‘পদ্মা নদীর মাঝি’
‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে নদীতীরবর্তী ধীবর-পল্লির সামগ্রিক জীবন বৈশিষ্ট্য এবং কুবের চরিত্রের উৎস ও পরিণতির নানাবিধ বৈচিত্রপূর্ণ রূপ ও স্বরূপ। একটি স্বতন্ত্র ও প্রধান চরিত্র হিসেবে পদ্মা এ উপন্যাসে সক্রিয়। ব্যক্তি কিংবা সমাজ জীবন সর্বত্রই পদ্মার ভূমিকা অতিশয় প্রত্যক্ষ। কেতুপুরের ধীবর জনগোষ্ঠীর জীবনে পদ্মা যেমন জীবিকার সহায়, তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও উৎস। সেকারণে পদ্মা যেমন জেলেদের জীবনকে আনন্দে-স্বাচ্ছন্দে পূর্ণ করে তোলে, তেমনি হয়ে উঠে অপরিসীম দুঃখের কারণ। পদ্মার কারণেই তারা একই সঙ্গে প্রাপ্তি ও বঞ্চনার মুখোমুখি হয়; শিকার হয় শোষণের।
উপন্যাসের প্রথম তিনটি পরিচ্ছেদে পদ্মাতীরবর্তী কেতুপুর গ্রামের বহির্বাস্তবতা রূপায়িত হয়েছে। পদ্মানদীতে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, জেলে পাড়ার জেলেদের জীবন পরিহাস, কদর্যতা, সংকীর্ণতা, স্থূলতা, দুঃখ-দারিদ্রদ্র্য এবং কলহকে আশ্রয় করেই তাদের জীবনাচরণ। মূলত কাহিনী শুরু হয়েছে উপন্যাসের চতুর্থ পরিচ্ছেদে কপিলার আগমনের পর কুবের কপিলার প্রণয়কে কেন্দ্র করে এবং হোসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপ নামক স্বপ্ন রাজ্যের আকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে। ঔপন্যাসিক উপন্যাসের শেষে কুবের কপিলার প্রণয় ও হোসেন মিয়ার স্বপ্নচারিতা সফল করে একটা ইতিবাচক পরিণতি টেনেছেন।
এ উপন্যাসে দুটি কাহিনীস্রোত একটি প্রবাহে এসে মিশেছে। এক, হোসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপ নামক চরের স্বপ্নচারিতা ও দুই, কুবের কপিলা প্রণয় গাথা। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র ও ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেছে পদ্মা ও হোসেন মিয়া। তারা যেন নিয়তির ভূমিকা পালন করেছে। কেতুপুর গ্রামবাসীকে হোসেন মিয়া এক অদৃষ্ট শক্তির বন্ধনে আকৃষ্ট করে রাখত। উপন্যাসের শুরুতে পদ্মার একটা ভূমিকা কেতুপুর গ্রামবাসীর জীবনে থাকলেও হোসেন মিয়া এ পদ্মাকে অতিক্রম করেছে। পদ্মা যেখানে আত্মসমর্পণ করেছে সেই সমুদ্র থেকে জেগে উঠা চরে হোসেন মিয়া তার স্বপ্নের রাজ্য স্থাপন করেছে। সে মাটিকে কর্ষণের মাধ্যমে ফলবতী করে মানবজাতির বিবর্তনবাদকে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছে। ফলে যারা ছিন্নমূল, ছন্নছাড়া তাদেরকে তিনি তার চরে আশ্রয় দিয়েছেন এবং কুবের কপিলার প্রণয়কে তার স্বপ্নরাজ্যে বাস্তবে রূপদান করেছেন। কুবের ও কপিলা একে অপরের প্রতি আদিম আকর্ষণ অনুভব করে। কপিলার সাথে কুবেরের অসঙ্গত সম্পর্ক কিন্তু তার বাইরেও মানুষের একটা বড়ো দাবি আছে, সে প্রাণের দাবি। এ সহজ সম্পর্কের সূত্র ধরেই উভয়ের মধ্যে একটা গভীর আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। দেহগত কামনা একদিকে ছিল কিন্তু তা এদেরকে একেবারে গ্রাস করেনি। কিন্তু রাসুর চক্রান্তে যখন কুবেরের উপর চুরির দায়ভার এসে পড়ে তখনই দ্বিধা থাকা সত্ত্বেও কুবের কপিলাকে সাথে নিয়ে ময়নাদ্বীপের দিকে পা বাড়ায়। এভাবেই এক আদি অসংস্কৃতি ও নিষিদ্ধ প্রেম এক সময় সংসার ত্যাগের মাধ্যমে পরিণতি লাভ করে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment