ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেড পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

উনিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহাপুরুষ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। তিনি একাই বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য নির্মাণে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে গণমুখীকরণ ও সম্প্রসারণে এবং হিন্দু সমাজের যাবতীয় কুসংস্কার ও অনাচার দূরীকরণে যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন অশেষ জ্ঞান, অগাধ পাণ্ডিত্য, অসীম সাহস ও দুর্লভ প্রজ্ঞার অধিকারী এক মহান ব্যক্তিত্ব।

বিদ্যাসাগর মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত বীরসিংহ গ্রামে ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন দরিদ্র ব্রাহ্মণ। তিনি হাতেঘড়ি নেন গ্রামের পাঠশালায় এবং ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতাস্থ সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। একাধিক্রমে ১২ বছর অধ্যয়নের পর তিনি ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে এ কলেজ ত্যাগ করেন। ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু ল’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাকে সুধী সমাজ বিদ্যাসাগর উপাধি প্রদান করে। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে হেড পণ্ডিত হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সি. আই. ই. উপাধি লাভ করেন। শেষ জীবনে তিনি সাঁওতাল পরগনায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেন। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুলাই তার কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে।

বহুবিবাহ রহিত, বিধবা বিবাহ প্রবর্তন, নারী শিক্ষা প্রসার আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাসে বিদ্যাসাগরের মৌলিক ও মানবতাবাদী অবদান, সর্বব্যাপী করুণা, চরিত্র শক্তির ঔজ্জ্বল্য ও সুদৃঢ় ব্যক্তিত্বমণ্ডিত বিদ্যাসাগর উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তান, বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়। তিনি প্রথম বাংলা গদ্যে সুশৃঙ্খল রূপদান করেন। তার মতো কর্মবীর বাংলাদেশে আর দেখা যায় না। বিদ্যাসাগরের ৪৪টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭), শকুন্তলা (১৮৫৪), ব্যাকরণ কৌমুদী (১৮৫৩), বিধবা বিবাহ প্রচলন হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৫), কথামালা (১৮৫৬), সীতার বনবাস (১৮৬০), ভ্রান্তিবিলাস (১৮৬৯), ব্রজবিলাস (১৮৮৪) ইত্যাদি।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।