বাংলা কাব্যে আধুনিকতার প্রবর্তনে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভূমিকা

উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্তই আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপকার বা স্রষ্টা। তিনি তার ইউরোপীয় সাহিত্যের বিস্তৃত ও গভীর জ্ঞানে, দুঃসাহসিক কবি প্রতিভার প্রবল শক্তিমত্তা ও আত্মবিশ্বাসে বাংলা কবিতাকে একটি সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে মুক্ত করে আধুনিক জীবনচেতনার বৃহত্তর জগতে ব্যপ্তির ঐশ্বর্য দিয়েছেন। এ জীবনবোধ ও প্রতিভার দুর্জয় শক্তিতেই নতুন জীবনদর্শনের উপযুক্ত আধার নির্মাণের তাড়নায় মধুসূদন প্রচণ্ড দুঃসাহসে বাংলা কাব্যে দীর্ঘকাল প্রচলিত পয়ারে চরণান্তিক মিল এবং শ্বাসাতি ও অর্থযতির যান্ত্রিক ঐক্যবন্ধনকে ভেঙে মিল্টনের ব্ল‍্যাঙ্ক ভার্সের অনুসরণে ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’ সৃষ্টি করেছেন। তার ১৮৬০ সালে প্রকাশিত বর্ণনাময় কাব্য ‘তিলোত্তমাসম্ভব’ কাব্যকে মধুসূদন নিজেই Epicling বা মহাকাব্যিক বলেছেন। এ আখ্যায়িকা কাব্যটি মধুসূদনের শিক্ষানবিশি পর্বের রচনা। ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও রচনাটিতে মধুসুদনের কবিত্ব শক্তির পরিচয় ফুটে উঠে। ১৮৬১ সালে প্রকাশিত মেঘনাদবধ কাব্যে মধুসূদন তার নতুন জীবনবোধের প্রকাশে রামায়ণ কাহিনির রূপান্তর ঘটিয়েছেন, দুরাচারীরূপে চিরনন্দিত রাক্ষসরাজ রাবণকে তার কাব্যের নায়ক হিসেবে গ্রহণ করে তার মধ্যে সর্ববন্ধনমুক্ত, আত্মশক্তিকে বলিষ্ঠ, আত্মমর্যাদা সচেতন আধুনিক মানুষের পৌরুষদীপ্ত ব্যক্তিত্ব ও জীবনাদর্শনকে রূপায়িত করেছেন। রাম তার কাছে ভীরু, দুর্বল প্রতিপদে দেবতাদের অনুগ্রহের উপর নির্ভরশীল। বিভীষণের ধর্মবোধহীন স্বার্থপরতা ও স্বদেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা তার কাছে অমার্জনীয় অপরাধ।

মানুষের হৃদয়ের সর্বপ্রকার অনুভূতির প্রকাশে অমিত্রাক্ষর ছন্দের শক্তি সংশয়াতীতরূপে প্রমাণিত। হোমারের ইলিয়াড, ভার্জিলের ইনিদ, দান্তে ও মিল্টনের মহাকাব্য, বাল্মীকির রামায়ণ ইত্যাদি রচনা থেকে ভাব, বিষয়বস্তু ও প্রকাশ কলা আহরণ করে মধুসূদনই বাংলা ভাষায় সার্থক মহাকাব্য রচনায় সফল হয়েছিলেন। আর এভাবেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত আধুনিক কাব্যে জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।