সে কহে বিস্তর মিছা, যে কহে বিস্তর।

যে সব সময় বেশি কথা বলে সে বেশি বেশি ছলনা, প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়। মিথ্যার মাধ্যমে সে তার বক্তব্যকে দীর্ঘায়িত করে থাকে ।

আমাদের এই সমাজে দুই শ্রেণীর লোকের বাস। একশ্রেণীর লোকের কাছ থেকে সবসময় ধ্বনিত হয় পরিমিত, সত্য, সুন্দর ভাষণ। এর পাশাপাশি আরেক শ্রেণীর লোকের আবির্ভাব ঘটে তাদের স্বভাবই হলো মিথ্যা, প্রতারণা ও ছলনার আশ্রয় নেয়া। এরা মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার জন্য সুন্দর সুন্দর গল্প রচনা করে থাকে। আর গল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো দীর্ঘ হওয়া। গল্পকে সবসময় জনসম্মুখে উপস্থাপিত করার সময় তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে মিথ্যা আর মিথ্যা ভাষণ। এই মিথ্যা কথা বলতে তাদের মধ্যে কোন দ্বিধাবোধ জাগে না। কারণ এ রকম ঢিলেঢালা বাচাল লোকের হিতাহিত জ্ঞান এতটাই লোপ পায় যে তারা সত্য-মিথ্যার ভেদাভেদ নির্ণয় করতে পারে না। কিন্তু তারা যদি কম কথা বলত অর্থাৎ হিসাব করে কথা বলত তাহলে তাদের কাছে এ সত্যটি ধরা পড়ত। কিন্তু যারা বিস্তর মিথ্যা বলছে তারা জানে না যে এর মাধ্যমে সমাজের কতটুকু ক্ষতি করছে। সমাজের ভেতর যে ধ্বংসের বীজ লালিত হচ্ছে এ উপলব্ধির শক্তি টুকুও তাদের নেই। তাদের এ দীর্ঘায়িত মিথ্যা গল্প অনেকসময় সমাজের সহজ সরল মানুষ সরল মনে বিশ্বাস করে এবং সে সঙ্গে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। ফলে সমাজের বুকে সৃষ্টি হয় এক এক করে মিথ্যাবাদী লোক। মিথ্যার আশ্রয় ি নিতে গিয়ে তারা নৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়। আদর্শ ও নীতিহীন লোক সমাজের ক্ষতিসাধন বৈকি ভাল করে না। আজ যে যুবসমাজ ধ্বংস হচ্ছে এর জন্য এরা অনেকটাই দায়ী। সমাজে যারা উচ্চপদস্থ অর্থাৎ যারাই সমাজের নিয়ন্ত্রক তাদের মুখ থেকেই সবসময় বেরিয়ে আসে মিথ্যার ফুলঝুরি। তাদের চরিতার্থ হাসিল করার জন্য তারা এটা করে থাকে সজ্ঞানে- নিজ্ঞানে। তাদের এই মিথ্যা ভাষণ শুনে যুবকেরা তা করায়ত্ত করে এবং প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে থাকে। কিন্তু আমরা যদি পৃথিবীর প্রকৃত ইতিহাস উদঘাটন করি তাহলে দেখব যে জ্ঞানীরা সবসময় কম কথা ও সত্য কথা বলেছেন। কম কথা বললে মিছা কথা আসার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই জগৎকে ফুলে ফলে সুবাসিত করার জন্য বিস্তর কথা না বলে জ্ঞানীদের মতো অল্প কথা বলাই শ্রেয়। অল্প কথা বলাই শ্রেয়।

অল্প কথা বলে মিথ্যাকে পরিহার করলে নিজের এবং দশের উভয়েরই মঙ্গল। কারণ বিস্তর কেবল বিস্তর সমস্যারই সৃষ্টি করে।