২৯ শে এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ইউনেস্কো এই দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকেই সারা বিশ্ব এই দিবসটি পালন করে থাকে। বিভিন্ন নৃত্য শিল্পীরা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে এবং নৃত্যের তালে তালে পুরো বিশ্ব আজ স্লোগান দিয়ে নৃত্য শিল্পীদের নৃত্য উৎসব আয়োজন করে থাকে।
নিচে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস – সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো –
আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস
২৯ শে এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। নিত্য বা নাচ সব সংস্কৃতির আদি সংস্কৃতি বা জননী। সংস্কৃতি শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম হলো এই নাচ বা নৃত্য। সারা বিশ্বেই শিক্ষার উপাদান হিসেবে নাচের জনপ্রিয়তা রয়েছে কারণ নাচ মানুষের মন এবং মেধাকে বিকশিত করে। একমাত্র নাচের মাধ্যমে এবং দেহভঙ্গিমার মাধ্যমে মনের সকল ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয়। তবে সাধারণ প্রকাশভঙ্গির চেয়ে নাচের এই প্রকাশভঙ্গির মধ্যে থাকে ছন্দ, তাল এবং লয়।
সবকিছু মিলিয়ে মানুষ হয়ে ওঠে আনন্দে বিভোর। যে কোন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে ও এই নাচের কথা উঠে আসে। একমাত্র নাচের মাধ্যমেই ফুটিয়ে তুলে যায় মনের সব চাওয়া পাওয়া, জীবনের কথা বা না পাওয়ার কথা। এজন্যই নাচ আজকে জীবনের বিনোদন হিসেবেই শুধু ধরা হয় না এটা জীবনের প্রতিবিম্বও বটে।
নৃত্য দিবসের ইতিহাস
ফরাসি নৃত্য শিল্পী জাঁ – জর্জেস এর জন্মদিন ২৯ শে এপ্রিল এবং এই দিনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ইউনেস্কো ২৯ শে এপ্রিল কে নৃত্য দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৭২৭ সালের ২৯ শে এপ্রিল জাঁ – জর্জেস জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন নৃত্য সংস্কারক। ১৭৫৪ সালে তিনি আবিষ্কার করেন ব্যালে নৃত্য আর এই নৃত্যের সংস্কারক হিসেবে তার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। এছাড়াও তিনি নভেরে নিত্য কে অপেরায় উন্নীত করার জন্য ক্ষুদ্র গণ্ডি ও সংকীর্ণতা মুক্ত করেন। ১৭৬০ সালের তিনি লেটার্স অন দা ডান্স drms গ্রন্থ রচনা করেন।
ইউনেস্কোর পারফর্মিং আর্টস এর প্রধান অংশীদার ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউ ট এর নৃত্য কমিটি দ্বারা তৈরি আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস হল নৃত্যের একটি বৈশ্বিক উপাদান। ২৯ শে এপ্রিল সারা বিশ্বে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। আর এই দিবসটির সারা বিশ্বে অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের মাধ্যমে নৃত্যে অংশগ্রহণ এবং শিক্ষাকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আইটিআইকে অনুষ্ঠানের নির্মাতা এবং সংগঠক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।
আরো পড়ুনঃ বিশ্ব ইচ্ছা পূরণ দিবস – কেন পালন করা হয় জেনে নিন
ফরাসি নৃত্য শিল্পী জাঁ – জর্জেস নোভের ব্যালে নৃত্য রচনার পাশাপাশি নৃত্যের পোশাক, নির্দেশনা, ব্যালে নৃত্যের বিন্যাস সবকিছু সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। আর জাঁ – জর্জেস ব্যালের নৃত্যশিল্পী, বাদক, নির্দেশক এবং সবকিছুর সমন্বয় হিসেবে তার ছিল তাৎপর্যপূর্ণ অবদান। আর সেইসব রীতি নীতি আজও বহাল আছে সারা বিশ্বের নৃত্য শিল্পে। ১৯৮২ সালে আই টি আই ও ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কমিটি প্রথম আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। বর্তমানে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২৯ শে এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস হিসেবে পালন করে।
জাঁ – জর্জেস নোভের ব্যালে রচনার পাশাপাশি ধারণা দিয়েছিলেন ব্যালের পোশাক, নির্দেশনা এবং বিন্যাস সম্পর্কে। তিনি বাদ্য শিল্প-নির্দেশক বাদক এবং নৃত্যশিল্পী দের সমন্বয়ে যে তাৎপর্যপূর্ণ রীতি প্রচার করেন তা আজও বহাল রয়েছে। নোভের ব্যালের মোট কম্পোজিশন ১৫০টি। নোভের ব্যালের শেক্সপিয়ার হিসাবে পরিচিতি আর তিনি যে সময় কম্পোজিশন তৈরি করেছিলেন সেই সময় পৃথিবীতে এই কম্পোজিশন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তিনি নোভের ব্যালের এত বেশি পরিমাণ জনপ্রিয় ছিলেন যে ইতালির নৃত্যশিল্পী গন সেলভেটর ভিনেগার এবং ডারউইন পরিমার্জন করেন।
নোভের ব্যালের ক্ষেত্রে ম্যারির স্বাধীন ধারণা এবং আবেগীয় গুরুত্ব এত বেশি আকর্ষণ করেছিল যে ১৭০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নোভের ব্যালের প্রভাবিত হয়ে ছিলেন ম্যারি সেলের প্রতি। ফ্রান্স যখন বিপ্লবের পর স্বাধীনতা লাভ করে তখন তিনি কিংস থিয়েটার সেমিনারে এসব বক্তব্য রাখেন কারণ নোভের ব্যালের ছিলেন একজন বিখ্যাত ক্যরিওগ্রাফার। আর ১৭৪৩ সালে তিনি নৃত্য বিষয়ে পড়াশোনা এবং অনুশীলন শেষ করেন এবং এর পরে তিনি পারি ওপেরা কোমিক এ যোগদান করেন শিল্পী হিসেবে।
পরবর্তী সময়ে তিনি নিত্য শিল্পী হিসেবে কাজ করেন স্ট্রসবুর্গে, ড্রেসড্রেন এবং বার্লিন এবং এখানে এসেই তার অভিনেত্রী মার্গারেট সোভারের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং পরবর্তীতে তিনি তাকে বিয়ে করেন এবং এখানে কিছুদিন কাজ করার পর লিও নগরীতে তিনি চলে যান এবং সেখানে তিনি কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যালে প্রদর্শন করেন।
আরো পড়ুনঃ আন্তর্জাতিক যুব দিবস – কবে পালিত হয় জেনে নিন
নিত্য শুরু করার আগে তিনি মনে করতেন ছবি ও রং এর মতনই নৃত্য একটি অত্যন্ত জটিল ব্যাপার কিন্তু চিত্রকর্মের বিচিত্র রূপের সঙ্গে যখন নৃত্যের বিন্যাস ঘটে তখন তিনি বুঝতে পারেন নৃত্য এত জটিল ব্যাপার নয়, কারণ নৃত্যের প্রকাশ ঘটে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। আবার তিনি মনে করেন সংগীত ব্যতীত নৃত্য বোধগম্য নয়। মানুষের দেহের ছন্দকে তুলে ধরা জরুরি আর এই কারণে তিনি নৃত্যের সাথে গানের অভিব্যক্তি ঘটান এবং এই অভিব্যক্তিকে তিনি ফুটিয়ে তুলেন মুখমণ্ডলের মাধ্যমে।
তিনি মনে করেন অন্য সাধারণ মানুষ থেকে নৃত্যশিল্পীকে অবশ্যই আলাদা হতে হবে কারণ নৃত্য শিল্পের করিওগ্রাফি অন্য দশ জন মানুষকে আকর্ষণ করবে।নোভের ব্যালের গুরুত্বপূর্ণ কোরিওগ্রাফি গুলো হল দ্য পার্স্ট অফ হিউম্যান, লে মোট দ্যা হারক্লি, অ্যাডমিটেড অ্যারসেট, মিড ইট জ্যাসন,অ্যাপলস ইট ক্যাম্পপেসপে, ডিয়ার লেস অ্যাজামনুন প্রভৃতি। এই বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী ১৮১০ সালের ১৯ অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কিন্তু আজও তার নিত্যকর্ম পুরো বিশ্বকে ছন্দের তালে নাচিয়ে তোলে।
বাংলাদেশে নৃত্য দিবস পালন
১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশেষভাবে নৃত্য দিবস পালন করে আসছে। বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কাউন্সিল এবং বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পী সংস্থা যৌথভাবে আন্তর্জাতিক এই নৃত্য দিবস অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশও ২৯ এ এপ্রিল জাঁ – জর্জেস নোভারের জন্মদিন কে বিশেষভাবে উদযাপন করার জন্য ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত এই দিনকেই শ্রদ্ধা এবং ভালবাসার সঙ্গে দিবসটি পালন করে থাকে।
আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস কেন পালন করা হয়
পুরো বিশ্বজুড়ে অনেক ধরনের নৃত্য রয়েছে এবং এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে নৃত্যশিল্পী গন আর নৃত্যকে ছন্দময় করে তুলে গান এবং বাদ্যযন্ত্র। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে আন্তর্জাতিক নৃত্যশিল্পী কেন পালন করা হয়! আর যেসব বন্ধুদের মনে প্রশ্ন জাগে তাদের জন্য বলছি, জাঁ – জর্জেস নোভার ১৯২৭ সালের ২৯ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি ছিলেন একজন ফরাসি নৃত্যশিল্পী আর এই বিখ্যাত নৃত্য শিল্পীর জন্মদিন কে স্মরণীয় করে রাখতেই ইউনেস্কো ২৯ এপ্রিলকে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস ঘোষণা করে আর এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস পালন করা হয়।
আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে কি করা উচিত
আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস স্মরণ করা হয় বা পালন করা হয় জাঁ – জর্জেস নোভার জন্মদিন কে স্মরণ করার জন্য কারণ তিনি ছিলেন নৃত্য শিল্পের আবিষ্কারক। আর আপনি ইচ্ছে করলে এই দিনে একটি নতুন নাচ শিখতে পারেন এবং অন্যকে উপহার দিতে পারেন তাহলে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে জাঁ – জর্জেস নোভার কে স্মরণ করা হবে এবং নতুন কিছু উপহার দেওয়া হবে যা বাংলাদেশের তথা পুরো বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিবে। এছাড়া আপনি একটি নতুন গান আবিষ্কার করতে পারেন কারণ গান নৃত্য কে ছন্দময় পড়ে তোলে আর আপনি সেই গানের সাথে একটি নৃত্য আবিষ্কার করতে পারেন।
নৃত্য দিবস কে আবিষ্কার করেন
জাঁ – জর্জেস নোভার সর্বপ্রথম নৃত্য পরিচালনা করেন এবং তিনি ছিলেন আধুনিক ব্যালের তথা ফরাসি নৃত্য। শিল্পী আর এই বিখ্যাত নৃত্য শিল্পী জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৭ সালের ২৯ এপ্রিল। আর এই বিখ্যাত মনীষীর জন্মদিন কে স্মরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো পারফর্মিং আর্টস এর প্রধান সহযোগী এবং আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট যাকে আইটিআই বলা হয় এই কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৮২ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কমিটি এবং আইটিআই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে নৃত্য দিবস পালন শুরু করে। আর এ থেকে বলা যায় জাঁ – জর্জেস নোভার নৃত্য দিবসের আবিষ্কারক।
নাচের মানে কি
নাচের মানে হলো নৃত্য আর যা মানুষের আচার, অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপনের একটি অংশ মাত্র। পুরো বিশ্ব জুড়ে আজ মানুষ বিনোদনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে এবং এটি এখন প্রতিযোগিতামূলক কার্যকলাপের অংশ হিসেবেও গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এছাড়া মানুষ শারীরিকভাবে ফিট থাকতে এবং আরো সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে নাচে অংশগ্রহণ করে। এক কথায় নাচ বলতে এখন শারীরিক কসরত কে বোঝানো হয়ে থাকে যার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে ফিট রাখে এবং মানসিক পরিতৃপ্তিও লাভ করে।
নাচের প্রকারভেদ
১৯৮২ সাল থেকে ইউনেস্কো ২৯ শে এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস ঘোষণা করার পর থেকে সারাবিশ্বে অনেক ধরনের নাচ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক প্রকার নাচের নাম তুলে ধরা হলো –
- ব্যালে ডান্সিং
- বেলি ডান্সিং
- বলরুম নাচ
- জ্যাজ ড্যান্সিং
- হিপ হপ ড্যান্সিং
- সালসা ডান্সিং
- মেরু নৃত্য বা নাচ
- ট্যাপনাস নৃত্য বা নাচ
- বর্গাকার নৃত্য বা নাচ
নাচের স্বাস্থ্য উপকারিতা
নাচ মানুষের শুধু বিনোদনের মাধ্যম তা নয়, মানুষের স্বাস্থ্যের ও উপকার করে থাকে। মানুষ শারীরিকভাবে ফিট থাকার জন্য এবং মানসিক পরিতৃপ্তি লাভের জন্য নাচ করে থাকে। এছাড়াও নাচ করলে যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো হল –
আরো পড়ুনঃ ভালো বাসা দিবস কত তারিখ / ভালোবাসা দিবস কিভাবে আসলো জেনে নিন
- শারীরিক আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে
- ওজন কমাতে সহায়তা করে
- হাড় শক্তিশালী করে এবং অস্টিওপারেসিসের ঝুঁকি কমায়
- বর্ধিত আরবিক ফিটনেস বৃদ্ধি করে
- দ্রুত নিঃশ্বাস নির্গত হয় যার কারণে ফুসফুসের অবস্থা উন্নত হয়
- পেশী শক্তিশালী হয়
- মানুষ সহনশীল হতে শেখে
- বৃহত্তর আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধি করে
- সামাজিক দক্ষতা বাড়ায়
- মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা দান করে
শেষ কথা
নাচ বা নিত্য মানুষের মনের পরিতৃপ্তি শুধু বাড়িয়ে দেয় তা নয়, মানুষের মনোবল কেও বৃদ্ধি করে। তাই আমাদের উচিত সামাজিক স্থান, কমিউনিটি হল, নাচেরর স্কুল অথবা নিজের বাড়িতেই সক্রিয় ভাবে নাচের সাথে অংশগ্রহণ করা। অনেক নাচ আছে যা বাড়ির ভেতরেই করা যায় এতে খেলাধুলার কাজ হয়ে যায় এবং বিনোদনের কাজ ও হয়ে যায়।
Leave a comment