জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত প্রাণীর লালার সাথে জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাস থাকে। তাই আমাদের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা একান্ত প্রয়োজন। আমরা যদি জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে না জানি তাহলে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারব না। তাই জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানাতে আমার পোস্টে আপনাদের জন্য।
জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত প্রাণী কামড়ালে সাধারণত এই রোগের লক্ষণ ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে প্রকাশ পায়। কখনো কখনো তা এক সপ্তাহের মধ্যেও প্রকাশ পেতে পারে। আবার কখনো এক বছর পরেও প্রকাশ পেতে পারে। তাই কোন প্রাণী কামড়ালে অবহেলা না করে অবশ্যই টিকা নিবেন। নিচে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
জলাতঙ্ক কি
জল বা পানি খাওয়া নিয়ে যে আতঙ্ক তাকে বলা হয় জলাতঙ্ক।জলাতঙ্ক হলো ভাইরাস ঘটিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ যা একটি সংক্রামিত প্রাণীর লালার ভাইরাস থেকে ছড়ায়। জলাতঙ্ক রোগ কে ইংরেজিতে Rabies বলা হয়ে থাকে। এই রোগটি সাধারণত রেবিস ভাইরাস নামক এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাস এর মাধ্যমে ছড়ায় এবং গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণীদের প্রথমে সংক্রামিত করে থাকে। আর এই প্রাণীগুলো যদি মানুষকে কামড়ায় বা আঁচড় দেয় তাহলে সংক্রামিত প্রাণী গুলোর লালা সংস্পর্শে আসলে মানুষ আক্রান্ত হয়।
এবং পরবর্তীতে মানুষ জলাতঙ্ক রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত প্রাণীটি যদি মানুষকে কামড় দেয় এবং যদি কোন খোলা ক্ষতের সংস্পর্শে মুখের লালা লেগে যায় তাহলে মানুষ জলাতঙ্ক রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়। এবং সুস্থ মানুষের শরীরে ভাইরাসটি বাসা বাঁধে এবং স্নায়ুতন্ত্র কে আক্রমণ করে যার ফলে মানুষ জলাতঙ্ক রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তবে ভাইরাস সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণীকেই আক্রান্ত করে থাকে। আর যেসব প্রাণী জলাতঙ্ক ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাদেরকে রেবিস এনিমেল বলা হয়।
আরো পড়ুনঃ এলার্জি কত ধরনের – এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় জানুন
জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যখন ঢোক গেলে তখন ঢোক গেলার সময় ডায়াফ্রাম মাসল ও কণ্ঠনালী তীব্র ব্যথা যুক্ত ও সংকোচন হয়। বিশেষ করে যখন আক্রান্ত ব্যক্তি পানি পান করার চেষ্টা করে তখন ডায়াফ্রাম ও অন্যান্য ইন্সপিরেটোরি মাসলের তীব্র সংকোচন ও ব্যথা হয় যার কারণে রোগীর মধ্যে হাইড্রোফোবিয়া তৈরি হয়।আর একজন ব্যক্তির এই অবস্থাকে জলাতঙ্ক আক্রান্ত রোগী বলে অভিহিত করা হয়।
তবে জলাতঙ্ক রোগ সাধারণত মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডকে প্রভাবিত করে থাকে। জলাতঙ্ক রোগের প্রকোপ এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে এন্টারটিকা মহাদেশে জলাতঙ্ক রোগ নেই। আর জলাতঙ্ক রোগের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ২৪ থেকে ৬০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। কোন কোন সমীক্ষা মতে বছরে বিশ্বে প্রায় ৫৫ হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে।
জলাতঙ্ক রোগের কারণ
জলাতঙ্ক রোগ হলো ভাইরাস জনিত একটি রোগ। আর যখন কোন প্রাণী নিউরোট্রপিক ভাইরাস এর মাধ্যমে ছড়ায় এবং গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণীদের প্রথমে সংক্রামিত করে থাকে। আর সংক্রামিত প্রাণী যখন মানুষকে কামড় দেয় তখন প্রাণীর লালার মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গৃহপালিত প্রাণী যেমন- কুকুর, ঘোড়া, গরু, ছাগল, খরগোশ এবং অন্যান্য
বন্য প্রাণী যেমন – কাঠবিড়ালি, বাদুর, কোয়োটস, শিয়াল এবং হায়েনা যদি জলাতঙ্ক রোগের মাধ্যমে আক্রান্ত হয় তাহলে তাদের কামড় বা আঁচড়ের কারণে যদি লালা লেগে যায় তাহলে মানুষও জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়। তবে মান সবচেয়ে বেশি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয় কুকুরের কামড়ের কারণে
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
জলাতঙ্ক রোগ এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাস এর মাধ্যমে ছড়ায় এবং গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণীদের প্রথমে সংক্রামিত করে থাকে। এবং এই জলাতঙ্ক রোগ সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সংক্রমণ করে থাকে। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের মধ্যে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তা হল –
- জলাতঙ্ক আক্রান্ত ব্যক্তি পানি দেখলে ভয় পায়।
- মানুষের মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডকে প্রভাবিত করে।
- আক্রান্ত ব্যক্তি আলো সহ্য করতে না পারা।
- আক্রান্ত ব্যক্তির নানা ধরনের যন্ত্রণা হতে পারে।
- জলাতঙ্ক আক্রান্ত ব্যক্তির পেশী মোচড়ানো বা স্পাজম হতে পারে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির লালা ঝরে বা হাইপার ভেন্টিলেশন হয়।
- মাথা ফুলে যেতে পারে।
- শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে পারে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির তড়কা সমস্যা হতে পারে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর আসতে পারে।
- ক্ষুধা মন্দা হওয়া বা কমে যাওয়া।
- ক্ষতস্থান ব্যথা এবং চুলকানি।
- কনফিউশন ও অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা।
- লালা রসের ক্ষরণ বৃদ্ধি হতে পারে।
- কোলাহহলে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে।
- রোগী ডিভিউশন, হ্যালুসিনেশন ও পাগলামি করে।
- রোগী নড়াচড়া করতে অক্ষময হয়ে যায়।
- রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ইত্যাদি।
আক্রান্ত জীব জন্তু মানুষকে কামড় দেয়ার পরেও রোগের জীবাণু মানুষের শরীরের তিন মাস সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।আক্রান্ত রোগীর মধ্যে যদি কোন উপসর্গ দেখা দেয় বা লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। অনেক সময় চিকিৎসা দেয়ার পরেও রোগীর মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর জলাতঙ্ক রোগের উপসর্গ যদি কোন রোগীর শরীরে দেখা দেয় তাহলে লক্ষণ দেখা দেওয়ার দুই ২ থেকে ১০ দিনের মধ্যে রোগী মারা যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কিডনি রোগের লক্ষণ – প্রতিকার জেনে নিন
এছাড়া জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যখন ঢোক গেলে তখন ঢোক গেলার সময় ডায়াফ্রাম মাসল ও কণ্ঠনালী তীব্র ব্যথা যুক্ত ও সংকোচন হয়। বিশেষ করে যখন আক্রান্ত ব্যক্তি পানি পান করার চেষ্টা করে তখন ডায়াফ্রাম ও অন্যান্য ইন্সপিরেটোরি মাসলের তীব্র সংকোচন ও ব্যথা হয় যার কারণে রোগীর মধ্যে হাইড্রোফোবিয়া তৈরি হয়।আর একজন ব্যক্তির এই অবস্থাকে জলাতঙ্ক আক্রান্ত রোগী বলে অভিহিত করা হয়।
জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার
বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জন্তু নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভ্যাকসিন দিয়ে কুকুর থেকে যে জলাতঙ্ক ছড়ায় তা কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। তবে যে সব এলাকার মানুষ জলাতঙ্ক ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে তাদেরকে আগেই জ্বলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক দেয়া যেতে পারে। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কুকুর বা কোন প্রাণী যদি কামড় বা আঁচড় দেয় তাহলে আক্রান্ত জায়গাটি কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধরে সাবান এবং পানি অথবা ভায়োডিন অথবা
পরিষ্কারক কিছু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হবে।এতে কিছুটা হলেও রোগ ছড়ানো বাধা প্রাপ্ত হবে। জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পূর্বে আক্রান্ত মানুষ মারা যেত। তবে প্রথম ভ্যাকসিন তৈরি হয় সংক্রমিত খরগোশের স্নায়ুতন্ত্র থেকে। ভাইরাসকে খরগোশের স্নায়ুতন্ত্র থেকে পৃথক করার পর ৬ থেকে ১0 দিন রোদে শুকাতে হয় কারণ যাতে করে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়ে।
আর এই ধরনের স্নায়ুতন্ত্র থেকে তৈরিকৃত ভ্যাকসিন এখনো বেশি ব্যবহার করা হয়।কারণ এই ভ্যাকসিনটি তুলনামূলক সস্তা। তবে পরীক্ষাগারে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে যে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে তার দাম অনেক বেশি। তাই জলাতঙ্ক রোগের প্রতিরোধ হিসেবে যে কাজগুলো করা যায় তা হল –
- গৃহ পালিত পশু যেমন – কুকুর, বিড়াল, নুকুল জাতীয় জন্তুকে ভ্যাকসিন দেয়া।
- গৃহপালিত পশুকে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা।
- গৃহপালিত জন্তু কিংবা বন্য জন্তুকে হাত দিয়ে স্পর্শ না করা।
- যদি শরীরের কোন অংশে প্রাণী কামড় দেয় তবে শরীরের সেই অংশটুকু সাবানও পানি দিয়ে ১0 থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত ধুয়ে ফেলা।
- তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
- গৃহ পালিত পশু গুলোকে তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে।
তবে মনে রাখবেন, কুকুর বা কোন প্রাণী কামড় দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। কারণ গ্রামে কোন একটি কুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়েও লাভ নেই। এশিয়া মহাদেশে কুকুর হলো জলাতঙ্ক রোগের প্রধান ধারক এবং বাহক। তবে গ্রামের কুকুর কে বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিন দিলেও তেমন কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায় না। তবে উন্নত বিশ্বে গৃহপালিত জন্তু হিসাবে যে কুকুরগুলো লালন পালন করা হয় তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দিলে কার্যকর ভূমিকা পাওয়া যায়।
জলাতঙ্ক হলে করণীয়
জলাতঙ্ক হলে টিকা নিতে হবে। টিকার দাম সাধারণত ৯০০ টাকা। তবে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে চার ৪ দফায় হাসপাতালে গিয়ে টিকা নিতে হবে। হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন হলো জলাতঙ্ক রোগের সবচেয়ে নিরাপদ ভ্যাকসিন “HDCV”। জলাতঙ্ক রোগের উল্লেখযোগ্য যে সকল টিকা রয়েছে সেগুলো হল – নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন, ডাক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন,পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন ইত্যাদি।
জলাতঙ্ক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে যে টিকা নেওয়া হয় তাকে বলা হয় প্রি- এক্সপোজার প্রোফাই ল্যাটিক্স। এবং জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে যে টিকা নেওয়া হয় তাকে বলা হয় পোস্ট এক্সপোজার প্রোফাই ল্যাটিক্স।
কুকুরের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ
জলাতঙ্ক রোগ সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণীতে সংক্রমণ করে থাকে। আর জলাতঙ্ক রোগ সংক্রমণ করলে এর তিনটি স্তর চিহ্নিত করা যায়। এগুলো হলো –
প্রথম স্তর – এক থেকে তিন দিনের সময়কাল এই স্তরে আচার ব্যবহারে পরিবর্তন দেখা দেয় এবং এই স্তরকে রোগের পূর্ব লক্ষণ এর স্তর বলা হয়।
দ্বিতীয় স্তর – এই স্তর সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই স্তরকে উত্তেজনার স্তর বলা হয় কারণ এই স্তরে সংক্রামিত ব্যক্তি বা প্রাণী বহিঃ উত্তেজকের প্রতি অত্যধিক সংবেদনশীল হয় এবং যাকে পায় তাকে কামড়ানোর চেষ্টা করে।
আরো পড়ুনঃ বাত জ্বর কাকে বলে – বাত জ্বরের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিন
তৃতীয় স্তর – এই ইস্তর পাঁচ দিনের পর থেকে এক মাস কখনো কখনো তিন মাস পরেও দেখা দিতে পারে। এই স্তর হল পক্ষঘাতগ্রস্ত স্তর এবং এটি গতিজনক স্নায়ু তন্ত্র ধ্বংস হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। আর আক্রান্ত ব্যক্তি এই পর্যায়ে পৌঁছে গেলে মাংস বেশী পক্ষঘাত গ্রস্ততার কারণে মুখের কোনা দিয়ে লালা পড়ে এবং গলাদ করন করা বা কোন কিছু গেলা কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় আক্রান্ত প্রাণীর সাধারণত শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রাণী মারা যায়।
কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয়
কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগ হবে সেটা নির্ভর করবে আপনার শরীরের ইমিউনিটির ওপর। তবে অধিকাংশ সময় জলাতঙ্ক রোগের জীবাণু আপনার শরীরের সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। আর এই জীবাণু কখনো কখনো দশ ১০ দিনের কম সময়েও প্রকাশ পেতে পারে আবার এর বেশি সময়ও লাগতে পারে। কখনো কখনো ছয় ৬ মাস পরেও এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। আবার এক বছর পরেও এই রোগে লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
আবার যদি কুকুর কোন সুস্থ মানুষকে কামড় দেয় সে ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে দুই ২ থেকে তিন ৩ মাস সময় লেগে যেতে পারে। আবার কখনো এক সপ্তাহ থেকে এক ১ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
জলাতঙ্ক রোগের টিকার মেয়াদ
জলাতঙ্ক রোগের টিকার মেয়াদ সাধারণত ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে জানতে হবে কোন টিকা নেওয়া হচ্ছে এবং কোন অবস্থায় টিকা নেওয়া হচ্ছে। আর তার পরেই নির্ভর করে টিকার মেয়াদ। ১৮৮৫ সালে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর জলাতঙ্ক রোগের টিকা আবিষ্কার করেন এবং ১৮৮৫ সালে এই রোগের টিকা প্রথম ব্যবহার করা হয়।
বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর যে টিকা আবিষ্কার করেন তার নাম হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন। ১৯৮৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জলাতঙ্কের রোগের এই টিকা ১০০ ভাগ কার্যকারী এবং নিরাপদ। তবে জলাতঙ্ক রোগের দুই ধরনের টিকা রয়েছে। এর মধ্যে এক ধরনের টিকা শুধু চামড়ায় দিতে হয় এবং অন্য টিকা দিতে হয় মাংসপেশিতে। জলাতঙ্ক রোগের চামড়ায় যে টিকা দেওয়া হয় সেটি বেশি কার্যকর এবং এতে খরচও কম। তবে জনবলের অভাবের কারণে মাংসপেশির টিকায় বেশি প্রচলিত রয়েছে।
আরো পড়ুনঃভিটামিন ই ক্যাপসুল কি – ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম জানুন
পশু কামড়ানোর অন্তত ২৪ ঘন্টার মধ্যে টিকা নেওয়া উচিত। টিকা নেওয়ার নিয়ম হলো পশু কামড়ানোর দিনে দুই ২ বাহুতে দুটি টিকা এবং ৭ ও ২১তম দিনে একটি করে টিকা নিতে হবে। কোন কারণে যদি ইমিউনোগ্লোরবিন পাওয়ার না যায় তাহলে পশু কামড়ানোর প্রথম দিন দুই বাহুতে দুইটি টিকা নিতে হবে এবং ৩,৭,১৪ ও ২৮ তম দিন টিকা নিয়ে ডোজ পূর্ণ করতে হবে।
আবার অনেক সময় গৃহপালিত পশু কামড় দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে যদি গৃহপালিত পশু কামড় দেয় তাহলে প্রথম দিন টিকা নিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে পরবর্তী ১০ দিন পশু সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে কিনা। যদি পশু সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে তাহলে চৌদ্দ ১৪ ও ২৮ তম দিনে টিকা না নিলেও সমস্যা হবে না। আবার অনেকে মনে করেন অন্তঃসত্ত্বা নারীর টিকা নিতে পারবেন না। কিন্তু আপনাদের এই ধারণা ভুল অন্তঃসত্ত্বা নারী, স্তন্যদান কারী নারী, নবজাতক শিশু, অতি বয়স্ক ব্যক্তি সবাই এই টীকা নিতে পারবেন।
জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা
জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে যদি লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগী বা প্রাণী মারা যায় তবে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে এই রোগের টিকা নিতে হয়।টিকার দাম সাধারণত ৯০০ টাকা। তবে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে চার ৪ দফায় হাসপাতালে গিয়ে টিকা নিতে হবে। হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন হলো জলাতঙ্ক রোগের সবচেয়ে নিরাপদ ভ্যাকসিন “HDCV”।
জলাতঙ্ক রোগের উল্লেখযোগ্য যে সকল টিকা রয়েছে সেগুলো হল – নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন, ডাক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন,পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন ইত্যাদি।জলাতঙ্ক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে যে টিকা নেওয়া হয় তাকে বলা হয় প্রি- এক্সপোজার প্রোফাই ল্যাটিক্স। এবং জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে যে টিকা নেওয়া হয় তাকে বলা হয় পোস্ট এক্সপোজার প্রোফাই ল্যাটিক্স।
মনে রাখবেন, জলাতঙ্ক রোগের ক্ষেত্রে কোন এন্টিভাইরাল ঔষধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেনা। তবে উপশমূলক চিকিৎসা প্রদান করা যেতে পারে। বর্তমানে এই রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে তবে যদি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কোনো প্রাণী কামড় দেয় তাহলে তাৎক্ষণিক এই টিকা নিলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে লক্ষণ প্রকাশ পেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণী মারা যায়।
শেষ কথা
জলাতঙ্ক রোগ ভাইরাস জনিত কিন্তু এটি ছোয়াচে নয়। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি অন্য কাউকে আঁচড় বা কামড় দেয় তাহলে তার মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ ছড়াতে পারে। আমাদের দেশে জলাতঙ্ক রোগ হয় শতকরা ৯৫ শতাংশ কুকুরের কামড়ে। তাই যদি কখনো কুকুর কামড় দেয় তাহলে অবহেলা না করে সাথে সাথে ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত।
Leave a comment