অনুচ্ছেদ বাংলা দ্বিতীয় পত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীদের অনুচ্ছেদ লিখতে হয়। তাই আমি তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করে মাঝি অনুচ্ছেদ যথাযথভাবে লেখার চেষ্টা করেছি।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা যারা পরীক্ষায় ভালো নম্বর প্রাপ্তির আশা করো তারা আমার এই মাঝি অনুচ্ছেদ পড়তে পারো। আমি আশা করি তোমরা যদি সঠিকভাবে এই অনুচ্ছেদটি পড়ে লিখতে পারো তাহলে পরীক্ষায় ভালো করবে। তাহলে এসো বন্ধুরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক –

মাঝি অনুচ্ছেদ 

নদীর বুকে চালায়

মাঝি

পালতোলা এক

নায়,

দেশ –  দেশান্তর

দিতে পাড়ি

লগি – বইঠা বায়

এই কবিতার মাধ্যমে কবি গাজী আরিফ মান্নান আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের মতো একটি নদীমাতৃক দেশে মাঝি কত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। পেশাগত ভাবে নৌকা চালিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তাদের বলা হয় মাঝি। মাঝিরা সাধারণত নৌকা চালায় খাল, বিল, নদী, নালা, হাওর, বাওড় ও ঝিলে। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। নদীমাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে নৌকা যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।

মাঝিদের বাংলাদেশে আবার অনেক নামে অভিহিত করা হয় যেমন – নৌকা চালক, পাটনি, মাল্লা, নৌকা জীবি, নাওয়া, কান্ডারী, কর্ণক ইত্যাদি। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো দাঁড় টানা নৌকা টিকে আছে। তবে সড়ক যোগাযোগের বিস্তার ঘটার কারণে নৌকার জনপ্রিয়তা এবং প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। আবার নৌপথে অধিকাংশ স্থানে চলে ইঞ্জিন চালিত নৌকা আর এই সকল কারণেই মাঝিদের কদর অনেক কমে গেছে।

নৌকা এখন খেয়া পারাপারে ছোট্ট পরিসরে ব্যবহার করা হয়। খেয়া নৌকা দেশের বিভিন্ন হাওর বাওরে দেখা গেলেও ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে দেখা যায়। আবার রাজশাহীর পদ্মা নদীতে ও দেখা যায়। পদ্মা নদীতে দেখা যায় বলেই হয়তো মানিকচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা করেছেন তার বিখ্যাত উপন্যাস “পদ্মা নদীর মাঝি”। একজন মাঝি এবং সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে যারা মাঝি তারা লোক পারাপারের জন্য একটি নির্দিষ্ট অর্থ নিয়ে থাকেন।

তাদের নৌকাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছোট হয় এবং বসার মত কোন জায়গা থাকে না তবে এখনকার সময়ের নৌকায় বসার স্থান করা হয়েছে এবং তা সীমিত পরিমানে। তবে ছোট নৌকাগুলো সাধারণত একজন মাঝি থাকে আর বড় নৌকাগুলোতে সাধারণত দুইজন মাঝি থাকেন। মানুষ পারাপারের পাশাপাশি বিভিন্ন মাল আনা নেওয়া করে সেই নৌকাগুলো আকারে একটু বড় হয় এবং দুইজন মাঝি থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার এর অধিক মাঝিও থাকতে পারে।

বাংলাদেশে এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে পারাপারে নৌকা বাধ্যতামূলক ব্যবহার করা হয় এবং এসব স্থানের মাঝি ও নির্ধারিত থাকে যদিও মাঝিদের মূল কাজ নৌকা চালানো এবং যাত্রী পারাপার করা তথাপি মাঝিরা নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরে আর মাছ ধরার কাজে যেসব নৌকা ব্যবহার করা হয় সেগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন – ডিঙ্গি, পানসি, গয়না, ঘাসি এবং জেলে ডিঙ্গি। মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত নৌকাগুলো দাঁড় বিশিষ্ট হয়।

যখন মাঝি নৌকা চালায় তখন দাঁড় বেয়ে নৌকা চালায় আর যদি বৈঠা ধরে তাহলে অন্য মাঝিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে। তবে নৌকাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাল তোলা হয় আর পাল তোলার সুবিধার্থে নৌকার মধ্যে গুন টানা হয়। ছোট নৌকাগুলোকে স্থির করে রাখার জন্য নদীর ধারে খুঁটি গেড়ে রাখা হয় নৌকা গুলো নোঙর করে রাখার জন্য

আর বড় নৌকা গুলিতে থাকে নোঙর আর মাস্তল। দূরবর্তী স্থানে যাত্রী পারাপারের জন্য ইঞ্জিন চালিত নৌকা ব্যবহার করা হয় কারণ এই নৌকাগুলো দ্রুত চলে। আর এজন্যই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার মাঝি কবিতায় লিখেছেন –

আমার যেতে ইচ্ছে করে

নদীটির ওই পারে –

যেথায় ধারে – ধারে

বাঁশের খোঁটায় ডিঙি নৌকা

বাঁধা সারে – সারে

মা, যদি হও রাজি,

বড় হলে আমি হব

খেয়াঘাটের মাঝি।

শেষ কথা

শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা যদি আমার এই অনুসিটি পড়ে উপকৃত হও তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্টস করে জানাবে এবং তোমাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবে তাহলে তারাও উপকৃত হবে। মানুষ যত আধুনিক হচ্ছে তত তাদের পুরনো সংস্কৃতি গুলোকে ভুলে যাচ্ছে। মানুষ এত বেশি আধুনিক হয়েছে যে, পুরনো ঐতিহ্যকে তারা আর মনে রাখতে চায় না। তাই শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা তো অবশ্যই বছরে শিক্ষা সফরে যাও আর এক্ষেত্রে তোমরা অবশ্যই বাংলাদেশের ঐতিহ্য নৌকা করে ঘোরার চেষ্টা করবে এবং মাঝিরা কিভাবে হেইয়ো হেইয়ো  সুর টেনে নৌকা টানে সেগুলো উপভোগ করতে পারবে।