নাটক ও প্রহসন রচনায় অমৃতলাল বসুর পরিচয় দাও।
অমৃতলাল বসু (১৮৫৩-১৯২৯) বাংলা সাহিত্যে সেরা কমেডিয়ান হিসেবে পরিচিত। নাটক প্রহসনে তিনি অদ্ভুত ব্যঙ্গ ও কৌতুক ব্যবহার করতে পারতেন। সেজন্য নাট্যজগতে তিনি ‘রসরাজ’ নামে পরিচিত। নট ও নাট্যকার উভয় ভূমিকাতে অমৃতলালের কৃতিত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
নাটক সৃষ্টিতে অমৃতলাল বসুর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তিনি হাস্যরসের অবতারণা করে জীবনের বিকৃতি ও
বিপর্যয়ের রূপ তুলে ধরেছেন। তিনি কয়েকটি নাটক রচনা করলেও প্রহসন রচয়িতা হিসেবেই তার জনপ্রিয়তা। তার প্রহসনে বিদ্রূপের লক্ষ্য ছিল পাশ্চাত্য ভাববিকৃত পুরুষ ও নারীসমাজ। তার প্রহসনের লক্ষণীয় বিষয় ছিল পাশ্চাত্য ভাবধারায় এদেশের সমাজজীবনের উচ্ছৃঙ্খলতার সৃষ্টি। তিনি শাণিত কথার বিদ্যুৎ দীপ্তিতে দর্শককে বিস্মিত করতে সক্ষম ছিলেন। তবে নাটক রচনায় অমৃতলাল বসুর সার্থকতার পরিচয় নেই। তিনি গুরুগম্ভীর নাটক রচনায় ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। তার প্রহসনগুলোতে তৎকালীন সামাজিক অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি সম্পর্কে তীব্র ব্যঙ্গ বিদ্রূপের জন্য একপক্ষের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছেন এবং আরেক পক্ষের কাছ থেকে তীব্র নিন্দা কুড়িয়েছেন। অমৃতলাল বসুর উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছে হীরকচূর্ণ তরুবালা, নবযৌবন, হরিশচন্দ্র প্রভৃতি। তার প্রহসনগুলো বিদ্রূপাত্মক প্রহসন ও বিশুদ্ধ প্রহসন এ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। বিদ্রূপাত্মক প্রহসনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিবাহ বিভ্রাট, বাবু, কালাপানি, বৌমা, খাসদখল ইত্যাদি। এসব প্রহসনে আধুনিক সমাজের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছিল। বিশুদ্ধ প্রহসনগুলো হলো: কপণের ধন, চোরের উপর বাটপাড়ি, তাজ্জব ব্যাপার। এতে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু তা পীড়াদায়ক হয়ে উঠেনি। সুতরাং বলা যায়, বাংলা সাহিত্যে নাটক ও প্রহসন রচয়িতা হিসেবে অমৃতলাল বসুর অবদান অনস্বীকার্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment