বর্তমানে নগরায়ন এবং শিল্পায়নের যুগে পরিবেশ দূষণ একটি মারাত্মক আকার ধারণ
করেছে। আর এই পরিবেশকে মারাত্মক হুমকির হাত থেকে বাঁচাতে হলে পরিবেশ সচেতনতা –
রচনা সম্পর্কে জানা একান্ত প্রয়োজন। আবার বিভিন্ন পরীক্ষায় পরিবেশ সচেতনতা
– রচনা লিখতে আসে। তোমরা যারা পরীক্ষায় পরিবেশ সচেতনতা – রচনা লিখতে
চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।

প্রিয় শিক্ষার্থী আমি তোমাদের জন্য পরিবেশ সচেতনতা – রচনা এর মাধ্যমে
পরিবেশ সচেতনতা কি,পরিবেশ সচেতনতার উদ্দেশ্য,পরিবেশ সচেতনতার বৈশিষ্ট্য,পরিবেশ
সচেতনতার গুরুত্ব,পরিবেশ সচেতনতায় কবিদের মনোভাব ,পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য
করণীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। নিচে পরিবেশ সচেতনতা – রচনা সম্পর্কে
বিস্তারিত লিখা হলো-

পোস্ট সূচীপত্রঃ পরিবেশ সচেতনতা – রচনা 

ভূমিকা

পরিবেশ সচেতনতা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারণ এটি আমাদেরকে মানব ক্রিয়াকলাপের দ্বারা সৃষ্ট পৃথিবীতে প্রভাব সম্পর্কে
সচেতন করতে সাহায্য করে এবং উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করে। পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন
হলে পানি এবং বায়ুর মতো পূর্ণ বিকিরণযোগ্য সংস্থাগুলোকে প্রচার করে আরো টেকসই
বিশ্ব তৈরি করতে সক্ষম হবে। পরিবেশ সচেতনতা বলতে আসলে পরিবেশকে বিভিন্ন বিষয়
থেকে দূষিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো কে বোঝানো হয়।

পরিবেশ বা প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা পরিবেশ রক্ষার একটি মূল উদ্দেশ্য কারণ
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষ পরিবেশের উন্নয়নের নামে প্রতিনিয়ত পরিবেশের ক্ষতি
করে যাচ্ছে। আর আমরা বর্তমানে এমন এক প্রেক্ষাপটে এসে দাঁড়িয়েছি যে পরিবেশ
সচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারলে আমরা এই বিশ্বে টিকেই থাকতে পারবো না।

  • “হুমকির মুখে উদ্ভিদ কুল 
  • উজাড় বনভূমি 
  • উষ্ণ হচ্ছে পরিবেশ 
  • নষ্ট হচ্ছে জমি”।

পরিবেশ সচেতনতা কি

আমাদের চারপাশে ঘরবাড়ি, গাছপালা, মানুষ প্রভৃতি মিলে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে
তাকে বলা হয় পরিবেশ। আর এই পরিবেশের রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ থেকে
রক্ষা করাকে বলা হয় পরিবেশ সচেতনতা। পরিবেশ সচেতনতাকে জীবন্ত স্থানের প্রতি
শ্রদ্ধাশীল মনোভাব হিসেবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে। মানুষ, জীবন্ত জিনিস, গাছপালা
এবং প্রকৃতির সাথে ভাগ করে নেয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরতা এবং
প্রাকৃতিক সচেতনতা তৈরির জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয় করে তোলে।

আরো পড়ুনঃ  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা 

বর্তমানে প্রাণী সম্পদের দ্রুত হ্রাস, বনাঞ্চল হ্রাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে, ঘন
ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয় সবকিছুই প্রয়োজনীয়তার সবচেয়ে বড় কারণগুলোর মধ্যে একটি।
প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মানুষের অস্তিতের সঙ্গে পরিবেশ অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত।
এক কথায় পরিবেশ সচেতনতা বলতে বোঝায় পরিবেশের উন্নতি সাধন এবং তাকে কলুষ মুক্ত
রাখার সদিচ্ছা আর একে বলা হয় পরিবেশ সচেতনতা। অথবা পরিবেশকে নির্মল রাখার জন্য
মানুষের যে ইতিবাচক মানসিকতা তাকেই বলা হয় পরিবেশ সচেতনতা।

পরিবেশ সচেতনতার উদ্দেশ্য

সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ মানব সভ্যতার জন্ম লগ্ন থেকেই বর্তমান সময়
পর্যন্ত মানুষ বেঁচে থাকার সকল উপাদানের জন্য পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশের
সাহায্য ছাড়া মানব সভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। প্রকৃতি আমাদের জীবনে
কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা আমাদের চারপাশে তাকালে সেটা বুঝতে পারি।
শিক্ষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবেশ হল ব্যক্তির চারপাশে অবস্থিত সেই সকল
উপাদান, প্রতিষ্ঠান, ঘটনা, মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণীর সমাবেশ।

আরো পড়ুনঃ  মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা ২০-৩০ পয়েন্ট সম্পর্কে জেনে নিন

যা কোন না কোন ভাবে ব্যক্তিকে উদ্দীপ্ত বা প্রবাহিত করে এবং যার দ্বারা ব্যক্তি
সত্তার বিকাশ নির্ধারিত হয়। আধুনিক যুগের মানুষ উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক
পরিবেশকে নষ্ট করছে। শিল্প বিপ্লবের নামে দূষিত হচ্ছে ভূমি, পানি এবং বায়ু। আর
সেইসাথে সমুদ্রের পানিতে মিশে যাচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। আবার অন্যদিকে
বাতাসে নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাসের বাস্প। আর এই সব কিছু থেকে পরিবেশকে রক্ষা
করতে হলে পরিবেশ সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। আর তাই তো বলা হয়-

  • “না থাকলে গাছগাছালি 
  • যতটুকু কাম্য 
  • প্রকৃতি হারিয়ে ফেলে 
  • নিজেরই ভারসাম্য”।

পরিবেশ সচেতনতার বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ আর এই উন্নয়নশীল দেশকে দূষিত মুক্ত করতে হলে
পরিবেশ সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। মানুষ পরিবেশকে যাচ্ছেতাই ভাবে ব্যবহার করে।
মানুষ সমাজ ও সভ্যতাকে উন্নত করার প্রচেষ্টা করছে এবং উন্নত করার নামে পরিবেশকে
সুরক্ষিত রাখার নামে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর এই জন্য পরিবেশ
সচেতনতার কিছু বৈশিষ্ট্য জানা একান্ত প্রয়োজন। যেমন-

  • পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য মানুষকে সচেতন করতে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে
    আসতে হবে।
  • মানুষের মধ্যে প্রকৃতির প্রেমের জাগরণ ঘটাতে হবে।
  • পরিবেশের অবক্ষয় বন্ধ করা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।
  • মানুষকে পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
  • প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের জন্য কতটা প্রয়োজন সে সম্পর্কে মানুষকে বিশেষভাবে
    সচেতন করতে হবে।
  • প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবেলা করা ও বিপর্যয় প্রতিরোধ করার কৌশল মানুষকে
    আয়ত্ত করতে হবে।
  • পরিবেশ শিক্ষার মধ্য দিয়ে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক পরিবেশকে উন্নত
    করতে হবে।
  • পরিবেশ সচেতনতার শিক্ষায় মানুষকে মূল্যবোধে জাগ্রত হতে হবে।

পরিবেশ সচেতনতার গুরুত্ব

মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশ সচেতনতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষ
যদি পরিবেশ সচেতনতার গুরুত্ব বুঝতে না পারে তাহলে সে কখনোই সুস্থভাবে এই পৃথিবীতে
বেঁচে থাকতে পারবে না। যানবাহনের নির্গত ধোঁয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড, সিসা,
কার্বন মনোক্সাইড, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবেশকে
মাদাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

মানুষ প্রতিনিয়ত বিষাক্ত বায়ুর ওপরে নিশ্বাস নিতে বাধ্য হচ্ছে। আর এভাবেই
মানুষের শরীরের ভিতরে দানা বাধছে বিভিন্ন প্রকার রোগ। ক্রমশ বেড়েই চলেছে হৃদরোগ,
ফুসফুসের রোগ, চর্মরোগ, অ্যালঝেইমার, ক্যান্সার এর মত মারাত্মক সব রোগ। আর এই
বিষাক্ত পরিবেশের হাত থেকে বাঁচতে জাতিসংঘ প্রতিবছর পাঁচ ৫ ই জুন বিশ্ব পরিবেশ
দিবস পালন করে।

আরো পড়ুনঃ  মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রথমত বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলো পালন করলে ও পৃথিবীর এই
ভয়াবহ অবস্থার কথা চিন্তা করে বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই বিশ্ব পরিবেশ
দিবস পালন করে আসছে। পৃথিবীকে অবাধ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে পরিবেশ
সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

  • “আমরা হলাম মানব জাতির সৃষ্টির মাঝে সেরা
  • জগত ছিল আদি থেকে অরণ্যেতে ঘেরা।
  • আমাদের এই বসুমতি সৃষ্টিকর্তার দান
  • আলো, বায়ু, বিশুদ্ধ জল বাছাই সবার প্রাণ”।

পরিবেশ সচেতনতায় কবিদের মনোভাব 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল, জীবনানন্দ দাশ, কীটস, শেলী,
ওয়ার্ডসওয়ার্থ,হুহট ম্যান, রবার্ট সহ অনেক কবিতাদের কবিতায় পরিবেশ সচেতনতা
এবং প্রকৃতি ধ্বংসের প্রতি সহমর্মিতা বোধ এসেছে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তাঁর রচিত “মুক্তধারা” নাটকে আধুনিক যন্ত্র দানবের কথা পরিষ্কার ভাবে তুলে
ধরেছেন। মানুষ কিভাবে বাঁধ নির্মাণ করে প্রকৃতির জলধারাকে বাগে এনে প্রকৃতির
উপর অবিচার করে এতে তার প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি বলেছেন –

“ফিরে চল, ফিরে চল, ফিরে চল মাটির টানে,

যে মাটি আঁচল পেতে চেয়ে আছে মুখের পানে”।

আর তাই কবি প্রকৃতির প্রতি সচেতন হয়ে বৃক্ষরোপণ নামে গাছ লাগানোর জন্য একটি
উৎসবের সূচনা করেছিলেন। এছাড়াও তিনি হলকর্ষণ নামে রচনা করেছিলেন একটি
গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ এবং সেখানে তিনি লিখেছিলেন “পৃথিবী একদিন যখন সমুদ্র
স্নানের পর জীবন ধাত্রী রূপ ধারণ করল, তখন তার প্রথম যে প্রাণের অতিথি ক্ষেত্রে
সে ছিল অরণ্যে”। কবি তার “তপবন” প্রবন্ধে বেদনার সঙ্গে আরো বলেন, “এক সময়
মানুষ আর গাছপালা একে অপরের সঙ্গে জড়াজড়ি করে থাকতো, তা ধীরে ধীরে হারিয়ে
গেছে”।

পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য করণীয়

পরিবেশ দূষণ মানব জাতির জন্য একটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।  তাই
নিজেদের স্বার্থে পরিবেশ সচেতনতা সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। কারণ আমরা যেন
আরো সম্মানজনক এবং সচেতন উপায়ে আমাদের পরিবেশের মাধ্যমে আমরা একটি সবুজ
পরিষ্কার এবং আরো বাসযোগ্য পৃথিবী পেতে পারি। আর এর জন্য আমরা যে কাজগুলো করতে
পারি তা হল-

আরো পড়ুনঃ  প্লাস্টিক দূষণ – অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জেনে নিন

  • আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।
  • বাসস্থানে অপ্রয়োজনীয় শক্তি ব্যয় হ্রাস করতে হবে।
  • অপ্রয়োজনীয় খরচ এবং বর্জ্য এড়াতে হবে।
  • পুনর্ন করনযোগ্য সম্পদের দিকে মনোননিবেশ করতে হবে।
  • গৃহস্থালির বর্জ্য হ্রাস করতে হবে।
  • কার্বন ফুট প্রিন্ট হ্রাস করে এমন স্বতন্ত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর বাড়তি ট্যাক্স বসাতে হবে।
  • পরিবেশ দূষণ রোধ করে এমন সিএনজি জ্বালানির ব্যবহার বেশি করতে হবে।
  • মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহন নিষিদ্ধ করতে হবে।
  • শহর এবং জনবসতির কাছাকাছি কোন কলকারখানা গড়ে তোলা যাবে না।
  • অপরিকল্পিতভাবে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় সেই সম্পর্কে
    কৃষকদের সচেতন করতে হবে।
  • অতিরিক্ত কয়লা ব্যবহার হ্রাস করে বায়ুমণ্ডলের দূষণ রোধ করতে হবে।
  • যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোয়া বন্ধ করতে পুরনো ইঞ্জিন চালিত গাড়ি
    চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।

উপসংহার

পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হলে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশ
সচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারলে এক সময় তা মানুষকে হুমকির মুখে ফেলে দিবে।
পরিবেশ সচেতনতা রক্ষায় সমাজের সকল শ্রেণী পেশার লোককে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ
পরিবেশ সচেতনতা, পরিবেশ, ভাবনা কে নতুন ভাবে আবিষ্কার করার তাগিদ যোগায়।
আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ, বীজ,সার ইত্যাদির ব্যবহার সংবলিত কৃষিকাজ বৃদ্ধি
করতে হবে।

পরিশেষে পরিবেশে আসলো নেমে কি দুর্যোগ,

নব্যযুগে মরছে ভুগে মানুষ প্রাণী কি দুর্ভোগ।

নাইরে সীমা পরিক্রমার বর্ষবরণ সমাপ্ত,

আমরা জানি অনেক প্রাণী যত্নাভাবে বিলুপ্ত।