যারা প্রাথমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করো তারা অবশ্যই ভূমিকা দুটি অংশের মধ্যে যেকোনো একটি অংশ লিখবে এবং প্রত্যেকটি প্যারা থেকে দুই এক লাইন করে বাদ দিয়ে লিখবে। তবে আমি আশা করি আমার এই আমার মা – রচনা পরীক্ষায় লিখলে তোমরা বেশ ভালো নম্বর পাবে।
আমার মা – রচনা
ভূমিকা
মা আমাদের সবার জীবনে, সবার কাছে, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রিয় একজন মানুষ। এই পৃথিবীতে যত নিরাপদ এবং শান্তির আশ্রয় রয়েছে মা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম একটি আশ্রয়স্থল। আমরা আমাদের জীবনের সকল সুখ, দুঃখ, অভাব, অভিযোগ সবকিছুই মাকে জানাই। যদিও মা শব্দটি মাত্র একটিমাত্র শব্দ কিন্তু এর মধ্যে যেন রয়েছে হাজারো শব্দের বেশি ক্ষমতা, পৃথিবীর সকল জাদু যেন লুকিয়ে রয়েছে এই মা শব্দটির মধ্যে কারণ মা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ।
আরো পড়ুনঃ যুবসমাজের অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার – রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
একজন শিশু এই পৃথিবীর আলো দেখে তার মায়ের হাত ধরে, এমনকি বাবার সাথেও একজন শিশুর পরিচয় ঘটে তার মায়ের জন্যই। আর এই পৃথিবীতে সুখ-দুঃখের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল হল মায়ের আঁচল। এই পৃথিবীতে সকল কিছুর উপর অভিমান করে থাকা যায়, ছেড়ে থাকা যায় কিন্তু একমাত্র মা যাকে ছাড়া কখনোই থাকা যায় না। নিজের মনের মধ্যে যতই দুঃখ কষ্ট জমুক না কেন সব অভিমান যেন মায়ের আঁচল ধরে মিটিয়ে নেওয়া যায়। তাইতো কবি কাদের নেওয়াজ তার মা কবিতায় বলেছেন-
মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
ত্রিভুবনে নাই।
শৈশবে মা
শৈশবে একজন শিশুকে সবচেয়ে বেশি আদর যত্ন দিয়ে বড় করেন তার মা। শৈশবে একজন বাচ্চার কোন জাতীয় ভিটামিনযুক্ত খাবার প্রয়োজন, ঠিক কোন সময়ে কোন জিনিসটি প্রয়োজন সবদিকে খেয়াল রাখেন তার মা। একজন সন্তান সবসময় অপেক্ষা করে কখন তার মা তাকে আদর করবে, তাকে সবচেয়ে ভিটামিনযুক্ত খাবারটি খাওয়াবে। আর মায়ের হাত থেকে এই খাবারটুকু খাওয়া একজন সন্তানের জন্য তার মায়ের আদর ছাড়া অন্য কিছুই যেন নয়।
কৈশোর জীবনে মা
একজন শিশু যখন কৈশোর জীবনে পা রাখে তখন তার মা যেন তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠে। সন্তানেরা যখন কৈশোর বয়সে পা রাখে তখন তারা সব সময় কোন কাজ করা উচিত তা ঠিক করে উঠতে পারে না, আর এই দিক নির্দেশনাকারি এবং একজন সঠিক গাইডলাইন হলেন তার মা। কিভাবে তার সন্তান সঠিক পথে পরিচালিত হবে, কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হবে সবকিছুই যেন তার মা ঠিক করে থাকেন।
যৌবনে মায়ের ভূমিকা
একজন মা শুধু তার রান্নাঘর সামলে রাখেন তা নয়, একজন সন্তানের পুরো জীবনটা জুড়ে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব তিনি পালন করে থাকেন। একজন সন্তানের সবচেয়ে বেশি গাইডলাইন প্রয়োজন হয় তার যৌবন বয়সে কারণ ছেলে মেয়ে যে কোন সময় হোচট খেতে পারে, চলে যেতে পারে বিপথে কারণ এই সময়ে একজন শিশুর জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে যার কারণে একজন মা তার সন্তানের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠে। এই সময় আমার মা আমাকে শিখিয়ে দেন কিভাবে আমি আমার বন্ধু বান্ধবের সাহায্য করতে পারি। এমনকি আজও মা আমাকে সঠিক পথ দেখান।
আমার ব্যস্ততম মা
আমার মা একজন কর্মজীবী তারপরেও তিনি একজন গৃহিনীর কাজ করেন, আমাদের সেবা যত্ন করেন, আমাদের পোশাক পর্যন্ত নিজে ই তৈরি করে দেন, আমাদের পড়াশোনা দেখা দেওয়া, কাপড় ধোঁয়া, ঘর পরিষ্কার করা সহ সকল কাজ তিনি নিজ হাতে করে থাকেন। এমনকি সংসার সংরক্ষণের সমস্ত কাজ তিনি নিজ হাতেই করে থাকেন। আবার স্বাস্থ্য সম্পর্কেও তিনি বেশ সচেতন। যখন আমি সহ আমাদের পরিবারের লোক অসুস্থ হয় তখন আমার মা নিজ হাতে সেবা করে থাকেন।
জীবনের কঠিন মুহূর্তে মায়ের ভূমিকা
মা হচ্ছেন পৃথিবীর এমন একজন ব্যক্তি যার কাছে থাকলে পৃথিবীর যে কোন সমস্যা যেন সমস্যায় মনে হয় না, মনে হয় সব কিছুই যেন সহজ। এমনকি কঠিন ঝড়, বিপদ সকল কাজ কিছুতেই মা যেন আমাদের সামনে বন্ধু হয়ে দাঁড়ান। মা থাকলে সকল কাজের মধ্যে যেন মনে এক অসম্ভব জোর আসে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। জীবনের কঠিন মুহূর্তে যদি কাওকেই কাছে না পাওয়া যায় সেই সময় মাকে কাছে পাওয়া যায়। মা যদি সঙ্গে থাকেন তাহলে জীবনের যেকোন বিপদকে টেক্কা দেওয়া সম্ভব।
মা ছাড়া জীবন
আমার জীবনে আমার মা নেই এমন কথাটা আমি কখনো ভাবতে পারিনি। কারণ আমার দু একটা বন্ধুর সঙ্গে আমি মিশে দেখেছি যাদের মা তাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে যার কারনে তাদের জীবন যেন অন্ধকারে পরিপূর্ণ। আমি আমার বন্ধুদের কথা আমার মাকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আমার মায়ের ইচ্ছা শক্তিতে তিনি আমার বন্ধুদেরও মা হয়ে উঠেছেন। যার কারণে আমি আজ আমার বন্ধুদের সাথে আমার মাকে নিয়ে গর্ব করি। আমি সেই দিন নিজেকে স্বনির্ভরশীল মনে করব যেদিন আমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা সফলতা পাবে। আমি আমার মায়ের কথা মত নিজে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করব।
মায়ের রোজকার জীবন
আমাদের বাড়িতে সবচেয়ে আগে যার ঘুম ভাঙ্গে তিনি হলেন আমার মা। ভোরে ঘুম থেকে উঠে তিনি আমাদের জন্য খাবার তৈরি করেন। তিনি প্রথমে বাবার জন্য খাবার তৈরি করেন, তারপরে আমাদের সকলের জন্য নাস্তা তৈরি করেন। তারপরে আমরা স্কুলে যাওয়ার সময় আমাদের রেডি করে দেওয়া থেকে শুরু করে টিফিন তৈরি করে দেওয়া সহ সকল কাজকর্ম তিনি এক হাতে করে থাকেন। সবার দিকে নজর রাখতে গিয়ে মা নিজের দিকে নজর দিতেই যেন ভুলে যান।
এমন অনেক সময় আছে যখন সবার খাবার তৈরি করে দেন কিন্তু তিনি নিজেই তার খাবারটি খেতে ভুলে যান। আমরা যখন সবাই নিজ নিজ কাজে ঘর থেকে বের হয়ে যায় তখন তিনি তার কর্মস্থলে যান এবং কর্মস্থল থেকে আসার পর আবার তিনি সংসারের কাজে মনোযোগ দেন। আবার শুরু হয়ে যায় রাতের খাবার তৈরির কাজ এইভাবে সারাদিন ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে আমার মায়ের প্রতিদিনের জীবনটা কেটে যায়।
আমার জীবনে আমার মায়ের গুরুত্ব
প্রত্যেকটি সন্তানের জীবনে তার মায়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি তেমনি আমার জীবনেও আমার মায়ের গুরুত্ব সবার চেয়ে বেশি কারণ আমি শৈশব জীবনে প্রথম হাঁটতে শিখেছি আমার মায়ের হাত ধরে। এমনকি আমি আমার কথা বলাও শিখেছি আমার মায়ের কথা শুনে। আমার মা শিখিয়েছেন কিভাবে প্রাথমিক কাজগুলো করতে হয়, সুন্দর করে কথা বলা, নিয়মিত চুল আঁচড়ানো, সকল ধরনের ভালো অভ্যাস সব কিছুই আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন।
তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হয় আর তার শেখানো কাজগুলো আজ যেন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যার কারণে কোনো দুঃখই আজ আমাকে আর বিচলিত করতে পারে না। আর সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সামনের দিকে কিভাবে এগিয়ে যেতে হয় সবকিছুই শিখিয়েছেন আমার মা। মা হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক কারণ আমি সবকিছু শিখেছি আমার মায়ের কাছ থেকে।
উপসংহার
আমার মা আমার স্বর্গ। আমার মা হচ্ছেন আমার জীবনের সবকিছু। মাকে ছাড়া আমি আমার জীবনের কোন কিছুই কল্পনা করতে পারি না। এই পৃথিবীতে আমি যা কিছু ভালোবাসি সবার চেয়ে আমি আমার মাকে বেশি ভালোবাসি। সবার জীবনের একটি আশা থাকে আমি রবীন্দ্রনাথের মতো হব, নেতাজির মতো হব কিন্তু আমি আমার মায়ের আদর্শে মায়ের মত হতে চাই ।আমার মা যেভাবে আমাদের পুরো পরিবারটাকে এক সূত্রে গেঁথে রেখেছেন ভালোবাসা দিয়ে
আমি তার কাছ থেকে সেই শিক্ষাটুকু অর্জন করতে চাই। এই পৃথিবীতে আমার দেখা সবচেয়ে আদর্শ এবং ভালো মানুষ হচ্ছেন আমার মা। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা।
Leave a comment