দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাহিত্যকৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে দ্বিজেন্দ্রলালের (১৮৬৩-১৯১৩) চিরস্থায়ী পরিচয়, তিনি ছিলেন হাসির গানের রাজা। গুরুগম্ভীর বিষয়ে বিশেষকরে স্বদেশপ্রেমের আকুতিভরা সংগীত রচনাতেও তার কীর্তি দুর্লভ সফলতা অর্জন করেছিল। কিন্তু বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে তার অবিসংবাদী জনপ্রিয়তা এসব কোনো কিছুর চেয়েই কোনো অংশে কম নয়, বরং সমকালীন সাহিত্য জগতে তার নাট্যকীর্তিই সবচেয়ে বেশি খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠার আকর হয়েছিল। দ্বিজেন্দ্রলাল রবীন্দ্র সমকালীন শিল্পী ছিলেন। কিন্তু কি কাব্যে, কি নাটকে রবীন্দ্রপূর্ব ধারার পরিণতি সন্ধানেই তার ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠা। উনিশ শতকের নগর বাংলায় নাট্যশিল্প রচনার ধারা নতুন পথে মোড় ফিরেছিল, বিশেষকরে ইংরেজি নাট্যশৈলীর অনুসরণ করে। এদিক থেকে শেক্সপিয়রের বিশ্বজয়ী নাট্যকলার প্রভাবই ছিল সবচেয়ে বেশি। অন্যান্যের মধ্যে গিরিশচন্দ্র ও ক্ষীরোদ প্রসাদ সচেতনভাবে শেক্সপিয়রীয় কলাঙ্গিকের অনুসরণ করেছিলেন। কিন্তু কোথাও শিল্পীপ্রাণের প্রবণতার অভাব, কোথাও বা বিষয় বৈশিষ্ট্যের বিরুদ্ধধর্মীতার জন্য সে চেষ্টা যথেষ্ট সফল হতে পারেনি। দ্বিজেন্দ্রলালই সেই শ্রেষ্ঠ বাঙালি শিল্পী, শেক্সপিয়রের অনুসরণে বাংলা রোমান্টিক নাট্য রচনায় যিনি সবচেয়ে বেশি সফলতা অর্জন করেছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটকগুলো হচ্ছে: তারাবাঈ (১৯০৩), রানাপ্রতাপসিংহ (১৯০৫), দুর্গাদাস (১৯০৬), নূরজাহান (১৯০৮), জোবারপতন (১৯০৮), সাজাহান (১৯০৯), চন্দ্রগুপ্ত (১৯১১), সিংহল বিজয় (১৯১৫) ইত্যাদি।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কতকগুলো প্রহসন রচনা করেছিলেন। তার সেসব প্রহসনগুলো হচ্ছে সমাজ বিভ্রাট, কল্কি অবতায় (১৮৯৫), বিরহ (১৮৯৭), এ্যহস্পর্শ (১৯০০), প্রায়শ্চিত্ত (১৯০২), পুনর্জন্ম (১৯১১) ইত্যাদি। প্রহসনগুলো রচনার মাধ্যমেই তিনি পাঠক সমাজে পরিচিত হন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।