বৈষম্য আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার, লালন করার, চর্চা করার লড়াই। শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ড মিলে যে একটি রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না তার জ্বলন্ত উদাহরণ ছিল এই মুক্তিযুদ্ধ। ৭১ এর যুদ্ধ ছিল গণমানুষের যুদ্ধ, তাদের দ্বারাই রচিত হয়েছে গৌরবের অমরগাঁথা, বিশ্বের বুকে জন্ম নিয়েছে স্বাধীন, সার্বভৌম এক রাষ্ট্র। এমন গৌরবের ইতিহাস একটি জাতির ভাগ্যে বারবার রচিত হয় না।সমাজের প্রগতিই হলাে স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। তার জন্য প্রয়ােজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলােয় দৃপ্ত শপথ গ্রহণ। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে হবে উন্নয়নের নতুন মাইলফলক। প্রগতির পথে সমাজকে পরিচালিত করতে স্বাধীনতার মূল স্তম্ভগুলােকে লালন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা হতে হবে। এ পথে সাময়িক ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হলেও তা ভবিষ্যতে স্বাধীনতার বৃহদার্থকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবে ।
উপসংহার:
মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীনতার অধিকারপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে ও বিশ্বে পরাধীনতাই যেন সবাইকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। আমাদের সমাজেও সুপ্তভাবে এই প্রক্রিয়াটি লক্ষ করা যায়। কিন্তু ভুললে চলবে না আমাদের স্বাধীনতা অনেক রক্তের দামে কেনা; শহিদদের এই পবিত্র রক্তের দায় জাতি হিসেবে আমাদের সবারই। সেই দায় শােধ হতে পারে কেবল স্বাধীনতাকে সবার জন্য ভােগ্য করে তােলার মাধ্যমে। এই প্রত্যয় নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ভবিষ্যৎকালের পথে । স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য বেশি প্রয়োজন সংগ্রাম ও শক্তির। আর স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন প্রযুক্তি, কৌশল, ঐক্য ও ন্যায়বোধ। এ ছাড়া স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে জ্ঞান, বুদ্ধি, শিক্ষা ও সৎ বিবেচনাকে কাজে লাগানো একান্ত অপরিহার্য। মূলত যথেষ্ট সচেতন ও সংঘবদ্ধ না হলে স্বাধীনতাকে রক্ষা করা যায় না। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিতে হয় এবং সদা সতর্ক থাকতে হয়। তাই স্বাধীনতার মর্ম উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য মনে করা উচিত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের এই মৌল চেতনা সবাইকে অনুপ্রাণিত করুক- এটাই মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রত্যাশা।
স্বাধীনতা দিবস রচনা 2
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা বর্ণনা করতে গেলে নিম্নের বিষয়বস্তু গুলোর বর্ণনা জরুরি।
ভূমিকা
যে কোন স্বাধীনতা এত সহজে অর্জন করা যায় না। তেমনি বাঙালিদের লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। ২৬ শে মার্চ এই দিনটি জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে শুধু মাত্র শহীদদের জন্য। বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞা হিসেবে উদ্দীপ্ত হল এই স্বাধীনতা দিবস। পুরো জাতি প্রতি বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে দিবসটি উদযাপন করে থাকে।
আমরা শ্রদ্ধা জানায় মহান স্বাধীনতা রূপকার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষার জন্য নৃশংস গনহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ ও সব কিছু হারানো মা-বোনের প্রতি। আমরা এখন বুক ফুলিয়ে যে ভাবে চলাফেরা করছি তা আর সম্ভব ছিলনা যদি না লাখো লাখো মানুষ এক হয়ে যুদ্ধ না করত।
২৬ শে মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। লক্ষ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা হয়েছে এই স্বাধীনতা, এই দিনে জাতি অতি মর্যাদার সাথে স্মরণ করেছে বীর শহিদদের। ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাস লিখতে হলে পিছনের দিকে যেতে হবে অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করতে হবে।
ইংরেজদের শক্তি চলে যাওয়ার আগে এই উপমহাদেশকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি দেশে ভাগ করা যায়। যদিও ধর্মভিত্তিক এই ভাগাভাগিতে কোনো প্রকার সমস্যা বোঝা না গেলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই খোলস পাল্টে আসল রূপটি ধরা পড়তে থাকে। বর্তমান বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকভাবে শাষণ শোষণ চালাতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা।
বাঙালিদের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। ১৯৫২ সালে সর্বপ্রথম মাতৃভাষার ওপর আঘাত হানে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানাতে যখন বাংলার দামাল ছেলেরা রক্ত দিল রাজপথে ঠিক তখন থেকেই বলতে গেলে বাঙালিরা বুঝে গিয়েছিল যে স্বাধীনতায় হল আসল মুক্তি। তাছাড়া এই অত্যাচার চলতেই থাকবে। সরকারি, সামরিক, বেসামরিক সব ক্ষেত্রেই নজির বিহীন বৈষম্যের শিকার হতে থাকে বাঙালিরা।
এমনি বাংলাকে উর্দু হরফে লেখার পর্যন্ত চেষ্টা করেছিল। এই সব কিছুর কারনে বাঙালিরা ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬ সালের ৬ দফা, ৬৯ সালের গনঅভ্যুথুনা তারই ইঙ্গিত করে। বাঙালিরা বুঝতে পারে যে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন কোনো ভাবেই হস্তান্তর করবে না পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা।
যার ফলে ৭০ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতার পরও ক্ষমতায় বসতে দেয়া হয়নি। আলোচনার নামে টালবাহানা করছিল সকল বুদ্ধিমান মানুষরা বুঝতে পারছিলো যে সামনে কি আসতে চলেছে। আর এই ভাবেই বাঙালিরা এগিয়ে যেতে থাকে সেই রক্তক্ষয়ী ২৬শে মার্চ এর ইতিহাস এর দিকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষনে এক বুদ্ধিদীপ্ত কাজ করে ফেললেন যা ইতিহাসের পাতায় বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস এর একটি গুরুত্ব পূর্ণ অংশ হিসেবে থাকবে। ভাষণে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিল যে বাঙালিকে এবার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হবে, কিন্তু সরাসরি দেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেননি।
কারন সেই সময় তার নিজের এবং উপস্থিত জনতার জীবনের ঝুঁকি ছিল। আর সেই ভাষন এখনও প্রতিটি বাঙালির কানে কানে বাজে। ভাষনের মূল স্লোগান ছিল “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।”
পাকিস্তানিরা যখন শান্তির পথ বেছে নিল না , ২৫ মার্চে জেনারেল নিয়াজি, জেনারেল রাও, টিক্কা কান এদের মাষ্টার প্ল্যানে বাঙালিদের হত্যা করার মহাউৎসবে মেতে উঠেছিল। ওই রাতের বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার পূর্বে বেতারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর হয়ে ২৬ শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এরপর ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপর থেকেই শুরু হয়ে যাই ভাষা আন্দোলনের সেই রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ।
২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস
২০০ বছরের অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিদায় নেয় ব্রিটিশরা। তবে দীর্ঘ সময় শোষনের ইতিহাস শেষ হয়েও যেন শেষ হলো না। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে বাঙালিদের উপর হামলা করে পাকিস্তানি বাহিনী। যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। রাত ১১.৩০ মিনিটের দিকে শুরু হয়।
এই অপারেশনে পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা এবং বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে দুর্বল করে দেওয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরহ বাঙালিদের ওপর হামলা চালানোর পর, সেই রাতেই ২৬ শে মার্চ রাত ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। তবে গ্রেফতার হওয়ার কিছু সময় আগেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন যে আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।
অর্থাৎ সেদিন থেকেই আমরা পাকিস্তানের অংশ নই আমরা স্বাধীন। মূলত সেই দিনই আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। যার ফলে ২৬ শে মার্চকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২৬ শে মার্চে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে তা কিন্তু নয়। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর এ দেশ স্বাধীন লাভ করে।
২৬ শে মার্চ এর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ৫৬ সালের সংবিধান বাস্তাবায়নের জন্য আন্দোলন, ৫৮ সালের মার্শাল বিরোধী আন্দোলন, ৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬ সালের বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার আন্দোলন, ৬৯ সালের রক্তঝরা, ৭০ সালে ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরস্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সমস্ত কিছুই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জল ইতিহাস।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারের অভ্যন্তরে থাকে, বেশ কয়েকবার ফাঁসির কাষ্ঠের মুখোমুখি, অসংখ্যা মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করার পরও এদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে প্রেরণা দিয়েছিলেন। তার অপরিসীম সাহস ও আকর্ষণ নেতৃত্ব পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন।
সোহরাওয়াদী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সেই ঐতিহাসিক বক্তব্যে বাঙালীদের কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতার অর্জনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে গরীব-দুঃখী মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।
তিনি জেল জুলুম শত দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে হলেও বাংলা কৃষক শ্রমিক জনতার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য চেষ্টা চালিয়েছেন। বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এই তিনটি বিষয়কে বাংলার মানুষ এক বৃত্তে তিনটি চেতনার ফুল হিসেবে মনে করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের মাঝে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
২৬ শে মার্চ এর কবিতা
২৬ শে মার্চ দিনটি কখনই ভোলোর মতো নয়। এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাঙালিদের শত্রুর হাত থেকে মুক্তি করতে তিনি ২৬ শে মার্চ যুদ্ধের ঘোষণা দেন। তার ভাষণের ফলে লক্ষ লক্ষ বাঙালি ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক সহ সকল বাঙালি মুক্তির জন্য যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ২৬শে মার্চ নিয়ে অনেক লেখক লেখিকা সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখেছেন।
এই সব কবিতার মাধ্যম দিয়ে কবিরা স্বাধীনতা দিবসকে মানুষের কাছে ফুটিয়ে তুলেছেন। নিম্নে কয়েকটি কবিতা দেয়া হল-
অস্ত্র সমর্পণ
হেলাল হাফিজ
মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।
নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে, কেবল তোমাকে।
বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে
তাঁবুর ভেতর ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।
মনে আছে, আমার জ্বালার বুক
তোমার কঠিন বুকে লাগাতেই গর্জে উঠে তুমি
বিস্ফোরণে প্রকম্পিত করতে আকাশ, আমাদের ভালবাসা
মুহূর্তেই লুফে নিত অত্যাচারী শক্রর নি:শ্বাস।
মনে পড়ে তোমার কঠিন নলে তন্দ্রাতুর কপালের
মধ্যভাগ রেখে, বুকে রেখে হাত
কেটে গেছে আমাদের জঙ্গলের কতো কালো রাত!
মনে আছে, মনে রেখো
আমাদের সেই সব প্রেম- ইতিহাস।
অথচ তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে
সম্পর্ণ করে, ফিরে যাচ্ছি ঘরে
মানুষকে ভালোবাসা ভালোবাসি বলে।
যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,
যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুয়ে মানুয়ে ভেঙে সেই কালো কারাগার
আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়
হুমায়ুন আজাদ
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?
তোমন যোগ্য সমাধি কই?
মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো
অথবা সুনীল-সাগর-জল
সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই!
তাইতো রাখি না এ লাশ আজ
মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,
হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।
শহীদদের প্রতি
আসাদ চৌধুরী
তোমাদের যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
শেষ কথাটি সুখের ছিল ?
ঘৃণার ছিল ?
নাকি ক্রোধের,
প্রতিশোধের,
কোনটা ছিল ?
নাকি কোনো সুখের
নাকি মনে তৃপ্তি ছিল
এই যাওয়াটাই সুখের।
তোমার গেলে, বাতাস যেমন যায়
গভীর নদী যেমন বাঁকা
স্রোতটিকে লুকায়
যেমন পাখির ডানার ঝলক
গগনে মিলায়।
সাঝেঁ যখন কোকিল ডাকে
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরো পোস্টের তালিকা
- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা
- জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা, প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট
- নারী শিক্ষা ও নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা ২০ পয়েন্ট
কারনিসে কি ধুসর শাখে
বারুদেরই গন্ধস্মৃতি
ভুবন ফেলে ছেয়ে
ফুলের গন্ধ পরাজিত
স্লোগান আসে ধেয়ে।
তোমার যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
স্বাধীনতা তুমি
শামসুর রহমান
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশ ফেব্রুয়ারির উজ্জল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুল গ্রস্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ে সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবৈশাখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রানণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিনীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান, বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
অপারেশন সার্চলাইট
বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে অপারেশন সার্চলাইট একটি ঘৃনিত কষ্টদায়ক ঘটনা হিসেবে পরিচিত। শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়া আলোচনার আড়ালে বাঙালিদের স্বাধীনতার ইচ্ছা গুলোকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া, টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করেন।
টিক্কা খান ও তার বাহিনীরা বাংলার মানুষকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য ২৫ শে মার্চ কালরাত্রে নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালিদের উপর নৃশংস, বর্বর গনহত্যা চালায় যা বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ হওয়ার পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তারা তাদের ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা রকম ষড়যন্ত্র সৃষ্টি করে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বিভিন্ন প্রকার আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে বাঙালিদের দমন করার চিন্তা ভাবনা করেছিলেন।
এর কারনে জেনারেল টিক্কা খান, মে.জে.খাদিম হোসেন ও রাও ফরমান আলী অপারেশন সার্চলাইটের চূড়ান্ত নকশা তৈরী করেন। ইয়াহিয়ার নির্দেশে ২৫শে মার্চ রাত প্রায় ১০ টার সময় ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাকর ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড চালায় বাঙালিদের উপর।
আর সেই রাতে প্রায় ৫০,০০০ লোক নিহত হন ঢাকায়। বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে পাকিস্তানে নিয়ে আসা হয়। মূলত বাঙালিকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য পাকিস্তানি বাহিনীরা এ সামরিক অভিযান চালায় যার সাংকেতিক নাম হল “অপারেশন সার্চলাইট”।
উপসংহার
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এই স্বাধীনতার পিছনে লক্ষ লক্ষ মানুষের কষ্ট, ব্যথা বেদনা, দুঃখ লুকিয়ে রয়েছে। উপরোক্ত বর্ণিত “২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা”- আলোচনাটি একজন মানুষকে স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে ভাল ভাবে জানতে সাহায্য করবে।
Leave a comment