১৫ই অক্টোবর বিশ্ব ছাত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয় কিন্তু আবার ১৭ নভেম্বর কে ও জাতিসংঘ বিশ্বের ছাত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিল ২000 সালে। তবে ভারতের রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের জন্মদিন কে স্মরণীয় করে রাখতেই ২0১0 সালের ১৫ ই অক্টোবরকে বিশ্ব ছাত্র দিবস ঘোষণা করা হয়।

ছাত্ররাই একটি দেশ তথা জাতি গড়ার কারিগর। বিশ্বে প্রতিবছর ছাত্র দিবস পালন করা হয়ে থাকে। তাই নিচে  বিশ্ব ছাত্র দিবস – ১৫ই অক্টোবর না ১৭ই নভেম্বর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –

বিশ্ব ছাত্র দিবস – ১৫ই অক্টোবর না ১৭ই নভেম্বর

ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে যে দিবস পালন করা হয় তাকে বলা হয় ছাত্র দিবস। ১৫ই অক্টোবর বিশ্ব ছাত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। জাতিসংঘ ২০১০ সালের ১৫ই অক্টোবর ভারতের ১১ তম রাষ্টপতি এপিজে আবদুল কালাম এর সম্মানার্থে ১৫ই অক্টোবরকে জাতীয় ছাত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আবার উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ১৭ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ডে অর্থাৎ ২০০০ সালের জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি বছর ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস বা ছাত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

 

বিশেষত ছাত্রদের প্রতি সম্মান জানাতে বিশ্ব ছাত্র দিবস পালন করা হয়। আজকে যারা ছাত্র তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর এজন্যই বলা হয়ে থাকে -” ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে”। তেমনি আজকে যারা ছাত্র তারাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। ছাত্রদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে তাই ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করতেই এবং মহামানব এপিজে আবদুল কালাম এর সম্মানার্থেই তার জন্মদিন অর্থাৎ ১৫ ই আগস্ট বিশ্ব ছাত্র দিবস পালন করা হয়।

ছাত্র দিবসের ইতিহাস

১৫ অক্টোবর বিশ্ব ছাত্র দিবস। জাতিসংঘ ১৫ই অক্টোবর ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামকে শ্রদ্ধা জানাতে তার জন্মদিনে বিশ্ব ছাত্র দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১০ সাল থেকে ছাত্র দিবস হিসেবে ১৫ই অক্টোবর পালন করা হয়ে থাকে। এপিজে আবদুল কালাম শুধু একজন রাজনীতিবিদ বা বিজ্ঞানী ছিলেন না তিনি ছাত্রদের প্রতি বারবার গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন।

 করণ তিনি মনে করেছেন, এই বিশ্বকে ঢেলে মুছে সুন্দর ভাবে একমাত্র ছাত্ররা গুছিয়ে রাখতে পারে। এপিজে আবদুল কালাম ছিলেন একজন অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষক। তিনি মনে করতেন ছাত্রসমাজের রয়েছে প্রগাঢ় জ্ঞান যা দেশ গঠনে সহায়তা করে থাকে। তিনি ছাত্রসমাজকে অত্যাধিক গুরুত্ব প্রদান করতেন। যখন তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন তিনি অনেক বার ছাত্রদের সাথে আলোচনায় বসেছেন। তিনি মনে করতেন দেশ গঠনের মূল উপাদান ছাত্রসমাজ

 আর ছাত্র গড়ার কারিগর হল শিক্ষক।তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে অনেক বই লিখেছেন। তবে ছাত্রদের নিয়ে যত বই লিখেছেন তার মধ্যে ইগনাইটেড মাইন্ডস নামক বইটি পাঠক মহলে সর্বোচ্চ স্থান করে নিয়েছে। আর এপিজে আবদুল কালামের অবদানের কথা স্মরণে রাখতে এবং ছাত্র সমাজের প্রতি তার মহানুভবতা দেখে তার জন্মদিন কে স্মরণীয় করে রাখতে ২০১০ সাল থেকে ১৫ অক্টোবর বিশ্ব ছাত্র দিবস পালন করা হয়।

১৭ই নভেম্বর বিশ্ব ছাত্র দিবস

জাতিসংঘ ২০০০ সালের ১৭ই নভেম্বর বিশ্ব ছাত্র দিবস ঘোষণা করে আর জাতিসংঘের ১৭ই নভেম্বর বিশেষ ছাত্র দিবস ঘোষণা উদ্দেশ্য হল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদী চেতনার স্বীকৃতি স্বরূপ। জাতিসংঘ ১৭ই নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ডে হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০০ সালে ১৭ নভেম্বর বিশ্ব ছাত্র দিবস ঘোষণা করে হয়। ১৯৩৯ সালের শেষের দিকে অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে নাজির চেকোশ্লাভাকিয়ায় আগ্রাসন চালায়

এবং এক পর্যায়ে পুরো দেশ দখল করে নেয় আর এতে স্বাধীন দেশ চেকোশ্লাভাকিয়ায় সর্বত্র প্রজাতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়। এতে দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের একত্র করা হয়। ছাত্র সমাজের একজন নেতা বাড়ি ফেরার পথে জার্মান সেনাদের হাতে নিহত হয় আর ছাত্রনেতা নিহত হওয়ার কারণে ছাত্র আন্দোলন আরো জোরদার হয় এবং এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১২০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের পাঠানো হয় সংশোধনাগারে। এছাড়া ও ৯ জন ছাত্র শিক্ষককে বিনা বিচারে ফাঁসি দেওয়া হয় আর এই নির্মমতার জন্য ছাত্রসমাজ সহ পুরো বিশ্ববাসী উদ্বেলিত হয়ে পড়ে। আর এই ছাত্রদের স্মরণ করে রাখতে জাতিসংঘ ২০০০ সালের ১৭ই নভেম্বর বিশ্ব ছাত্র দিবস ঘোষণা করে।

 

১৫ই অক্টোবর ছাত্র দিবস পালন করা হয় ছাত্রদের ভালোবাসার স্বীকৃতি স্বরূপ এবং তাদের অনুপ্রেরণার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার জন্য। আর ১৭ নভেম্বর ছাত্র দিবস পালন করা হয় বিশ্বের প্রতিবাদী ছাত্রদের চেতনার স্বীকৃতি স্বরূপ। বিশ্বের ছাত্রদের কাছে ১৫ই অক্টোবর এবং ১৭ই নভেম্বর এই দুটি দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।

ছাত্র দিবসের প্রণেতা এপিজে আবদুল কালাম

১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর এপিজে আবদুল কালাম ভারতের তামিলনাড়ুতে এক দরিদ্র পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতরত্ন খেতাব লাভ করেন যা ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। এছাড়াও তিনি পদ্মবিভূষণ ও পদ্মভূষণ খেতাবে ভূষিত হন। ২০০২ সালে তিনি ভারতের বিজেপি সরকারের আমলে একাদশ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি অভ্যস্ত ছিলেন সহজ সরল জীবন যাপনে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন শিক্ষা জগতে।

বিখ্যাত এই মনীষী ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। যার কারণে তাকে স্মরণ করতে এবং তাকে সম্মান জানাতে জাতিসংঘ ২০১০ সাল থেকে ১৫ অক্টোবরকে বিশ্ব ছাত্র দিবস ঘোষণা করে আর সেই থেকে সারা বিশ্ব জুড়ে ১৫ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব ছাত্র দিবস। আবদুল কালাম ছিলেন ভারতের ১১ তম রাষ্টপতি এবং তিনি মহাকাশ বিজ্ঞানীও ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ শিক্ষক। এপিজে আবদুল কালাম কে বলা হয় ভারতের মিসাইল ম্যান বা ক্ষেপণাস্ত্র।

 তিনি নিযুক্ত ছিলেন একাধিক একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সাথে। আজ ও তার বলা কথাগুলো জীবন গড়ার সুদক্ষ চাবিকাঠি। পুরো বিশ্বের ছাত্ররা তাকে মনে রাখবে শ্রদ্ধা ভরে।

ছাত্র সমাজের প্রতি এপিজে আবদুল কালামের আহ্বান

এপিজে আবদুল কালাম তিনি ছাত্রদের অনেক বেশি ভালবাসতেন এবং ছাত্রদের সাথে তিনি এমন প্রাণবন্ত ছিলেন যে ছাত্রদের মধ্যে থেকে তিনি তাদের সেরা কথাগুলো বের করে আনতেন। তার মতে শিক্ষকেরা হলেন সমাজের নির্মাতা আর ছাত্ররা যখন বিষয়গুলি সম্পর্কে দক্ষ হয়ে উঠবে তখন সমাজ গঠিত হবে। তিনি তার দীর্ঘ ৮৪ বছরের জীবদ্দশায় ছাত্রদের ভালোবেসেছেন। তিনি সব সময় মনে করতেন ছাত্ররাই হলো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ

আর শত প্রতিকূলতার মধ্যে ছাত্রদল পারে একমাত্র সমাজকে গঠন করতে। তাই তিনি ছাত্রসমাজকে আহ্বান করেছেন। তিনি আহ্বান করেছেন যে- ” আমার আহ্বান হল তরুণ প্রজন্মের কাছে, তাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করার সাহস থাকতে হবে। তাদের থাকতে হবে আবিষ্কারের নেশা। তাদের সে পথে চলতে হবে যে পথে কেউ চলেনি। তাদের সাহস থাকতে হবে অসম্ভবকে সম্ভব করার। চিহ্নিত করতে হবে বিভিন্ন সমস্যাকে এবং তা সমাধানও করতে হবে।

আর এগুলোই হলো ছাত্রদের সবচেয়ে মহৎ গুণ। আর তাদের এভাবে এগিয়ে যেতে হবে আর তাদের কাছে তথা ছাত্র সমাজের কাছে এটাই আমার বার্তা”। এপিজে আবদুল কালাম ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান কিন্তু তার মন ছিল আকাশের মত উদার।

ছাত্র দিবসের প্রতিপাদ্য

প্রতিটি দিবসই বিশেষ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালন করা হয়ে থাকে। ২০১০ সাল থেকে ১৫ই অক্টোবর ভারতের ১১ তম প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের জন্মদিন কে স্মরণীয় করে রাখতে জাতিসংঘ সেই দিনকে বিশ্ব ছাত্র দিবস ঘোষণা করে। আর তখন থেকেই এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হয়ে থাকে। ২০২২ সালের ছাত্র দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল -” মানুষ, গ্রহ, সমৃদ্ধি এবং শান্তির জন্য শেখা”। এপিজে আবদুল কালাম ছিলেন একজন কাজ পাগল মানুষ।

তিনি সবসময় কাজকে তার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতেন। তাইতো তিনি বলেছিলেন – ” যেদিন আমি মারা যাব বাড়তি ছুটি হিসেবে সেই দিনটা ঘোষণা না করে বরং বাড়তি একটি দিনে কাজ করবেন” আর এই মহান মানুষের মনটা ছিল সব সময় তারুণ্যে ভরা সবুজ, শ্যামল ও সতেজ।

শেষ কথাঃ বিশ্ব ছাত্র দিবস – ১৫ই অক্টোবর না ১৭ই নভেম্বর 

আমি বিশ্বের সকল ছাত্রদের প্রতি ভালবাসা রেখে বিশ্ব ছাত্র দিবস সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি, তোমরা যারা ছাত্র দিবস পালন করো তারা আমার  বিশ্ব ছাত্র দিবস – ১৫ই অক্টোবর না ১৭ই নভেম্বর আর্টিকেলটি পড়ে অনেক উপকৃত হবে। আর যদি আমার  বিশ্ব ছাত্র দিবস – ১৫ই অক্টোবর না ১৭ই নভেম্বর আর্টিকেলটি তোমাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবে। আর যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করে জানাবে।

আমি একজন শিক্ষক হিসাবে প্রতিটি ছাত্রকে জানাই আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা। তোমরা এগিয়ে যাও সাহসের সাথে এবং হয়ে ওঠো জাতি গড়ার কারিগর। ভবিষ্যত প্রজন্ম তোমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। বিশ্বের সকল ছাত্রকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।