আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে পবিত্র শবে বরাত পালন করা হয়। তাই
আমাদের শবে বরাত অর্থ কি – শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে জানা বিশেষ প্রয়োজন।
আমরা যদি শবে বরাত অর্থ কি – শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে না জানি তাহলে অনেক
পাপের কাজ করে ফেলতে পারি। তাই শবে বরাত অর্থ কি – শবে বরাতের ফজিলত জানতে
আমার আর্টিকেল পড়ুন।

মহান আল্লাহ তা আলা  এই রাতে তার বান্দা দের জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন।
আরবি দিন গণনার হিসাব অনুযায়ী আগে রাত আসে এবং পরে দিন আসে। তাই
আমাদের শবে বরাত অর্থ কি – শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে জেনে ইবাদত করতে হবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ শবে বরাত অর্থ কি – শবে বরাতের ফজিলত

শবে বরাত অর্থ কি

আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতেকে বলা হয় “শবে বরাত”। শবে বরাত শব্দটির
আরবি অর্থ হলো -“লাইলাতুল বরাত”। শবে বরাত কথাটি এসেছে ফারসি শব্দ থেকে। 
শবে বরাত কথাটির অর্থ হল – রাতের মুক্তি বা “মুক্তির রাত”।

“নিসফ সাবান” বা সাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী হিসেবে হাদিসে এ  রাতকে
উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই ফারসি, উর্দু, হিন্দি সহ নানান
ভাষায় এই রাত্রি শবে বরাত নামেই বেশি পরিচিতি ।এই রাতে মহান আল্লাহতালা মুক্তির
ও মাগফিরাতের দরজা খুলে দেন। সৃষ্টি কুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও
হিংসুক ছাড়া সকলের গুনাহ মাফ করে দেন।

আরো পড়ুনঃরোজা কত প্রকার – রোজা সম্পর্কে হাদিস জেনে নিন

তাই বলা হয় এটি একটি বরকতময় রাত। যেহেতু এই রাত আসে শাবান মাসের মধ্য সময়ে তাই
হাদিসে এই রাতকে বলা হয় “লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান” বা অর্ধ সাবানের রাত। ইসলামে
পাঁচটি রাত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো – শবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে কদর
এবং দুই ঈদের রাত।

যারা এই রাতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন তারা প্রতিটি রাতকে শবেবরাতের রাতে
পরিণত করেন এবং  মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

শবে বরাত কবে – শবেবরাত কত তারিখ ২০২৩

হিজরী ১৪৪৪ সাল, সাবান মাস,২১ শে/ একুশে ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বাংলাদেশের আকাশে
চাঁদ দেখা গেছে। ২২ শে ফেব্রুয়ারি বুধবার থেকে সাবান মাসের গণনা শুরু হবে।
অর্থাৎ বুধবার হবে সাবান মাসের ১ তারিখ। আর শবে বরাত পালিত হয় শাবান মাসের ১৪
তারিখ দিবাগত রাত্রে। এই হিসেবে বাংলাদেশ শবে বরাত পালিত হবে ৭ই মার্চ মঙ্গলবার
দিবাগত রাত্রে।

বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির
সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এ সভায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
ফরিদুল হক খান সভাপতিত্ব করেন। পরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর মহা পরিচালক মহা বশিরুল
আলম প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে শবে বরাতের দিন ঘোষণা করেন। এ সভায় মহা
বশিরুল আলম আরো জানান,

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর, বিভাগীয় ও
জেলা কার্যালয় এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূরদর্শন কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক
২১ শে ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৪ হিজরি সনের সাবান মাসের চাঁদ
দেখা গেছে। মুমিন ও ধর্মপান মুসলমানের কাছে পবিত্র শবে বরাতের রাত হল সৌভাগ্যের
রাত ।

মহান আল্লাহ তা আলা  এই রাতে তার বান্দা দের জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন।
আরবি দিন গণনার হিসাব অনুযায়ী আগে রাত আসে এবং পরে দিন আসে। আর সেই অনুযায়ী
সাবান মাসের ১৫ তম দিন অর্থাৎ সাবান মাসের ১৪ তম দিনের শেষে যে রাত আসে তাকে ১৫
তম দিন হিসেবে ধরা হয়। আর এই অনুপাতে বাংলাদেশে পবিত্র শবে বরাত হবে সাত /৭ ই
মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রে।

মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপান মুসলমানেরা নফল
নামাজ আদায় করেন, জিকির করেন এবং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে রাত্রি পার
করেন।সরকারি আদেশ অনুযায়ী শবে বরাতের পরের দিন বাংলাদেশে সরকারি ছুটি
থাকে।  আর এই হিসাবে এবারে শবেবরাতের ছুটি পড়েছে ৮ই মার্চ বুধবার।

আরো পড়ুনঃ সালাত কাকে বলে – সালাতের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

৭ই মার্চ বাংলাদেশের আরেকটি ঐতিহাসিক দিবস। আর তা হলো ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ
দিবস এবং ৮ ই মার্চ বাংলাদেশ নারী দিবস। উল্লেখ আছে রজব মাস হলো বীজ বপনের সময়।
আর সাবান মাস হলো গাছ জন্মানোর সময়, আর রমজান মাস হল ফল লাভের সময়। আর সে
হিসেবে সাবান মাস হল রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়।

আমরা সবাই মহান আল্লাহর কাছে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং নফল
রোজা ও নামাজের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করবো। “ইনশাআল্লাহ”।

শবে বরাতের ফজিলত

মুমিন মুসলমানদের জন্য রহমত ও মুক্তির রাত হল শবে বরাতের রাত। মহান আল্লাহতালা এই
রাতে রহমতের দরজা খুলে দেন এবং পাপীদের পাপ গুলো উদার চিত্তে ক্ষমা করেন। একমাত্র
যারা শিরক বা আল্লাহর অংশীদারিত্ব করে এবং যারা হিংসা করে বা অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ
করেন আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন না। হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু
সালাম বলেন, “আল্লাহতালা এ রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে অবতরণ করেন।

এরপর তিনি (মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন) এই বলে ডাকতে থাকেন যে, তোমাদের মধ্যে
কোন ক্ষমা প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। তোমাদের মধ্যে কোন রিজিক
অন্বেষণকারী আছে কি? আমি তাকে রিযিক দেব। তোমাদের মধ্যে কোন বিপদগ্রস্ত আছে কি?
আমি তাকে বিপদ দূর করে দেবো।ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে। (ইবনে
মাযহা, হাদিস নাম্বারঃ ১৩৮৮)।

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, নবীজি (সাঃ) এ রাতে মদিনার কবরস্থান
“জান্নাতুল বাকি”তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন। তিনি আরো বলেন,
নবীজি (সাঃ) তাকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের সংখ্যার
পরিমাণ (এর চেয়ে বেশি) সিও  সংখ্যক গুনাগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
(তিরমিজি শরীফ, হাদিস নংঃ ৭৩৯)।

শবে বরাতের আরেকটি ফজিলত হলো এই রাতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত যা পৃথিবী সৃষ্টির
৫০ হাজার বছর পূর্বে নির্ধারিত করা হয়েছে, তবে সৃষ্টি জগতের ভাগ্য বন্টন করা
হয়। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেন, তুমি
কি জানো ! অর্ধ সাবানের রাতের কাজ কি?

আয়েশা রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু  বললেন, “না” হে আল্লাহর রাসূল। নবী (সাঃ)
বললেন, এই বছর যতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং মারা যাবে তা লিপিবদ্ধ করা হয় ।
এই রাতে মানুষের আমল পৌঁছানো হয় এবং এই রাতে তাদের রিজিক অবতীর্ণ হয়। (মিশকাতুল
মাসাবিহ , হাদিসঃ ১৩০৫)।

পবিত্র কোরআনে সূরা দুখানের ৪ – ৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এই রাতে প্রজ্ঞা পূর্ণ
সব বিষয় সুরক্ষিত হয়। এ আদেশ আমার পক্ষ থেকে আমি প্রেরণকারী। এই অর্ধ সাবানের
রাতেই মৃত্যুর দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতার কাছে তালিকা পাঠানো হয় যারা এই এক
বছরে মৃত্যুবরণ করবেন তাদের।

আরো পড়ুনঃসালাতের প্রকারভেদ – সালাতের নিয়ম জেনে নিন

আতা ইবনে  আশার থেকে বর্ণিত, “সাবানের ১৫ তম রাতে মৃত ব্যক্তিদের তালিকা
প্রদান করা হয় এমনকি কেউ সফরে বের হয় অথচ তাকে জীবিত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে
মৃত ব্যক্তিদের তালিকায় স্থানান্তরিত করা হয়ে গেছে। কেউ বিয়ে করে অথচ তাকে
জীবিত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তিদের তালিকায় স্থানান্তর করা হয়ে গেছে
“। (মুসান্নাদু আবদির রাজ্জাক, হাদিস নংঃ ৭৯২৫)।

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু বলেন, “একবার রাসূল (সাঃ) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত
দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার
পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়লো। তিনি সেজদা থেকে উঠলেন
এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা ! তোমার কি আশঙ্কা হয়েছে !
আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুল (সাঃ) আপনার দীর্ঘ সেজদা দেখে আমার আশঙ্কা
হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা!

রাসূল (সাঃ) বললেন তুমি কি জানো  এটা কোন রাত ! আমি বললাম আল্লাহ এবং
আল্লাহর রাসূলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সাঃ) বললেন এটা হল অর্ধ সাবানের রাত।
এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি মনযোগ দেন, ক্ষমা প্রার্থনা কারীদের
ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থনা কারীদের অনুগ্রহ করেন।আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের
তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন”।  (শুআবুল ঈমান, তৃতীয় খন্ড ,পৃষ্ঠাঃ ৩৮২)।

শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস

শবে বরাত হল ফার্সি শব্দ। সব অর্থ রাত এবং বরাত অর্থ মুক্তি বা আজাদ। হাদিসের
ভাষায় এ রাত্রে লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান তথা ১৫ শাবানের রাত বলা হয় ।পবিত্র
কোরআনুল কারীমে এ রাত সম্পর্কে তেমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া না থাকলেও হাদীস শরীফে
নির্ভরযোগ্য বর্ণনা সূত্রে একাধিক হাদিস পাওয়া যায়। সেগুলো হল –

ইমাম ইবনে রজব রহমতুল্লাহ বলেন, “একজন মুমিন বান্দার উচিত এ রাতে জিকির ও দোয়ার
জন্য নিজেকে পুরোপুরি কাজ থেকে  অবসর নেওয়া।  প্রথমে খাঁটি মনে তওবা
করা এরপর মাগফিরাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। আপদ – বিপদ দূর হওয়ার জন্য দোয়া করা
এবং নফল নামাজ পড়া।(লাতাইফুল মাআরিফ , পৃষ্ঠা ১৫১ – ১৫৭)।

ইবনে ওমর রাযিআল্লাহু বলেন, “পাঁচটি রাত এমন আছে যে রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া
হয় না। জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, সাবানের ১৪ তারিখের রাত, ২ ঈদের রাত”। 
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিসঃ ৭৯২৭)।

সাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহ বলেন, “সাবানের ১৪ তারিখ রাতের ফজিলত
রয়েছে। পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষীদের অনেকেই এ রাতে সালাত পড়তেন। তবে
সম্মিলিতভাবে মসজিদে সে রাত জেগে থাকা বিদাত। এমনকি দলবদ্ধ ভাবে জামাতে সালাত
আদায় করা ও বিদআত”। (আল ফাত ওয়াল কুবরা, ইবনে তাইমিয়া, ১/১৩০১)।

ইমাম শাফেয়ী রহমতউল্লাহ বলেন, “আমাদের কাছে খবর পৌঁছে যে, পাঁচ রাতের দোয়া কবুল
হয়। শবে মেরাজ,শবে বরাত, শবে কদর, দুই ঈদের রাত এবং জুমা বারের রাত। এ রাতগুলো
সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে আমি সেগুলো মুস্তাহাব মনে করি, ফরজ মনে করি না”। (আল
ইতি বার, পৃষ্ঠা ১৪৩)।

আরো পড়ুনঃহজের ফজিলত ও গুরুত্ব জেনে নিন

ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহমতউল্লাহ আদি ইবনে আর তাতের উদ্দেশ্যে লেখেন, “বছরের
চারটি রাত তুমি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে, কেননা সেসব রাতে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।
সেগুলো হল -শবে মেরাজের রাত, শবে বরাতের রাত,  ১৪ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর ও
ঈদুল আযহার রাত” । (আত তালখিসুল হাবির,ইবনে হাজারঃ২/১৯১)।

শেষ কথা

শবে বরাত হলো একটি মহিমান্বিত রজনী। শবেবরাত কি শবে বরাতের ফজিলত শবেবরাত
সম্পর্কে হাদিস এবং ২০২৩ সালে বাংলাদেশ কবে শবে বরাত পালিত হবে এ নিয়ে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি। আমার মনে হয় আপনাদের শবে বরাত সম্পর্কে যে কোন জিজ্ঞাসা আমার এই
আর্টিকেল এর মধ্যে পেয়ে যাবেন।