বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। আমরা যদি বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে না জানি তাহলে এই দিনের মর্মার্থ আমরা বুঝতে পারবো না এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেও বুঝাতে পারবো না। তাই আমি বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ইউনিসেফ ১৯০ টি দেশের শিশুদের নিরাপত্তা এবং মৌলিক চাহিদা নিয়ে কাজ করছে। আর ইউনিসেফ এর মতে, ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়ায় সবচেয়ে বেশি শিশুরা আক্রান্ত হয়। তাই বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – কবে তা আমাদের শিশুদের ভালোভাবে জানানো উচিত। নিচে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস
১৫ অক্টোবর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস। ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর সুইডেনের স্টোকহোমে সর্বপ্রথম এই হাত ধোয়া দিবস পালন করা হয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৫ই অক্টোবরকে প্রতিবছর জাতীয় হাত ধোয়া দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে হাত ধোয়া দিবস টি পালিত হচ্ছে।হাত ধোয়া দিবস টি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো হাতের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের যে বিস্তার হয় সেই বিশেষ সচেতনতা তৈরি করা।
প্রতিদিন সাবান এবং নিরাপদ পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং তা অভ্যাসে পরিণত করা হাত ধোয়া দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি এবং সবাইকে হাত ধোয়ার অভ্যাসে উদ্বুদ্ধ করনের জন্য এই দিবসের প্রচারণা চালানো হয়। ইউনিসেফ এর মতে, সারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শিশু মৃত্যু হয় নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে। আর যদি শিশুদের সঠিকভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যায় তাহলে একটি বড় অংশকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
হাত ধোয়া দিবসের ইতিহাস
২০০৮ সালের ১৫ই অক্টোবর সুইডেনের স্টোকহোমে হাত ধোয়া অংশীদার জিএইচপি (GHP) বিশ্বব্যাপী আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই সর্বপ্রথম এই দিবস টি উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রতিবছর ১৫ ই অক্টোবরকে জাতীয় হাত ধোয়া দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর ২০০৮ সাল ছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক বর্ষ।
যার কারণে ২০০৮ সালের ১৫ই অক্টোবরকে জাতীয় হাত ধোয়া দিবস হিসেবে নির্বাচন করা হয়। আর ২০০৮ সালে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালনের প্রতিষ্ঠাতা সংস্থাগুলি হলো – আমেরিকা ভিত্তিক একটি অলাভজনক মানব উন্নয়ন সংস্থা, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকেন্দ্র,প্র্যাক্টার এন্ড গ্যাম্বল, ইউনিসেফ, ইউনিলিভার, বিশ্ব ব্যাংকের পানি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা।
সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বৈশ্বিক এবং স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করার জন্য বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালন করা হয়। তবে পূর্বে এর নাম ছিল অর্থাৎ ২০০৮ সালের পূর্বে এই দিবসের নাম ছিল ” হাত ধোয়ার জন্য সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব”। ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস হিসেবে নামকরণ করা হয়। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে জেনে নিন।
বাংলাদেশে হাত ধোয়া দিবস পালন
বাংলাদেশে হাত ধোয়া দিবস পালিত হয় ২০০৯ সালের ১৫ ই অক্টোবর থেকে। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন রেলি এবং প্লেকার্ড তৈরির মাধ্যমে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও এই দিবসটি যথাযথভাবে পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে জেনে নিন।
হাত ধোয়ার নিয়ম / ধাপ কয়টি ও কি কি
সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাত ধোয়া হয়। আর সঠিক উপায়ে হাত ধুতে না পারলে জীবাণু মুক্ত করা সম্ভব হয় না। তাই সঠিক উপায়ে হাত জীবানু মুক্ত করতে হলে হাত ধোয়ার পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। যেমন –
- পরিষ্কার এবং নিরাপদ পানি দিয়ে প্রথমে হাত ভিজিয়ে নিন এরপর হাতে ভালোভাবে সাবান লাগান।
- সাবান দিয়ে ঘষে আপনার হাতে সাবানের ফেনা তৈরি করুন।
- অন্তত ২0 সেকেন্ড ধরে আপনার দুই হাত পরস্পরের সঙ্গে ঘোষুণ।
- পরিষ্কার পানি দিয়ে আপনার হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- একটি পরিষ্কার শুকনা কাপড় দিয়ে হাত মুছে ফেলুন।
সাবানের অনুগুলি পিন আকৃতিতে একটি প্রান্তে থাকে যা পানির সাথে হাইড্রোফিলিকমাথা এবং অন্যপ্রান্তে তেল এবং চর্বি হাইড্রোফোবিকস এর সাথে সম্পর্ক থাকে। যখন সাবান এবং পানি দিয়ে ফেনা তৈরি করা হয় তখন অনু গুলি ত্বক থেকে ময়লা, তেল এবং জীবাণু তুলতে সাহায্য করে থাকে। তাই পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে সাবান ব্যবহার করা হয়। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে জেনে নিন।
হাত ধোয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
শিশুরা আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ। আর হাত না ধোয়ার কারণে আমাদের দেশের শিশুরা বিভিন্ন রকম সংক্রামক রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। আর ইউনিসেফ এর মতে, ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়ায় সবচেয়ে বেশি শিশুরা আক্রান্ত হয়। তাই হাত ধোয়া দিবসের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। এছাড়াও বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের যে লক্ষ্য এবং মূল উদ্দেশ্য রয়েছে তা হল –
- সাবান এবং নিরাপদ পানি দিয়ে হাত ধোয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা
- সকল সমাজে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার একটি সাধারণ সংস্কৃতির সমর্থনও প্রচলন করা
- প্রতিটি দেশে হাত ধোয়ার বিষয়ে নজর দেয়া। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে জেনে নিন।
হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা
আমাদের হাতের মাধ্যমেই বিভিন্ন জীবাণু আমাদের পেটে প্রবেশ করে কারন আমরা হাত দিয়ে খাবার খায়। তাই হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুলে ডায়রিয়া এবং করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি রোধ করতে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই করোনাভাইরাস এবং ডায়রিয়ার মত রোগের পাদুর্ভাব কমাতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাত ধোয়া কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। হাত ধোয়া দিবসের প্রধান মূল লক্ষ্য হচ্ছে –
বিশ্বের প্রতিটি সমাজে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া একটি সংস্কৃতি সমর্থন এবং এটি একটি সাধারন সংস্কৃতির প্রচলন হিসেবে তৈরি করা বা নজর দেওয়া। এছাড়া ও ভালোভাবে হাত ধোয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা কারণ আমরা হাত দিয়ে ক্রমাগত মুখ, নাক, চোখ স্পর্শ করে থাকি। আর হাত যদি অপরিষ্কার থাকে তাহলে স্পর্শের মাধ্যমে দেহের ভিতর বিভিন্ন জীবাণু ঢুকে যেতে পারে।
তাই সবসময় পরিষ্কার পানি এবং সাবান দিয়ে হাত ধুলে বিভিন্ন রোগের সংক্রমনের আশঙ্কা সহ নানা ধরনের রোগ ব্যাধি কমিয়ে আনা সম্ভব। স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যদি সঠিকভাবে সাবান এবং নিরাপদ পানি দিয়ে হাত ধোঁয়া যায় তাহলে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস এবং কৃমি সহ প্রায় ২0 ধরনের বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই ভালোভাবে হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
হাত ধোয়া সময় পানির তাপমাত্রা কত হওয়া উচিত
হাত ধোয়ার সময় আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে পানির তাপমাত্রা কত হওয়া উচিত বা পানি ঠান্ডা হওয়া উচিত না গরম হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনাদের জেনে রাখা দরকার যে, পানি ঠান্ডা বা গরম হওয়া জরুরি নয় পানি নিরাপদ হওয়াটা জরুরী। আপনি আপনার শরীরের সাথে মানানসই পানি ব্যবহার করবেন। পানি গরম হোক বা ঠান্ডা হোক সাবান দিয়ে সঠিকভাবে হাত পরিষ্কার করলে আপনার হাতের জীবাণু দূর হয়ে যাবে। তাই নিরাপদ পানি এবং সাবান দিয়ে সঠিকভাবে হাত জীবাণু মুক্ত করুন বা পরিষ্কার করুন।
কখন হাত ধোয়া উচিত/হাত ধোয়ার প্রধান সময় গুলি
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত। এছাড়াও কিছু বিশেষ সময় আছে যে সময় হাত জীবাণুমুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। নিয়মিত হাত ধুলে হাত জীবাণুমুক্ত রাখা সম্ভব। তাই সঠিকভাবে এবং সঠিক নিয়মে ঘন ঘন হাত ধোয়ার মাধ্যমে নিজেকে এবং নিজের আপন জনকে নিরাপদে রাখা সম্ভব। নিচে হাত ধোয়ার সময় পর্যায়ক্রমে দেয়া হলো –
- খাবার খাওয়ার আগে ও পরে
- খাবার তৈরি করার আগে ও পরে
- টয়লেট ব্যবহারের পরে
- কোন একটি ক্ষত বা কাটা স্থানের চিকিৎসার আগে ও পরে
- ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বা বমি হয়েছে এমন কাউকে বাড়িতে সেবা দেবার আগে ও পরে
- পোষা প্রাণীর খাবার বা পেট স্ট্রিটস নাড়াচাড়া করে
- আবর্জনা স্পর্শ করার পরে
- হাঁচি দেয়ার সময় হাত দিয়ে নাক মুখ ঢাকলে হাত ধুতে হবে
- কোন বর্জ্য পদার্থ স্পর্শ করার পরে হাত ধুতে হবে
এছাড়া অনেক সময় থাকে যখন হাত ধোয়ার প্রয়োজন হয়। তাই সঠিকভাবে নিরাপদ পানি দিয়ে এবং সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করুন এবং সুস্থ থাকুন এবং পরিবেশকে সুস্থ রাখুন। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে জেনে নিন।
হাত ধোয়া দিবসের প্রতিপাদ্য
প্রতিবছর বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে হাত ধোয়া দিবস পালন করা হয়। অর্থাৎ হাত ধোয়াকে জীবনের অংশ করে নেওয়া হয়। এবারে হাত ধোয়ার প্রতিপাদ্য বিষয় হলো –
“হাতের পরিছন্নতায় এসো সবে এক হই”।
“আমাদের হাতে আমাদের ভবিষ্যৎ, চলো একসঙ্গে এগিয়ে চলি” ২০২১। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে জেনে নিন।
শেষ কথা
বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উদযাপন করা শুরু হয় এবং বিভিন্ন রেলি এবং প্লেকার্ড তৈরির মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। আমি বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – কবে যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই আর্টিকেল পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। আর যদি উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস – সম্পর্কে জেনে নিন।
Leave a comment