বাস্তব সত্যই আসল নয়, আসল সত্য নিহিত বাস্তবের গভীরে ও অন্তরালে এ উপলব্ধি বাস্তববিরোধী নাটকের প্রয়োগে বিদ্যমান। বস্তুজগৎ ও মানবজগতের দৃশ্যমান রূপের মধ্য দিয়ে এক অদৃশ্য বুদ্ধি ও অনুভবগ্রাহ্য জগতের সত্যকে আভাসে প্রকাশ করাই হলো সাংকেতিক নাটক। এ নাটকের আবেদন সেজন্য দর্শকদের বুদ্ধিবৃত্তি ও কল্পনাশক্তির কাছে। বাস্তব নাটকের অভিনয় যেমন তাদের ভাবাবেগ উদ্দীপ্ত করে তোলে, সাংকেতিক নাটকের অভিনয় সে রকম ভাবাবেগ উদ্দীপন না করে সূক্ষ্ম মনন ও সুদূরগামী কল্পনাকেই উদ্বোধিত করে। এ নাটকের প্রয়োগে পরিবেশের বাস্তব আকার না দিয়ে প্রতীকী মঞ্চসজ্জার দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন, গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ যেমন সাংকেতিক রবীন্দ্র নাটকের মঞ্চসজ্জা নির্মাণ করেছিলেন। প্রতীকী মঞ্চের বৈশিষ্ট্য হলো মঞ্চের কিছুটা জায়গা জুড়ে প্রতীকী দৃশ্যবস্তু স্থান করে মঞ্চকে অনেকখানি ফাঁকা মুক্ত রাখা যাতে করে দর্শকদের ভাবনা ও কল্পনা এই ফাঁকা মুক্ত জায়গার মধ্য দিয়ে বিস্তারের সুযোগ পায়। সাংকেতিক নাটকের আলো ও শব্দের ব্যবহারেও যথেষ্ট কল্পনাশীলতা ও সূক্ষ্ম শিল্পকর্মের প্রয়োগ হওয়া উচিত। আলোর মধ্যে প্রাখর্য নয়, ব্যঞ্জনাই এখানে প্রত্যাশিত; আলোর রেখা ও ছবি অদৃশ্য ও অব্যক্ত কোনো জগতের ইঙ্গিত যেন বহন করে সেই দিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। আবার সাংকেতিক নাটকে গানের প্রয়োগ বেশি দেখা যায়, তার কারণ গানের মধ্য দিয়ে কথার অতীত জগতের রহস্য আভাসিত করা সম্ভব। সাংকেতিক নাটকের চরিত্রগুলোর রূপসজ্জা ও পোশাক পরিচ্ছদের মধ্য দিয়ে বাস্তবাতীত কোনো দ্যোতনা থাকা প্রয়োজন।
সুতরাং বলা যায়, নাটক প্রধানত বাস্তবমুখী এবং কাব্যের লক্ষ্য বাস্তবকে অতিক্রম করে যাওয়া। সাংকেতিক নাটক নাটক হয়েও বাস্তবকে লঙ্ঘন করে যায়। সেজন্য এ নাটকের প্রয়োগে কাব্যধর্মই প্রধান হয়ে উঠে। প্রত্যক্ষের মাটি থেকে অপ্রত্যক্ষের মানস সরোবরে সন্তরণই হলো সাংকেতিক নাটকের লক্ষ্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment