বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ – উন্নত জাতের ভুট্টার নাম আমাদের জানা প্রয়োজন। বাংলাদেশ
কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের দেশের কৃষকেরা যদি বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ
– উন্নত জাতের ভুট্টার নাম সঠিকভাবে না জানে তাহলে ভালো ফলন
পাবেনা।বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ – উন্নত জাতের ভুট্টার নাম জানতে আমার পোস্টটি
পড়ুন।
গম ও ধানের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এতে শতকরা প্রায় ১১ শতাংশ
আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে।আমিষে প্রয়োজনীয় ট্রিপটোফ্যান, অ্যামিনো
এসিড ও লাইসিন অধিক পরিমাণে রয়েছে। ভুট্টার দানার রং হলুদ। এই হলুদ রংয়ের
ভুট্টার দানায় রয়েছে প্রতি ১00 গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা
ভিটামিন এ (A)।বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ – উন্নত জাতের ভুট্টার নাম সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
পোস্ট সূচিপত্রঃ বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ – উন্নত জাতের ভুট্টার নাম
বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ
বাংলাদেশ খুব কম সময়ের মধ্যেই ভুট্টা চাষে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। আমাদের দেশে যত
খাদ্য শস্য উৎপাদন করা হয় তার মধ্যে ভুট্টা চাষে কম পরিচর্যা ও কম খরচে ভালো ফলন
পাওয়া যায় এবং ভুট্টার দামও ভালো পাওয়া যায় বলে বাংলাদেশের কৃষকেরা ভুট্টা
চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়
যে,ভুট্টা চাষে মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ শীর্ষ দেশ গুলোর তালিকায় রয়েছে।
গত মৌসুমে তুরস্কে হেক্টর প্রতি উৎপাদন সবচেয়ে বেশি ছিল। এই দেশে হেক্টর প্রতি
উৎপাদন হয়েছে ১১ টন। যুক্তরাষ্ট্রে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ১০ টন। অথচ
গত বছরে যুক্তরাষ্ট্র ভুট্টা উৎপাদনে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে ছিল।
এ বছর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান হিসেব অনুযায়ী ২০১৮-১৯
অর্থবছরে ভুট্টা উৎপাদনে হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ৮ টোনের কিছু বেশি বা প্রায় ৯ টন।
দেশে বছরে প্রায় ৫৪ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন করা হচ্ছে। ভুট্টা কর্ণ নামেও পরিচিত।
গম এবং ধানের পরে ভুট্টা অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। এছাড়াও নানারকম খাদ্য তৈরিতেও
ভুট্টা ব্যবহার করা হয়।
পুষ্টি মূল্য
গম ও ধানের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এতে শতকরা প্রায় ১১ শতাংশ
আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে।আমিষে প্রয়োজনীয় ট্রিপটোফ্যান, অ্যামিনো
এসিড ও লাইসিন অধিক পরিমাণে রয়েছে। ভুট্টার দানার রং হলুদ। এই হলুদ রংয়ের
ভুট্টার দানায় রয়েছে প্রতি ১00 গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা
ভিটামিন এ (A)।
ভেষজ গুন হিসাবে ভুট্টার ব্যবহার
হলদে রংয়ের ভুট্টার দানা মানুষ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এবং ভুট্টার গাছ
ও সবুজ পাতা উন্নতমানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস, মুরগি ও মাছের খাদ্য
হিসাবেও ভুট্টা ব্যবহার করা হয়। শুধু মুরগীর খামার, পশুর খাদ্য ও মাছের খাদ্যের
চাহিদা মেটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লাখ ৭0 হাজার টন ভুট্টা দানা প্রয়োজন। মাছ,
গবাদি পশু ও হাঁস মুরগির উৎপাদন বাড়ায় ভুট্টার চাহিদা ও বাড়ছে।
আরো পড়ুনঃ দেশি মুরগি পালনের পদ্ধতি – দেশি মুরগি পালনে সফলতা – জেনে নিন
প্রাণী খাদ্য তৈরির বড় অংশই আসে ভুট্টা থেকে। এর মধ্যে শুধু মাত্র মুরগির খাদ্য
তৈরিতে ব্যবহার করা হয় শতকরা ৫৫ ভাগ, গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় ৩০
শতাংশ এবং মাছের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। এই তিন খাতে ভুট্টার চাহিদা রয়েছে
বছরে প্রায় ৪৫ লাখ টন। মানুষের খাদ্য হিসেবেও ভুট্টার চাহিদা দিন দিন
বাড়ছে।
ভুট্টা চাষের জমি ও মাটি
ভুট্টা চাষের জন্য দোআঁশ মাটি বা বেলে – দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী। তবে মনে রাখতে
হবে জমি যেন নিচু না হয় এবং জমিতে যেন পানি না জমে থাকে। দেশে বর্তমানে প্রায়
সাড়ে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। তবে ভুট্টা উৎপাদনের প্রায়
অর্ধেকীই হয় রংপুর বিভাগে। তবে ভুট্টার উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে আছে খুলনা বিভাগ
ও তৃতীয় স্থানে আছে রাজশাহী বিভাগ। জেলা হিসেবে লালমনিরহাট, দিনাজপুর,
চুয়াডাঙ্গা ও ঠাকুরগাঁয়ে ভুট্টার উৎপাদন বেশি হয়।
উন্নত জাতের ভুট্টার নাম
নিচে উন্নত জাতের ভুতার নাম উল্লেখ করা হলোঃ-
বারি মিষ্টি ভুট্টা-১
২০০২ সালে থাইল্যান্ড থেকে সংগৃহীত এ জাতটি নির্বাচন এবং অনুমোদিত হয় যা
জার্মপ্লাজম হতে বাছাইকৃত। এই ভুট্টার স্বাদ মিষ্টি। তাই এই মিষ্টি ভুট্টা
কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। তাই এই ভুট্টার দানা যখন নরম থাকে তখনই মোচা সংগ্রহ করতে
হয়। সিল্ক বের হবার ২০-২৫ দিনের মধ্যে অর্থাৎ বপনের মাত্র ১১৫-১২০ দিনে খাওয়ার
উপযোগী মোচা সংগ্রহ করা যায়।
এই ভুট্টার হলুদ দানাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ থাকে। বারি মিষ্টি
ভুট্টা-১ নামক এ জাতটির ফলন রবি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ১০-১২ টন এবং প্রায় ২০ –
২৫টন/হেক্টর সবুজ গো-খাদ্য হিসেবে পাওয়া যায়।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫
২০০৪ সালে বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ নামক আমিষ সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাত
অনুমোদন করা হয়। হাইব্রিড জাতের এই ভুট্টার দানা উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় কমলা
রঙের হয়ে থাকে। এবং এই ভুট্টা কিছুটা ফ্লিন্ট প্রকৃতির। এবং দানার ওজন ২৯০-৩১০
গ্রাম। এ জাতটির ফলন হেক্টরপ্রতি খরিফ মৌসুমে ৭-৮ টন এবং রবি মৌসুমে ৯-১০ টন। এ
জাতটির জীবনকাল খরিপ মৌসুমে ৯৫-১০০ দিন এবং রবি মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭
আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে ২০০৬ সালে সংগ্রহীত ও বাছাইকৃত বারি
হাইব্রিড ভুট্টা-৭ নামক এ জাতটি উদ্ভাবিত করা হয়েছে। এ জাতটির
জীবনকাল খরিপ মৌসুমে ৯৫-১০০ দিন এবং রবি মৌসুমে ১৩৫-১৪০ দিন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯
২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে বারি হাইব্রিড
ভুট্টা-৯ নামক ভুট্টার এ জাতটি উদ্ভাবিত করা হয়েছে। এ জাতটির জীবনকাল
খরিপ মৌসুমে ১০০-১১০ দিন ও রবি মৌসুমে ১৪০-১৫০ দিন। বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯ নামক
জাতটির দানা আকর্ষণীয় হলুদ রঙের, ডেন্ট প্রকৃতির এবং দানার ওজন ৩৭৫-৩৮০গ্রাম।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯ নামক এই ভুট্টার ফলন হেক্টরপ্রতি রবি মৌসুমে ১২-১৩
টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০
২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহীত ও বাছাইকৃত
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০ সংকরায়ণ করে এ জাতটি উদ্ভাবিত করা হয়েছে।বারি হাইব্রিড
ভুট্টা-১০ এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪0-১৫০ দিন ও খরিপ মৌসুমে ১০৫-১১৫
দিন। ভুট্টার এ জাতটির দানা আকর্ষণীয় ফ্লিন্ট প্রকৃতির এবং হলুদ রঙের
। হেক্টরপ্রতি ফলন ১০-১২ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১ নামক ভুট্টার এ জাতটির ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক গম ও
ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহীত ও বাছাইকৃত পিতৃ-মাতৃ লাইন হতে একমুখী
সংকরায়ণ করে উদ্ভাবিত এবং অবমুক্ত করা হয়। বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১ এ জাতটির
জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫৫ দিন। জাতটির দানা ফ্লিন্ট প্রকৃতির এবং হলুদ রঙের । এ
জাতের ভুট্টার ফলন হেক্টরপ্রতি ১০ -১২ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২ নামক ভুট্টার এ জাতটি স্বল্প সেচে এবং স্বল্প
খরচে উৎপাদনক্ষম এবং মধ্যমাত্রার খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল সাদা দানা বিশিষ্ট
ফ্লিন্ট প্রকৃতির । বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২ নামক ভুট্টার এ
জাতটি ২০১৬ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫০ দিন।
খরা মৌসুমে ভুট্টা্র এ জাতটি আবাদ করা হয় বলে সেচের প্রয়োজন
হয়। তবে সেচটি ফল আসার আগে দিতে হয়। এ জাতটির ফলন হেক্টরপ্রতি ৮ -৯
টন এবং স্বাভাবিক সেচ প্রয়োগে ফলন হেক্টরপ্রতি ১০-১২ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩
২০১৬ সালে বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩ নামক ভুট্টার এ
জাতটি অবমুক্ত করা হয়। বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩ নামক এ ভুট্টা সাদা
দানা বিশিষ্ট। এ জাতটি স্বল্প সেচে উৎপাদনক্ষম এবং মধ্যমাত্রার খরা সহিষ্ণু উচ্চ
ফলনশীল। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪০-১৫০ দিন। এস এ জাতের ভুট্টাতে ও
সেচের প্রয়োজন হয়। তবে এই সেচ ও ফল আসার আগে প্রয়োগ করতে হয়। এ জাতটির ফলন
হেক্টরপ্রতি ৯ -১০ টন এবং স্বাভাবিক সেচ প্রয়োগে ফলন হেক্টরপ্রতি ১০ -১২
টন।
হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
হাইব্রিড ভুট্টার যে জাতগুলো চাষ করে বেশি ফলন পাওয়া যায় এবং লাভবান হওয়া যায়
সেগুলো হল – গোল্ড ৯৯৯, থাই ৯৮৪, ক্লাসিক ৭৭৭ এবং মধু ১,২ ও ৩ । বাংলাদেশের
আবহাওয়া ভুট্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আর হাইব্রিড জাতের এই ভুট্টাগুলো সব
মৌসুমেই চাষ করা যায়। এগুলো উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ বালাই প্রতিরোধী।
ভুট্টা চাষের জন্য দোআঁশ মাটি বা বেলে – দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী।
আরো পড়ুনঃ সফটওয়্যার কি – সফটওয়্যার এর কাজ জেনে নিন
তবে মনে রাখতে হবে জমিতে যেন পানি জমে না থাকে। খার বা লোনা আছে এমন জমিতে ও
ভুট্টা চাষ করা যাবে না। ভুট্টা চাষ করার পূর্বে জমি ভালোভাবে চাষ করে মাটি
ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
ভুট্টা চাষ করার সময়
পানি জমে থাকে না এমন জমিতে ভুট্টা বারো মাসই চাষ করা যায়। তবে মার্চ থেকে
এপ্রিল, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এইভাবে পর্যায়ক্রমে
চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
বীজের পরিমাণ
ভুট্টা চাষে বীজ নির্বাচন একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ভালো বিষ না হলে
ফলন ভালো পাওয়া যাবে না। প্রতি বিঘা জমিতে ২ কেজি বীজ চাষ করতে হয়।
বপন পদ্ধতি
সাধারণত সারি আকারে ভুট্টার বীজ চাষ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির
দূরত্ব হবে ১৮ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ১০ ইঞ্চি।
সারের পরিমাণ
ভুট্টা চাষে ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পেতে হলে পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে।একর
প্রতি ১২০ কেজি টি এস পি, ২৩০ কেজি ইউরিয়া, ৯০ কেজি এম্পি, ৮৫ কেজি জিপসাম,
৬ জিংক সালফেট, ৫ কেজি বোরন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি জৈব সার প্রয়োগ করা যায়। সে
ক্ষেত্রে ১৮০০ – ২০০০ কেজি গোবর জৈব সার হিসেবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ১
থেকে ৩ ভাগ ইউরিয়া ও অন্যান্য সার জমিতে ছিটিয়ে চাষ দিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে।
৩০ থেকে ৩৫ দিন পর বকি ইউরিয়ার অর্ধেক আর বাকি টুকু ৬০-৬৫ দিন পর ছিটিয়ে দিতে
হবে।ভালো ফলনের জন্য সেচ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ৩ বার সেচ দিতে হবে। প্রথমবার ৩০
থেকে ৩৫ দিন পর ,২য় বার ৫০ থেকে ৬০ দিন পর এবং ৩য় সেচ ৮০-৮৫ দিন পর দিতে
হবে। তবে সেচ গুলো সার ছিটানর পর দিতে হবে।
গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য সবচেয়ে ভাল সবুজ ঘাস হলো ভুট্টার ঘাস। ভুট্টার ঘাস
গুলো ৫০-৬০ দিনের মধ্যে গবাদি পশুর খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায় এবং ঘাস কাটা যায়। এ
ঘাস সাধারণত ১০-১২ ফুট লম্বা হয়। এক একটি ভুট্টার গাছ ৩ – ৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে
থাকে।ভাল ভাবে চাষ করতে পারলে প্রতি বিঘায় ৮ -১২ টন ঘাস পাওয়া যায়।
ভুট্টা চাষের উপযুক্ত সময়
পানি জমে থাকে না এমন জমিতে ভুট্টা বারো মাসই চাষ করা যায়। তবে মার্চ থেকে
এপ্রিল, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এইভাবে পর্যায়ক্রমে
চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে রবি মৌসুমে অক্টোবর থেকে
নভেম্বর এবং বাংলা মাস হল মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ এবং খরিফ মৌসুমে মধ্য
ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এবং বাংলা ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র মাস ভুট্টা চাষ করার
উপযুক্ত সময়।
ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
সাধারণত সারি আকারে ভুট্টার বীজ চাষ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির
দূরত্ব হবে ১৮ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ১০ ইঞ্চি। চারা গজানোর ১ মাস
বা ৩০ দিনের মধ্যে জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। চারার বয়স ১ মাস না
হওয়া পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
ভুট্টা চাষের সারের পরিমান
আমরা জানি ভুট্টা একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। ভুট্টার পুষ্টি চাহিদা অনেক বেশি৷
এজন্য অধিক ফলন পেতে হলে ভুট্টা জমিতে সুষম সার দিতে হয়৷ সবচেয়ে ভালো হয় জৈব
সার প্রয়োগ করতে পারলে। ভুট্টা জমির প্রয়োজনীয় সার নিচে দেওয়া হলো৷ এছাড়া প্রতি
শতক জমিতে সারের পরিমাণ ও নিচে উল্লেখ করা হলো-
ভুট্টা চাষে ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পেতে হলে পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে।একর
প্রতি ১২০ কেজি টি এস পি, ২৩০ কেজি ইউরিয়া, ৯০ কেজি এম্পি, ৮৫ কেজি জিপসাম,
৬ জিংক সালফেট, ৫ কেজি বোরন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি জৈব সার প্রয়োগ করা যায়। সে
ক্ষেত্রে ১৮০০ – ২০০০ কেজি গোবর জৈব সার হিসেবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ১
থেকে ৩ ভাগ ইউরিয়া ও অন্যান্য সার জমিতে ছিটিয়ে চাষ দিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা – কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
৩০ থেকে ৩৫ দিন পর বকি ইউরিয়ার অর্ধেক আর বাকি টুকু ৬০-৬৫ দিন পর ছিটিয়ে দিতে
হবে।ভালো ফলনের জন্য সেচ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ৩ বার সেচ দিতে হবে। প্রথমবার ৩০
থেকে ৩৫ দিন পর ,২য় বার ৫০ থেকে ৬০ দিন পর এবং ৩য় সেচ ৮০-৮৫ দিন পর দিতে
হবে। তবে সেচ গুলো সার ছিটানর পর দিতে হবে।
সার পরিমাণ (কেজি/শতক)
রবি অথবা খরিফ যে মৌসুমী হোক না কেন সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করতে
হবে। নিচে সার প্রয়োগের মাত্রা উল্লেখ করা হলো-
গোবর ২০ কেজি ২০কেজি
জিপসাম ৭০০ গ্রাম ৬০০ গ্রাম
জিংক সালফেট ৭০০ গ্রাম ৫০০ গ্রাম
বৃক এসিড ২০ গ্রাম ২০ গ্রাম
ইউরিয়া ১৩০০ গ্রাম ১০০০ গ্রাম
টিএসপি ঌ০০ গ্রাম ৭০০ গ্রাম
এমপি ৮০০ গ্রাম ৫০০ গ্রাম
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
এক-তৃতীয়াংশ টিএসপি , এমপি ও ইউরিয়া সার জমি প্রস্তুতের সময় প্রয়োগ করে
মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়৷ বাকি ইউরিয়ার অর্ধেক বীজ বপনের ৩৫ থেকে ৪০ দিন পর এবং
অবশিষ্ট ইউরিয়া ৬০ থেকে ৬৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়৷
দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের ইউরিয়া পার্শ্ব-প্রয়োগ করতে হয়৷
ভুট্টা চাষে খরচ
ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পেতে হলে ভালো বীজ, সার , সেচ সর্বোপরি উত্তম রূপে জমি তৈরি
করতে হয়। ভুট্টা চাষে খরচ হয় বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। তবে সেচের
উপর ভিত্তি করে এই টাকার পরিমাণ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। ভুট্টার বিঘা প্রতি
ফলন হয় ৩০ থেকে ৩৫ মন। আর প্রতি বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি হয় ১৬ থেকে ১৭
হাজার টাকায়। খরচ বাদে লাভ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
শেষ কথা
আমরা জানি ভুট্টা একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। আমাদের দেশে যত খাদ্য শস্য উৎপাদন
করা হয় তার মধ্যে ভুট্টা চাষে কম পরিচর্যা ও কম খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং
ভুট্টার দামও ভালো পাওয়া যায় বলে বাংলাদেশের কৃষকেরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে
উঠেছেন।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং জলবায়ু ভুট্টা চাষের জন্য
বেশ উপযোগী। আমি ভুট্টা চাষের যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি আশা করি
আমার এই আলোচনা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
Leave a comment