‘বিষাদসিন্ধু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় ও প্রধান চরিত্র এজিদ। এজিদ চরিত্রকে অবলম্বন করেই বিষাদসিন্ধু উপন্যাসের কাহিনি সর্বাধিক বিকাশ লাভ করেছে। মীর মশাররফ হোসেন এজিদ চরিত্র চিত্রণে যতটা আন্তরিক ও মনোযোগী, অন্য চরিত্র অঙ্কনে ততটা নিবিষ্ট হতে পারেননি। রিপু শাসিত রক্তমাংসের একজন মানুষের প্রকৃতি, প্রবণতা ও বাস্তবতা নিয়ে এজিদ চরিত্রটি উপস্থাপিত।
‘বিষাদসিন্ধু’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র এজিদের অবস্থান পাপ ও প্রেমের সমান্তরালে। রূপজমোহ তার জীবনের ট্রাজিক পরিণতির জন্য দায়ী। তার সকল শক্তি ও উৎস রূপবতী জয়নবের উপেক্ষায় বিপর্যন্ত ও বিভ্রান্ত। এজিদ দামেস্ক অধিপতি মাবিয়ার একমাত্র সন্তান ও ভবিষ্যৎ সিংহাসনের একমাত্র অধিকারী। পিতামাতার প্রশ্রয়ে ঐশ্বর্যের কোলে সে লালিত পালিত। সে ছিল নিষ্ঠুর, জিদি এবং অসম্ভব ইচ্ছাসম্পন্ন ব্যক্তি। কোন বাধাকে সে স্বীকার করতো না। কোন কাজে একবার মনস্থির করলে তাকে সেখান থেকে টলানো যেত না। হাসান-হোসেন এবং তাঁদের পরিবারকে ধ্বংস করার যে কঠিনতম ব্রত সে নিয়েছিল, তা থেকে সে বিচ্যুত হয়নি। এজিদ পাপী, ধর্মদ্রোহী এবং ইন্দ্রিয় পরবশ। কিন্তু এজিদের

পাপের প্রকৃতি অসামান্য, তার পরিণাম যেমন ভয়াবহ, তেমনি শোকাবহ। সে সাহসী রণকুশলী এবং বীর সেনাপতি। রণক্ষেত্রে সৈন্য পরিচালনায় সে অকুতোভয়, নিজ দলের সেনাদের পুরস্কার দিতে মুক্তহত্ত, অসহায় বন্দিকে লাঞ্ছিত করতে কুণ্ঠিত। অত্যাচারের মধ্যে নৃশংসতা ও নির্মমতা থাকতে পারে, কিন্তু ক্ষুদ্রতা ও নীচতা নেই।

‘বিষাদসিন্ধু’ উপন্যাসে এজিদ চরিত্রের বিকাশে এমন একটা গাঢ় উজ্জ্বল্য আছে যার ফলে অন্যান্য চরিত্র তার পাশে নিতান্তই মর্যাদাহীন বলে মনে হয়। মশাররফ হোসেন তাঁর অন্তরের সমস্ত দরদ ও আবেগ দিয়ে এজিদ চরিত্রটি অঙ্কন করেছেন। তাই দোষে-গুণে-পাপে এজিদই ‘বিষাদসিন্ধু’ উপন্যাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠ চরিত্র।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।