শবে বরাত হলো সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি মহিমান্বিত রজনী। শবে বরাত কত তারিখ
২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত কিনা তা সঠিকভাবে আমাদের জানা প্রয়োজন। আমরা যদি
সঠিকভাবে শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত না জানি তবে
সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ করে বসবো। তাই শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত
কি বিদাত কিনা জানতে আমার পোস্টটি পড়ুন।
মহিমান্বিত এই রজনীতে মহান আল্লাহ তালার অনুগ্রহ লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ
নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত এবং বিভিন্ন জিকির আজগরের মাধ্যমে এই রাত্রি পালন
করেন। তাই শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত কিনা এই
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পোস্ট সূচীপত্রঃ শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত
শবেবরাত কত তারিখ ২০২৩
আরবি বছর গণনায় হিজরী ১৪৪৪ সাল, শাবান মাস। বাংলা বছর গণনায় ১৪২৯ খ্রিষ্টাব্দ,
ফাল্গুন মাস। ইংরেজি ২০২৩ সাল ২১শে/একুশে ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বাংলাদেশের আকাশে
আরবি শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ২২ শে ফেব্রুয়ারি বুধবার থেকে সাবান মাসের
গণনা শুরু হবে। অর্থাৎ বুধবার হবে শাবান মাসের ১ তারিখ। আর শবে বরাত পালিত হয়
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে অর্থাৎ এই হিসাবে বাংলাদেশ শবেবরাত পালিত হবে
সাত (৭) মার্চ মঙ্গলবার।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় ইসলামিক
ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় যে বাংলাদেশের শবে বরাত পালিত হবে সাত
(৭) মার্চ। আর এ সভায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান সভাপতি করেন। পরে ইসলামিক
ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মহা বশিরুল আলম প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শবেবরাতের দিন
ঘোষণা করেন। এ সভায় মহা বশিরুল আলম আরো বলেন,
আরো পড়ুনঃ মেরাজের – গুরুত্ব ও ফজিলত – শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত জেনে
নিন
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় জেলা কার্যালয়, আবহাওয়া
অধিদপ্তর, দূরদর্শন কেন্দ্র এবং মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক
একুশে ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেছে।
এবং আগামী ৭ই মার্চ বাংলাদেশে শবে বরাত পালিত হবে। শাবান মাসের ১৫ তারিখ অর্থাৎ
.১৪তারিখ দিবাগত রাত্রে শবে বরাত পালিত হবে।
মহিমান্বিত এই রজনীতে মহান আল্লাহ তালার অনুগ্রহ লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ
নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত এবং বিভিন্ন জিকির আজগরের মাধ্যমে এই রাত্রি পালন
করেন। বাংলাদেশের সরকারি আদেশ অনুযায়ী শবে বরাতের পরের দিন সরকারি ছুটি থাকে। আর
এই হিসাবে এবারে শবে বরাতের ছুটি পড়েছে আট (৮) মার্চ বুধবার। তাই
আমাদের শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত এ সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে হবে।
শবে বরাত কি বিদাত
শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত সমগ্র বিশ্বের মুসলিম উম্মার জন্য এক মহিমান্বিত রজনী।
সব অর্থ হলো “রাত” বরাত অর্থ হলো “মুক্তি” শবে বরাত শব্দের অর্থ হল মুক্তির রাত।
আরবি বারাআত এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল বরাত। এই রাতে মুমিন মুসলমানদের জন্য মুক্তি ও
কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই এই রাতকে বলা হয় লাইলাতুল বরাত বা মুক্তির রাত।
এ রাতে নফল ইবাদতে রয়েছে আলাদা গুরুত্ব।
কোরআনুল কারীমের সূরা আর দু খানের .৪ – ৫ নং আয়াতে এই রাতের কিছু আলামত পাওয়া
যায়। এই দুটি আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “এই রাতে প্রজ্ঞা পূর্ণ সব বিষয়
শিরিকৃত হয়। এ আদেশ আমার পক্ষ থেকে আমি প্রেরণকারী”। তবে হাদিসে এই রাতের অনেক
ফজিলতের কথা রয়েছে। হাদিসের পরিভাষায় একে “লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান” বা
অর্ধ সাবানের রাত বলা হয়।
হযরত আয়েশা রাযিআল্লাহু বলেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম নামাজে
দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়লো। তিনি
সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, হে আয়েশা তোমার কি
আশঙ্কা যে,
আমি উত্তরে বললাম ! ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা
হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা ! রাসূল (সাঃ) বললেন তুমি কি জানো এটা কোন
রাত ! আমি বললাম, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই ভালো জানেন। নবীজির (সাঃ) বললেন
এটা হল অর্ধ সাবানের রাত।
এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমা প্রার্থনা কারীদের
ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের
অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।
আরো পড়ুনঃ শুক্রবারে বা জুমার দিনের অতি গুরুত্বপূর্ণ ১১ টি বিশেষ আমল
সম্পর্কে জেনে নিন
উপরোক্ত হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, দীর্ঘ সিজদা দিয়ে নফল নামাজ পড়া
উত্তম। তবে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনো ইবাদত বন্দেগী করা বিদআত। এ রাতে
একা একা কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ, জিকির সহ ইবাদত করা যায় তবে সম্মিলিতভাবে এই
রাতে কোন ইবাদত করতে হবে এটা মনে করা বিদআত। এই রাতে পুরুষ এবং মহিলারা সবাই
নিজ নিজ ঘরে নফল ইবাদত করতে পারেন।
নফল ইবাদতের জন্য দলবদ্ধ হয়ে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন রেওয়াজ ছিল
না।(ইকফিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম,২য় খন্ড,পৃষ্ঠা ৬৩১)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া
সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, এই রাতে
দলবদ্ধ হয়ে ইবাদত করতে হবে। তবে আবার শবেবরাতের রাতকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ
নেই। তেমনি আবার এই রাত কে কেন্দ্র করে বাড়াবাড়ি ও করা যাবে না।
আমাদের আমল করতে হবে বিদাত ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে।কারণ দিনের ব্যাপারে সব
ধরনের বিদাতই হারাম এবং গুনাহের কাজ। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ
(সাঃ) বলেছেন, “তোমরা দিনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে
বিরত থাকবে। কারণ প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত।আর প্রতিটি বিদাতের পরিণাম গোমরাহি
বা ভ্রষ্টতা”।
রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের দিনের মধ্যে এমন
নতুন বিষয় তৈরি করবে যা তার অন্তর্গত নয় তা প্রত্যাখ্যাত হবে”। অধিকাংশ মানুষই
এই রাতে ঘিরে অতিরঞ্জিত করে ফেলেন যা বিদাতের অন্তর্গত। তাই
আমাদের শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত এ সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে হবে।
শাহিদ সায়েক ইবনে বায রহমাতুল্লাহ বলেন, অর্ধ সাবানের রাত এর
ফজিলতের ব্যাপারে কিছু দুর্বল হাদিস বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর ওপর নির্ভর করা জায়েজ
নেই। আর এ রাতে নামাজ পড়ার ব্যাপারে যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই জাল।
যেমনটি অনেক আলেম সতর্ক করেছেন। (আত তাহজির মিনাল বিদা, পৃষ্ঠাঃ ১১)।
আবু সামা রাযিআল্লাহু বলেন, হাফেজ আবুল খাত্তাব বিন দেহিয়া তার
শাবান মাস সম্পর্কিত লিখিত কিতাবের বলেন, ইলমন জারহী ওয়াত আদিল বিশেষজ্ঞ আলেমগণ
বলেছেন, অর্ধ সাবানের রাতের ব্যাপারে কোন হাদিস নেই।(আলবায়েস, পৃষ্ঠা নং
৩৩)। তাই আমাদের শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত এ
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
শবে বরাতকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে অনেক বেদাত প্রচলিত রয়েছে। সেগুলো
নিচে আলোচনা করা হলো –
হালুয়া রুটি
শবে বরাত কে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে হালুয়া রুটির আয়োজন করা হয়। এই দিন হালুয়া
রুটি ও ভালো খাবার খাওয়া তারা পুণ্যের কাজ মনে করে। আর তাই শত গরিব লোক হলেও
টাকা ধার করে তারা গোস্ত খায়। তারা মনে করে যে সেদিন যদি ভালো খাবার
খাওয়া যায় তাহলে সারা বছর ভালো খাবার খাওয়া যাবে। আর এই বিশ্বাসে তারা ভালো
খাবারের আয়োজন করে থাকে। হালুয়া রুটি খাওয়ার ব্যাপারে তাদের অভিমত হলো –
রাসূল (সাঃ) ওহুদ যুদ্ধে দাঁত ভাঙ্গার পরে শক্ত খাবার খেতে
পারেন নি। তাই নবীর প্রতি সমবেদনা জানাতে এই দিন হালুয়া রুটি খাওয়া হয়। কিন্তু
রাসূল (সাঃ) এর দন্ত মোবারক শহীদ হওয়ার সাথে হালুয়া রুটি খাওয়ার কোন সম্পর্ক
নেই। এটা সম্পূর্ণরূপে বিদআত। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী তো শাবান মাসে তার দন্ত
মোবারক হারাননি। কারণ ওহুদের যুদ্ধ হয়েছিল এই শাওয়াল মাসের ৭ তারিখে।
তাহলে তো শাওয়াল মাসের ৭ তারিখেই হালুয়া রুটি খেতে পারতো।কিন্তু তারা সাবান
মাসের ১৪ তারিখ রাতে হালুয়া রুটির আয়োজন করে। শুধু তাই নয় এটি গ্রাম অঞ্চলে
অনেক লোক একসাথে হালুয়ার রুটি নিয়ে তারপর মিলাদ করে এবং পরে তারা সবাই মিলে ভাগ
করে খায়। যা সম্পূর্ণ বিদআতের আওতায় পড়ে। এছাড়া আমাদের প্রিয় নবী কি
শুধু একদিন নরম খাবার খেয়েছিলেন !
আরো পড়ুনঃ গীবত কাকে বলে – গীবত কত প্রকার জেনে নিন
যে মানুষ শুধু একদিন এক বেলা হালুয়া রুটির আয়োজন করে ! তারা মনে করে শবে বরাত
মানে ভালো খাবার বরাত। তারা ভুলে যায় যে এটা এমন একটা রাত যেখানে মানুষের
ভাগ্য নির্ধারিত হয়। পাপ থেকে মুক্তি মেলে। এই রাতে এক বছরে কতজন লোক মারা যাবে
এবং জন্ম নিবে তা নির্ধারিত হয়। কিন্তু তারা মনে করে বরাত মানে গোস্ত
খাওয়ার বরাত তাই তারা আমাদের নবীর প্রতি বেশি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে বিদআত করে
ফেলে। অথচ তারা সুন্নাহ থেকে দূরে থাকে।
আলোকসজ্জা
সুদূর প্রাচীন কালে বারামিকা নামে এক প্রকার জাতি ছিল যারা আলোকসজ্জার আয়োজন
করতো। কারণ তারা ছিল অগ্নি পূজারক । কিন্তু মানুষ তাদের অনুসরণ করে শবে বরাত
উপলক্ষে মসজিদ-মাদ্রাসা, ঘর – বাড়ি এমনকি রাস্তাঘাট ও আলোক সজ্জায় সজ্জিত করে
অপচয় করে। কিন্তু ইসলামে অপচয় করা হারাম। আল্লামা ইবনে নুজাইম হানাফী বলেন,
শবেবরাতে বিভিন্ন গলি ও বাজারে রংবেরঙের আলোকসজ্জা করা হারাম বা বিদআত।
এমনকি মসজিদেও আলোকসজ্জা করা হারাম। এই শবে বরাতকে ঘিরে মানুষ যে আলোকসজ্জা করে
তার কোন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে কোন দুর্বল হাদিস তো দূরের
কথা কোন জাল হাদিসও পাওয়া যায় না। তাই আমাদের শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ –
শবে বরাত কি বিদাত এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
প্রাণীর আদলে ছবি ও মূর্তি তৈরি করা
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শবে বরাত উপলক্ষে রংবেরঙের ছবি ও মূর্তি তৈরি করে। তারা
বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন পদার্থ দ্বারা এই সকল মূর্তির আকৃতি তৈরি করে। যেমন –
পাউরুটি, সন্দেশ ইত্যাদি তৈরি করে এবং তাদের শবে বরাতের বিশেষ খাবার হিসাবে
অভিহিত করা হয়। এবং বাজারে বেশি মূল্যে বিক্রি করা হয়। আর এসব কাজ সম্পূর্ণ
বেদাত। প্রাণীর আকৃতি দিয়ে তৈরি করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম।
কোন মূর্তি তৈরি করার ব্যাপারে কঠিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং প্রতিকৃতি
প্রস্তুতকারীর জন্য আখেরাতে কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসুদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, “আমি রাসুল সালাম কে বলতে শুনেছি,
প্রতিকৃতি প্রস্তুতকারীরা আল্লাহতালার কাছে সবচেয়ে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন
হবে”।
আরো পড়ুনঃ সালাতের প্রকারভেদ – সালাতের নিয়ম জেনে নিন
আর শবে বরাত উপলক্ষে এইসব খাবারের আয়োজন করা সম্পূর্ণ বিদআত ও কুসংস্কার। এ
ধরনের প্রাণী আকৃতির খাবার তৈরি করা এবং বিক্রি করা ও নাজায়েজ। (বুখারী ২৮৮০,
শরহে মুসলিম নবী ১৪/১৮)। তাই আমাদের শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
নির্দিষ্ট নিয়মে নফল নামাজ পড়া
শবে বরাতে সালাতুল আলিফিয়া নামে বিশেষ নিয়মে ১০০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করা
হয়। এই নামাজে প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর দশবার করে সূরা ইখলাস পাঠ
করা হয়। এভাবে মোট ১ হাজার বার সূরা ইখলাস পাঠ করা হয়। ইসলামে এমন
নামাজের কোন ভিত্তি নেই। যা সম্পূর্ণরূপে বেদাত। এছাড়া দশ বার সূরা
ইখলাস পাঠ করতে গেলে সূরা গণনার দিকে মনোযোগ বেশি দিতে হয়।
তখন তার নামাজের দিকে মনোযোগ থাকে না। এমন নামাজ রাসুল (সাঃ) ও খেলাফায়ের
রাশেদীনের মধ্যে কেউ কখনোই পড়েন নি।এছাড়া ও ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহম্মেদ,
ইমাম হাম্বুল ,সুফিয়ান , ইমাম মালেক, ওয়ারি লাইস প্রমুখ বিখ্যাত ইমামগণের মধ্যে
কেউ এমন নামাজ পড়ার কথা বলেননি। এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিস সম্পূর্ণ সম্পূর্ণ জাল
ও বানোয়াট এবং ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বেদাত।
কবর জিয়ারত
এমন অনেক লোক আছে যারা এই শবেবরাতের রাতে গোরস্থান ও মাজার জিয়ারত করতে বের হয়।
এবং তারা ধারাবাহিকভাবে একে একে এলাকার সকল কবর জিয়ারত করেন। তারা এ যুক্তি
উপস্থাপন করেন যে রাসূল (সাঃ) জান্নাতুল বাকী জিয়ারত করতেন তাই আমরা
ও কবর জিয়ারত করি। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী শবে বরাত রাতে একা জান্নাতুল বাকি
জিয়ারত করতেন।
তিনি কোন সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে গিয়ে জান্নাতুল বাকী জিয়ারত করেননি। তাই সকলে
মিলে একসাথে কবর জিয়ারত করা সম্পূর্ণরূপে বিদত। তাই আমাদের শবে বরাত কত
তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
মৃতদের আত্মা দুনিয়াতে পুনঃ আগমন
শবে বরাতকে উপলক্ষ করে অনেক এলাকার নারীরা ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে আতোর,
সুগন্ধি লাগিয়ে ঘরবাড়ি পরিপাটি করে রাখে। এই কাজ বিধবা মহিলারা সবচেয়ে বেশি
করে থাকে। তারা বিশ্বাস করে যে এই রাতে তার স্বামীর আত্মা তার বাড়িতে আসবে। অনেক
মহিলারা আবার ভালো খাবার রান্না করে এক টুকরা কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে ।
এবং তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে, তার আপনজন বা স্বামীর মৃত আত্মা বাড়িতে এসে
খাবার গুলো খেয়ে যাবে যা সম্পূর্ণরূপে ইসলাম বিরোধী কাজ এবং সম্পূর্ণ বেদাত। এমন
কথা আমরাও ছোটবেলায় শুনেছি। তখন বলা হতো মৃত ব্যক্তিদের প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা
মাগরিবের আযানের সময় তেতুল পাতায় করে খাবার দেয়া হয়। তাই এই সময় যার বাড়িতে
মানুষ মারা গেছে তাদের খাবার খেতে নেই।
আরো পড়ুনঃ রোজা কাকে বলে – রোজা ভঙ্গের কারণ জেনে নিন
তারা যদি এই সময় অর্থাৎ সন্ধ্যেবেলা মাগরিবের আজানের সময় খাবার খায় তাহলে
তাদের পরিবারের যে ব্যক্তি মারা গেছে তাকে খাবার দেয়া হবে না। আর এসব কথা ও
সম্পূর্ণরূপে বেদাত। তাই আমাদের শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি
বিদাত এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
আতশ বাজি করা
এমন অনেক মানুষ আছেন যারা হাজার হাজার টাকা খরচ করে আতশবাজির ব্যবস্থা করে যা
ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম। এটি নিতান্তই কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। এই আতশ
বাজিতে অর্থ সম্পদের অপচয় হয়। অথচ কোরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে – “অপচয় কারী
শয়তানের ভাই”। যারা এই আতশবাজির পেছনে এত টাকা অপচয় করেন তাদের উচিত এই টাকা
দিয়ে সমাজের গরীব দুঃখী মানুষের মুখে কিছু খাবার তুলে দেয়া।
শবে বরাতের নফল রোজা
শবে বরাতের রোজা নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে আর তা হলো শবে বরাতের রোজা
কয়টি। এই শবে বরাতের রোজা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
তোমরা সাবান মাসের ১৫ তারিখ অর্থাৎ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত করো
এবং পরদিন রোজা রাখো। আর আমরা এ হাদিস থেকে বুঝতে পারি যে, শবে বরাতে রোজা হল এক
(১) টি অর্থাৎ শাবান মাসের ১৬ তারিখের শবে বরাতের রোজা রাখতে হবে।
নবীজি (সাঃ) প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা
রাখতেন যাকে আইয়ামে বীজের রোজা বলা হয়। এবং অন্যদেরকে ও নবীজি এই তিন দিন রোজা
রাখার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিরমিজি শরীফের বেশ কয়েকটি হাদিসে উল্লেখ
আছে সাবান মাসের প্রায় সম্পন্ন মাসই নবীজি রোজা রাখতেন। রাসূল
(সাঃ) বলেন, “যখন সাবানের মধ্য দিবস আসে তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করো এবং
দিনে রোজা পালন কর”।( সুনানে ইবনে মাজাহ)।
আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম এই রোজা পালন করতেন। আমাদের
প্রিয় নবীও এই আইয়ামে বীজ এর রোজা পালন করতেন যা সুন্নাহ হিসেবে
পরিগণিত।সুতরাং তিনটি রোজা রাখলেও শবে বরাতের রোজা পালন হয়ে যাবে। হযরত আলী
রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, “রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেন, পনের সাবানের রাত
অর্থাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে রাত যখন আসে তখন তোমরা তা ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও
এবং পরদিন রোজা রাখ”।( ইবনে মাজাহ। হাদিস .১৩৮৪)।
নবীজী সাবান মাসে কখনো ১০ টি কখনো ২০টি রোজা রাখতেন। কখনো বা আরও বেশি রোজা
রাখতেন। শাবান মাস হল রমজান মাসের পূর্ব প্রস্তুতির সময়। তাই এই মাসে বেশি বেশি
রোজা করা উচিত। তাই আমাদের শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি
বিদাত এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
শবে বরাতের জিকির
শবে বরাত হলো পাপ মুক্তির রাত। এই রাতে যতটা সম্ভব জিকির আজগারের মাধ্যমে রাত্রি
অতিবাহিত করতে হয়। যদিও সারা বছরই এই জিকির গুলো করা আবশ্যক তবে শবে বরাত সহ
আমরা যে পাঁচটি রজনী পাই যেমন – সবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে কদরের রজনী, দুই
ঈদের রজনী এবং আমরা জুম্মা বারের রাতে এই জিকির গুলো করতে পারি। জিকির গুলো হল
–
👉 সুবহানাল্লাহ
👉 আলহামদুলিল্লাহ
👉 লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
👉 আল্লাহু আকবার
👉 লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা
বিল্লাহ
👉 আস্তাগফিরুল্লাহ
তবে নকল ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কুরআন তিলাওয়াত করা।
শবেবরাত ছাড়া ও দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণের কামনায় যে কোন সময় দোয়া করাই হলো
জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা এবং জিকির
করা। তাই আমাদের শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত এ
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
শেষ কথা
আমি শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদআত এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
করেছি। আগামী ৭ মার্চ মঙ্গলবার আমাদের দেশে শবে বরাত পালন করা হবে। আমি আশা করি
আমার এই আর্টিকেল আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আমার আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে
আপনারা বিদাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং পাপ থেকে মুক্ত হয়ে সঠিকভাবে
নিজেদের আমলগুলো করতে পারবেন।
আর যদি আমার আর্টিকেল আপনাদের উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে
শেয়ার করতে ভুলবেন না। তাই আসুন আমরা শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত
কি বিদাত জেনে নেই।
Leave a comment