সেন্টি লেন-নিষিদ্ধ দ্বীপ- সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। তাই আমি
সেন্টি লেন-নিষিদ্ধ দ্বীপ- সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।সেন্টি
লেন-নিষিদ্ধ দ্বীপ- সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতে আমার পোস্টটি আপনাদের জন্য।

সেন্টিনেলরা ভারত জলসীমার মধ্যে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের একটি সেন্টিনেল নামক  দ্বীপে বসবাস করে। ধারণা করা হয় তারাই পৃথিবীর একমাত্র অসভ্য বর্বর জাতি যাদের
সঙ্গে আজ পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করতে পারেনি।সেন্টি লেন-নিষিদ্ধ দ্বীপ- সম্পর্কে
নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

পোস্ট সূচিপত্রঃ সেন্টি লেন-নিষিদ্ধ দ্বীপ

সেন্টি লেন-নিষিদ্ধ দ্বীপ

বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে অবস্থিত একটি দ্বীপ রয়েছে যার নাম সেণ্টি লেনদ্বীপ। এটি
আন্দামান দ্বীপুঞ্জের মধ্যে অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপে কেউ প্রবেশ করতে পারে
না। এই পৃথিবীতে এমন জায়গা খুব কমই আছে যেখানে ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা ভ্রমণ করতে
পারেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষ খুব সহজে ভেদ করে দুর্গম এলাকা।
কিন্তু এরপরেও শুধু ভ্রমণ পিপাস মানুষ কেন কেউ এই দ্বীপে প্রবেশ করতে পারেনি।

আরো পড়ুনঃভিক্টোরিয়া – মেমোরিয়াল- স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ সম্পর্কে জেনে নিন

বঙ্গোপসাগরের বুকে ভেসে থাকা এই দ্বীপে কেউ কখনো প্রবেশ করতে পারেনি। এই
সেন্টিনেল দ্বীপে যারা বসবাস করে তাদের বলা হয় সেন্টিনেলি। এই সেন্টিনেলিরা
নিজেরা এমন একটি উপজাতি যাদের সাথে বাইরে জগতের বিশেষ কোনো যোগাযোগ নেই। তারা
বাইরে বিশ্বের সাথে কারো যোগাযোগ মেনে নেয়নি বরং প্রত্যাখ্যান করেছে হিংস্রতার
সাথে।

সেন্টিনেল হল ভারত জলসীমায় অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ। এই দীপ ভারত সীমায়
অবস্থিত হলেও ভারত কোন প্রকার কর্তৃত্ব করেনি।পৃথিবীর কেউ এই দ্বীপে প্রবেশ করতে
পারেনি যদি কেউ ভুল করেও এই দ্বীপে প্রবেশ করতে চেষ্টা করেছে তাহলে তাদের করুণ
পরিণতি হয়েছে। সেন্টিনেল দীপ্তি ভারত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত হলেও ভারত সরকার
এই দ্বীপের ব্যাপারে কোন কর্তৃত্ব করেন না।

আয়তন ও জনসংখ্যা

সেন্টিনেল নামক এই দ্বীপের আয়তন ৭২ কিলোমিটার। তবে সেন্টিনেল দ্বীপপুঞ্জের
জনসংখ্যার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মনে করা হয় এই দ্বীপে ৫০ থেকে ২৫০ জনের
মতো জনসংখ্যা বাস করে। আবার মনে করা হয় এ দ্বীপে প্রায় ৫০০ জন সেন্টিনেলি বাস
করে। হাজার হাজার বছর ধরে এই দ্বীপে তারা বসবাস করে আসছে।

সেন্টিনেলিদের খাবার

সেন্টিনেলেরা আগুনের ব্যবহার জানে না তারা মূলত জীবিকা নির্বাহ করে স্বীকার করে
মৃত পশু পাখির মাংস ও ফলমূল খেয়ে।  তারা চাষাবাদ করতেও পারে না তারা বসবাস
করে ছোট কুড়ে ঘরে।

সেন্টিনেলিদের পোশাক

সেন্টিনেলিরা সভ্য সমাজ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে তাই তারা পোশাক হিসেবে গাছের
ছাল ও পশুর চামড়া ব্যবহার করে থাকে। ধারণা করা হয় আফ্রিকা মহাদেশ থেকে এই
দ্বীপে এসে তারা বসবাস করছে। সেন্টিনেলেরা তাদের দ্বীপে কাউকে প্রবেশের অনুমতি
দেয় না যতবারই কেউ এই সেন্টেনেল দ্বীপে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে ততবারই তারা
শিকার হয়েছে তাদের ভয়ংকর আক্রমণের।আর সেন্টিনেলিদের আক্রমণে অনেকে মৃত্যুবরণ
করেছে। তাই তাদের কাছে  পোশাক পৌঁছানোর মতো ক্ষমতা কারো হয়নি।

সেন্টিনেলিদের দ্বীপ কেন এত বিপদজনক

ধারণা করা হয় ৬০ হাজার বছর আগে সেন্টিনেলিদের  পূর্ব শূরীরা আফ্রিকা থেকে
এসে এই দ্বীপে বসবাস করতে শুরু করে। এটাই বিশ্বের আদিবাসীদের মধ্যে শেষ আদিবাসী
যাদের মধ্যে এখনো কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। ১৮৮০ সালে এই আদিবাসীদের সাথে
মানুষের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। আদিবাসীদের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের
জন্য ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ এমভি পোর্টেলের নেতৃত্বে একটি দল ওই দ্বীপে যায়।

এবং আদিবাসীদের ৪ জন  শিশুসহ একজন পৌর দম্পতিকে তুলে নিয়ে আসে। মূলত তাদের
নিয়ে আসা হয়েছিল তাদের নিয়ে গবেষণা করার জন্য। তাদের আনার পর তাদের খাবারও
নতুন পোশাক দেয়া হয় চেষ্টা করা হয় তাদের কথা বলানোর। কিন্তু তারা কথা বলেনি
বরং তাদের অপহরণ করে নিয়ে আসার পর দুইজন মৃত্যুবরণ করে। আর বাকি বাসিন্দাদের
কিছুদিন ধরে রাখা হয় কিন্তু তাদের থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুনঃরানী ভিক্টোরিয়া – ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে
নিন

তাই কোন তথ্য না পেয়ে কিছুদিন পর আবার তাদের সেন্টেনেলি দ্বীপে রেখে আসা হয়। আর
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেন্টেনেলিরা বাইরের এই সভ্য সমাজের প্রতি আরোক্ষিপ্ত হয়ে
ওঠে। ৭০ দশক থেকে ত্রিলোকনাথ পন্ডিত ও তার সহকর্মীরা এই রহস্যময় দ্বীপ ও
সেখানকার আদিবাসীদের নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

১৯৭৩ সালে টি এন পন্ডিত ও তার গবেষক দল আদিবাসীদের নিয়ে গবেষণা করতে সেন্টিনেল
দ্বীপে যান এবং আদিবাসীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। টিএন পন্ডিত তার গবেষনায়
বলেন,- “আদিবাসীদের জন্য আমরা অনেক নারকেল ও হাঁড়ি পাতিলসহ লোহার তৈরি যন্ত্রপাতি
নিয়ে গিয়েছিলাম এবং পাশের দ্বীপের আরেকটি গোত্র থেকে তিনজন সদস্যকেও আমাদের
সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম।

সেন্টিনেল দ্বীপের মানুষের ভাষা বোঝার জন্য কিন্তু সেন্টিনালিদের আদিবাসীরা
আমাদের মুখোমুখি হয় অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ ভাবে। তাদের হাতে তীর ধনুক ছিল বহিরাগতদের
হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য। তাদেরকে একটি হাত পা বাধা জীবন্ত  শুকুর
উপহার দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা সেটা বর্ষার সাথে বেঁধে মাটিতে পুঁতে
দিয়েছিল”।

আরো পড়ুনঃ জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তি – বঙ্গবন্ধুর আন্তর্জাতিক অর্জন সম্পর্কে জেনে নিন

১৯৫৬ সালের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রদান
করা হয়। আর এই আইন প্রণয়নের কারণে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মানুষের সাথে
সেন্টিনেলের দ্বীপের আদিবাসীরা ও সুরক্ষিত আছে। এই সেন্টেনাল দ্বীপে যেহেতু
লোকদের যাতায়াত নেই তাই এখানকার লোকদের রোগের সংক্রমণ অনেক কম।

তবে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম সাধারণ সর্দি জ্বর হলেও তাদের প্রাণের সংশয়
হয় বলে ধারণা করা হয়। ১৯৬৭ সাল থেকে ভারত সরকার এই সেন্টিনেল আদিবাসীদের সাথে
যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু আজও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এই
সেন্টিনেলিদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপের জন্য  তীরে বিভিন্ন উপহার
সামগ্রী যেমন খাবার – পোশাক ইত্যাদি রেখে আসা হতো কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি।

বরং দ্বীপের কাছে কোন লোক বা হেলিকপ্টার দেখলেই তীর ধনুক ছুঁড়তে শুরু করে। যতবার
এই দ্বীপে কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে ততবারই তাদের তীর বা বর্ষা আঘাতে প্রাণ
হারাতে হয়েছে। ২০০১ সালে দ্বীপটির ব্যাপারে ভারত সরকারের কাছ থেকে আরও তথ্য
নেওয়ার চেষ্টা করা হয় কিন্তু নিরাপত্তার কারণে আর বেশি দূর এগোনো যায়নি।

আরো পড়ুনঃ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ – হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে
নিন

বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা উত্তর সেন্টিনেল ও দক্ষিণ সেন্টিনেল কে
গুরুত্বপূর্ণ পাখি এলাকা ঘোষণা করা হয়। যদিও এই দ্বীপে পাখি আছে কিনা তা কেউ
জানে না। ১৯৯৭ সাল থেকে এই দ্বীপে সকল ধরনের পরিদর্শন বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০৬
সালে ২ জেলে এই দ্বীপে প্রবেশ করলে সেন্টিনেলরা তাদের হত্যা করে। আবার ২০১৮ সালে
জন এলেন চাউ নামক একজন ব্যক্তি অবৈধভাবে এই দ্বীপে প্রবেশ করলে তাকেও হত্যা
করে।

সেন্টেনাল দ্বীপ নিষিদ্ধ কেন

জন এলেন চাউ একজন আমেরিকা ধর্ম প্রচারক ছিলেন। সেন্টিনেলিরা তাকেও হত্যা করে। তবে
সেন্টিনেলরা প্রথমে মানুষ হত্যা করে মাটিতে পুঁতে দেয় এবং কিছুদিন পর তার কঙ্কাল
কবর থেকে বের করে আবার সমুদ্রের তীরে বাশের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে যাতে মানুষ
এই দ্বীপে প্রবেশ করতে ভয় পায়। 

এবং কেউ আর প্রবেশ করার সাহস না দেখায়। আর এই সব ঘটনার কারণেই ভারত সরকার এই
দ্বীপটিতে পর্যটন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং অন্যান্য বহি বিশ্বের সঙ্গে ও দ্বীপের সব
ধরনের যোগাযোগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাই এই দ্বীপকে নিষিদ্ধ দীপ বলা হয়।

সুনামির পরে তাদের অবস্থা

এই দ্বীপে সেন্ডিনেলরা প্রায় স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করছে। ২০০৪ সালে বঙ্গোপসাগরে
ভূমিকম্প হয় যার ফলে সুনামি হয় আর এই সুনামির পর ভারত সরকার তাদের ক্ষতির কথা
চিন্তা করে ত্রাণ পাঠিয়েছিলেন হেলিকপ্টারে করে। কিন্তু সেন্টিনেলরা তা গ্রহণ
করার পরিবর্তে আক্রমণ চালায়।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

সেন্টিনেলরা আক্রমণ চালায় ত্রাণ বাহী হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে। তবে কিছুদিন পর
হেলিকপ্টার করে দেখতে পাওয়া যায় যে সুনামির পরেও সেন্টেনেলরা ভালো আছে এবং
সুনামির ধকল তারা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে ধারণা করা হয় যে
সেন্টিলিনরায় পৃথিবীর একমাত্র অনিয়ন্ত্রিত মানুষ।

অ্যান্থ্রপলজিক্যাল দের ধারণা মতে সেন্টিনেল রা আদিবাসীরা অঙ্গ বা জায়রা ভাষায়
কথা বলে। তবে সবগুলো ধারণা মাত্র কারণ তাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করতে পারেনি।

শেষ বক্তব্য

সেন্টিনেল রা ভারত জলসীমার মধ্যে বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ সেন্টিমেল নামক এই
দ্বীপে বসবাস করে কিন্তু তারা এমন  বর্বর জাতি যাদের সঙ্গে কেউ কখনো যোগাযোগ
করতে পারছে না। তারা এখনো আফ্রিকান জাতির মতই অসভ্যতার সঙ্গে জীবন যাপন করছে।
তারা কাউকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মেনে নেয়নি। ভারত সরকার তাদেরকে সুরক্ষার সাথে
জীবন যাপন করার সুযোগ দিয়েছে।