বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর এই দেশে রয়েছে ছয়টি ঋতু। তবে সব ঋতুতেই সবজি ভালো হয় না কিছু সবজি রয়েছে যেগুলো ১২ মাস উৎপাদন করা যায় আবার কিছু সবজি রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন ঋতুতে উৎপন্ন হয়। তবে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালেও যে উৎপন্ন হয় তবে শীতকালে সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপন্ন হয়।
আর বারো মাস কোন সবজি উৎপন্ন হয় জানার জন্য আপনারা অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন। কৃষি প্রধান এই দেশে মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সবজি উৎপাদন করা উচিত। তাই যারা বারোমাস সবজি উৎপাদন করতে চান আমার আর্টিকেলটি তাদের জন্য।
বারোমাসি সবজি তালিকা
বাংলাদেশ ঋতু বৈচিত্রের দেশ। আমাদের দেশে ছয়টি ঋতু রয়েছে তথা- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। ঋতু বৈচিত্রের কারণে আমাদের দেশে একেক ঋতুতে এক এক সবজি ভালো জন্মে তাই বাংলার কৃষক ও ঋতুভিত্তিক চাষবাদ করে থাকে। ঋতু বৈচিত্রের কারণে এদেশের মাটিতে ফলে নানা রকম ফল ও সবজি। আমাদের দেশে ঋতু বৈচিত্রের কারণে কৃষি মৌসুমে কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।যথা –
খরিফ এক, খরিফ দুই ও রবি কৃষি মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা হলেও আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে আমাদের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি মাসে কিছু না কিছু ফসল ও সবজি উৎপাদন হয়। বাংলার কৃষকেরা নিজেদের চিন্তাধারা, আর্থিক চাহিদা বিবেচনা করে নিজেদের মতো করে ফসল উৎপাদন করে। নিচে কোন মাসে কি সবজি উৎপন্ন হয় তা আলোচনা করা হলো-
বৈশাখ মাস
বাংলা বৈশাখ মাস আসে ইংরেজি মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে মাস পর্যন্ত। এপ্রিল মাস আসে যদিও বসন্ত বার্তা নিয়ে কিন্তু মধ্য এপ্রিল আসলেই গ্রীষ্ম ঋতুর বার্তা শুরু হয়। এই সময় মাটি উষ্ণ হয় আর মাঠ ফাঁকা থাকে বলে সবকিছু অনেক দূর থেকে দেখা যায়। সবজির চাষও এই মাসে অনেক ভালো হয়। এ মাসে যে সবজিগুলো চাষ করা হয় তা হলো-
আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, স্পাউট, পালং শাক, বেল, মরিচ, মিষ্টি ডাল, সবুজ পেঁয়াজ, বিট কালে, ভুট্টা, ব্রকলি, লাল শাক, গেমা, কমলি ডাটা, পেঁয়াজ পাতা, পাট শাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ এবং ঢেঁড়সের বীজ বপনের উত্তম সময়। এছাড়া এই মাসে চাল কুমড়া, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, করলা, ধুন্দল এবং শসার চারা উৎপাদন করতে হবে এবং চারার জন্য মাচা তৈরি করতে হবে।
গ্রীষ্মকালে সবজি চাষে একটু পোকামাকড় বেশি হয় তাই এই সময় পোকা মাকড় দমনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেচের ব্যবস্থাও করতে হবে এবং এর সঙ্গে টমেটো চারা রোপন করা যায়।
খরিফ এক ১ঃ-
এই গ্রীষ্ম মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন ফসলের বীজ বপন ও চারা রোপন করতে হবে। যেমন – লাল শাক, পুঁইশাক, ডাটা ও বরবটি সংগ্রহ করতে হবে।
খরিফ ২
সবজির চারা ও বেড তৈরি করতে হবে। তরমুজ ,বাঙ্গি, কচি সজিনা সংগ্রহ করতে হবে। উন্নত জাতের ফসল উৎপাদনের জন্য চারা ও কলম সংগ্রহ করতে হবে সবজির বেড ও চারা তৈরি করতে হবে। পুরনো ফসল গাছে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে এবং যেসব গাছে ফল রয়েছে সেসব গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
জ্যৈষ্ঠ মাস
বাংলা বছরের দ্বিতীয় মাস হল জৈষ্ঠ মাস। জ্যৈষ্ঠ মাস শুরু হয় মধ্য মে থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত। এই সময় রৌদ্রের প্রচণ্ড তাপ থাকে এবং এই তাপে চারিদিকের পানি প্রায় শুকিয়ে যায় এবং মাঠঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায়। এক কথায় পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। এই গ্রীষ্মকালে মানুষ খুঁজে ছায়া নীড় আর ফসল কে সহ্য করতে হয় প্রচন্ড তাপ।
এই সময় আপনি যে ফসল গুলি উৎপাদন করতে পারবেন তা হল মালাবার পালং শাক, ব্রকলি, ফুলকপি, সবুজ মটরশুঁটি, মিষ্টি আলু, জুবিনি, স্কোয়াশ, তরমুজ, বেগুন, ক্যাপসিকাম, টমেটো, ভুট্টা, আদা, লেটুস, শসা, মটরশুটি ইত্যাদি। এছাড়াও ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, পটল, কাকরোল সংগ্রহ করতে হবে এবং পোকামাকড় দমন ও সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
খরিফ দুই
বীজ তলায় আগে বীজ বপন করতে হবে এবং সবজি চারা রোপণ, পরিচর্যা, সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও এ সময় পরবর্তীতে গাছ লাগানোর জন্য গর্ত প্রস্তুত করে রাখতে হবে। এছাড়াও পূর্ববর্তী গাছের সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হবে। যেসব গাছে ফল রয়েছে তা সংগ্রহ করতে হবে এবং তা বাজার জাত করতে হবে।
আষাঢ় মাস
বাংলা আষাঢ় মা শুরু হয় মধ্য জুন থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত। এই সময়ে যেমন রোদের তাপ থাকে তেমনি আবার বর্ষাকালের জন্য বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে রোদের তীব্রতা অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। আষাঢ় মাসে যে সবজিগুলো আপনি উৎপাদন করতে পারবেন তা হল – গ্রীষ্মকালীন টমেটো, বেগুন, কাঁচা মরিচ, সিমের বি জ বপন, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় দমন করতে হবে। পূর্বে লাগানো সবজি যেমন – বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো জমি থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
খরিফ দুই ২ঃ সবজির চারা রোপন, সেচ, সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করতে হবে। ফলসহ ঔষধি গাছের চারা রোপন করতে হবে। এই সময় বৃষ্টির সাথে বাতাস প্রবাহিত হয় বলে গাছ সহজে উপড়ে যায় তাই গাছ অবশ্যই ভালোভাবে খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। গাছের চারপাশে বেড়া ও মাচা দিতে হবে এবং সুষমসার প্রয়োগ করতে হবে।
শ্রাবণ মাস
শ্রাবণ মাস শুরু হয় মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত। শ্রাবণ মাসে বেশি বৃষ্টিপাত হয় তাই শ্রাবণ মাসের সবজি একটু আগে রোপণ করতে হয়। যেমন আগাম ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লাউ, টমেটো এর বীজ তলা তৈরি করতে হবে এবং বীজ বপন করতে হবে।
খরিফ ২ঃ
জমির সবজি উঠানো ও পোকামাকড় দমন করতে হবে, এই সময় লাল শাক, পালং শাক ও শিমের বীজ বপন করতে হবে। যেসব ফসল রোপন করা হয়েছে সেসব চারার যত্ন ও পরিচর্যা করতে হবে ।গাছের চারপাশে বেড়া দিতে হবে এবং খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে। আর যেসব গাছে ফল দেওয়া শুরু হয়েছে সেসব গাছের ফল সংগ্রহ করতে হবে।
ভাদ্র মাস
ভাদ্র মাস শুরু হয় মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই সময় আগাম রবি সবজি যেমন – ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো, বেগুন, কুমড়ার চারা রোপন সহ লাউয়ের জমি তৈরি এবং সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে এ সময় সেচের প্রয়োজন হয় না কারণ এটা বর্ষাকাল হওয়ায় চারিদিকে একটু বেশি পানি জমা থাকে। এই সময়ে মধ্য ও নাবি রবি সবজির বীজ তলা তৈরি সহ বীজ বপন করতে হবে।
নাবী খরিফ ২ঃ এই সময় সবজি সংগ্রহ এবং বীর সংরক্ষণ করতে হবে। আগে যে চারা রোপন করা হয়েছে তা সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। ফলের উন্নত চারা লাগাতে হবে এবং পরিচর্যা করতে হবে। এই মৌসুমে কলম গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় তাই কলম চারা লাগাতে হবে, গাছের চারপাশে বেড়া দিতে হবে এবং গাছে খুঁটি দিয়ে গাছ ভালোভাবে বেঁধে দিতে হবে। গাছ থেকে ফল সংগ্রহের পর গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে।
আশ্বিন মাস
আশ্বিন মাস আসে ইংরেজি মধ্য সেপ্টেম্বর ও মধ্য অক্টোবর নিয়ে। এই সময় আগাম রবি সবজির চারা রোপণ, সেচ, বালাই দমন ও যথাসম্ভব চারার যত্ন নিতে হবে। এই সময় নাবি রবি সবজির বীজ তোলা তৈরি, বীজ বপন, আগাম টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সবুজ ফুলকপি ও ফুলকপির গোঁড়া পরিষ্কার ও গোড়া বেঁধে দিতে হবে। এই সময় মরিজের চারা রোপন করতে হবে।
যেসব গাছে ফল আছে সেসব গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করতে হবে। সিম, লাউ ,বরবটির মাচা তৈরি করতে হবে এবং সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। আলু, রসুন ও পেঁয়াজের বীজ বপন করতে হবে এই সময় জমিতে ঘাস একটু বেশি হয় তাই আগাছা পরিষ্কার ও গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে এবং সুষমসার প্রয়োগ করতে হবে।
কার্তিক মাস
কার্তিক মাস শুরু হয় ইংরেজি মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময় আলুর কেইল ( অনেকে গ্রাম্য ভাষায় জমির আল বাধা বলে থাকে) বাধা ও আগাম রবি সবজির পরিচর্য, সংগ্রহ করতে হবে। মধ্যম রবি সবজি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ করতে হবে। এই মৌসুমে বৃষ্টি একটু কম হয় তাই প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। নাবি সবজির জমি তৈরি,চারা উৎপাদন ও চারা লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
এই সময় মরিচের বীজ বপন ও চারা রোপন করতে হবে। গাছের পরিচর্যা, সার প্রয়োগ যদি না করা হয় হয়ে থাকে তাহলে সার প্রয়োগ ও মালচিং করে মাটিতে রসের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পরিমিত সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
অগ্রহায়ণ মাস
মধ্য নভেম্বর ও মধ্য. ডিসেম্বর মিলে অগ্রহায়ণ মাস। হেমন্তকালে নতুন ধান আসে কৃষকের ঘরে ঘরে, শুরু হয় নতুন ধানের পিঠা পুলির আয়োজন। হেমন্তকালের যে ফসল উৎপাদন হয় তা হলো -মিষ্টি আলু লতা রোপন করতে হয়।এছাড়াও পূর্বে রোপন কৃত লতার পরিচর্যা , চারা রোপণ, পেঁয়াজ, রসুন ,আলুর জমিতে সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান ইত্যাদি করতে হয়।
অন্যান্য রবি ফসল যেমন -ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ওলকপি, শালগম ও বেগুনের চারার যত্ন নিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনে সেচ প্রদান ও সার প্রয়োগ করতে হবে। ফলনকৃত সবজি সংগ্রহ করতে হবে, ফল গাছের মালচিং করা সহ পরিমিত সুষুমসার প্রয়োগ করতে হবে।
পৌষ মাস
মধ্য ডিসেম্বর ও মধ্য জানুয়ারি নিয়ে গঠিত হয় পৌষ মাস। পৌষ মাসে যে সবজিগুলো হয় তার রোগবালায় ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থা করতে হবে এবং যে সবজিগুলো জমিতে রয়েছে তা সংগ্রহ করতে হবে। নাবি রবির সবজিগুলোর পরিচর্যা, ফল গাছের রোগ বালাই দমন, ফল গাছের পোকামাকড় এবং অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে যারা মৌসুমী ফুলের চাষ করতে চান তাদের এ সময় তাদের ফুল গাছে বেশি যত্ন করতে হবে। ফুল গাছের সেচ ও উপরি সার প্রয়োগ করতে হবে।
মাঘ মাস
মধ্য জানুয়ারি ও মধ্য ফেব্রুয়ারি মিলে মাঘ মাস হয়। মাঘ মাস বাংলার সবচেয়ে শীতলতম মাস।এ সময় আপনি যে সবজিগুলো করতে পারবেন তা হল – পেয়াজ, রসুন, আলুর গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। সেচ, সার প্রয়োগ করতে হবে। টমেটোর ডাল ছেঁটে দিতে হবে, ফল সংগ্রহ করতে হবে। মধ্য ও নাবী সবজির সেচ দিতে হবে, গোড়া বাধতে হবে, মাচা তৈরি করতে হবে এবং সার প্রয়োগ করতে হবে।
খরিফ এক
সবজির বীজতলা তৈরি করতে হবে, মাচা তৈরি করতে হবে এবং বীজ বপন করতে হবে। বীজতলায় চারা উৎপাদনে যতটা সম্ভব সুস্থ সবল চারা রোপন করতে হবে। রোগ মুক্ত সুস্থ সবল চারা রোপন করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। ভালো চারা সাথে সাথে রোগ বালাই, পোকামাকড় দমনসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। শীতকালে গাছের পাতা মোড়ানো রোগ বেশি হয় তাই এই সময় একটু বেশি গাছের যত্ন নিতে হবে।
ফাল্গুন মাস
মধ্য ফেব্রুয়ারি ও মধ্য মার্চ নিয়ে ফাল্গুন মাস। নাবী খরিফ এ সময় সবজির বীজতলা তৈরি, বীজ বপন, মাচা তৈরি করতে হবে। এছাড়া এ সময় লালশাক, ডাটা ও ঢেঁড়সের বীজ বপন করতে হবে।
আগাম খরিফ ১ঃ
- এ সময় মূল জমি তৈরি করতে হবে
- চারা উৎপাদন করতে হবে এবং
- তারা রোকনো সার প্রয়োগ করতে হবে
মিষ্টি আলু, সবজি আলু সংগ্রহ, রবি সবজি সংগ্রহ সহ বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া এ সময় বাগানের অন্যান্য ফসলের পরিচর্যা করতে হবে। আলু গাছের বয়স ৯0 দিন হয়ে গেলে মাটি সমান করে গাছ কেটে ফেলতে হবে এবং কেটে ফেলা গাছগুলো একটি গর্ত করে রেখে তা থেকে জৈব সার তৈরি করতে হবে। এরপর আলু উঠানোর পরে আলু সংরক্ষণে সবচেয়ে বেশি যত্নবান হতে হবে।
আলু সহজে পচে যায় তাই আলু সংরক্ষণ করা খুব প্রয়োজন। গাছ মাটি সমান করে কেটে রাখার ১০ দিন পর অর্থাৎ ১০০ দিন পর আলো তুলতে হবে। আলু পরিপক্ক হতে মোট তিন মাস সময় লাগে তাই যথাসময়ে আলু তুলতে পারলে আলুর চামড়া পোক্ত হয় এবং তা সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ে। এই সময় গাছের প্রসেদন কমে যায় ফলে গাছের পাতা ঝরে যায়। তাই এই সময় গাছেরসেচের বেশি প্রয়োজন পড়ে। তাই যথা সম্ভব সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
চৈত্র মাস
মধ্য মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল মিলে শুরু হয় চৈত্র মাস। এ সময় গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদিত হয়। এ সময় গ্রীষ্মকালীন টমেটো, বেগুন ও মরিচের চারা রোপন করতে হবে। চৈত্র মাসে নাবি জাতের বীজ তলা তৈরি করতে হবে, বীজ বপন করতে হবে আর যেসব সবজির চারা তৈরি করা হয়ে গেছে তা বীজতলা থেকে তুলে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে।
কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড়ো, রোগ বালাই দমনের ব্যবস্থা করতে হবে। সবজির ক্ষেতে আগাছা দমন করতে হবে, সেচের ব্যবস্থা করতে হবে ও সার প্রয়োগ করতে হবে। এ সময় নাবি রবি শস্য উঠে, তাই এ সময় সবজি উঠানো, সংগ্রহ এবং বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। এ সময় বৃষ্টিপাত কম হয় তাই গাছে পানির স্বল্পতার কারণে ফল ঝরে পড়ে তাই যতদূর সম্ভব গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। এর সাথে রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শীতকালীন সবজির নাম
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর এ দেশের শতকরা ৮০ভাগ লোক কৃষিকাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের দেশে বছরের সব ঋতুতেই সবজি উৎপন্ন হয় তবে শীতকালে সবচেয়ে বেশি সবজি পাওয়া যায়। যে সবজিগুলো গরম কালে উৎপাদন করা সম্ভব হয় না তাকে শীতকালীন সবজি বলা হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত শীতকালীন সবজিগুলোর নাম হল –
- ফুলকপি
- বাঁধাকপি
- ওলকপি
- পালং শাক
- শালগম
- শিম
- মটরশুঁটি
- টমেটো
- ব্রকলি
- ধনিয়া পাতা
- গাজর
- লাউ
- পেঁয়াজ
- আলু
বারোমাসি সবজির নাম
আমাদের দেশের সারা বছরই সবজি উৎপন্ন হয় তবে একেক ঋতুতে এক এক সবজি ভালো উৎপন্ন হয়। তবে সারা বছরই উৎপন্ন হয় এমন সবজি গুলো হল –
- মিষ্টি কুমড়া
- চাল কুমড়া
- পেঁপে
- কলা
- পুইশাক
- লাউ
- বেগুন
- আলু
- মরিচ
- আদা
- টমেটো
- কচু
- কলা
- মিষ্টি আলু
- লাল শাক
- আদা
- ডাটা শাক
- কলমি শাক
- কচুর লতি
- ঢেঁড়স
- বরবটি
- পাট শাক
- শসা
- করলা
- পুদিনা পাতা
- শালগম
- সজনে ডাটা
বাড়ির পাশে খালি জায়গায় সবজি চাষ
পুষ্টি চাহিদা মেটানোর কথা চিন্তা করে আপনি আপনার বাড়ির পাশে খালি জায়গা ফেলে না রেখে সেখানে সবজি চাষ করতে পারেন কারণ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাক-সবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর যদি সেটা আপনি বাড়ির খালি জায়গায় উৎপাদন করে ফ্রেশ সবজি খেতে পারেন তাহলে সেটাই সবচেয়ে উত্তম। আপনি আপনার বাড়ির পাশের খালি জায়গায় সারা বছরই সবজি উৎপাদন করতে পারবেন।
আমাদের বাড়ির পাশের অনেক জায়গা পড়ে থাকে বিশেষ করে আমরা যারা গ্রামে বাস করি তাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। কিন্তু অল্প পরিমাণ জমিতেও অনেক ধরনের সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। তবে সবজির আবাদে অপেক্ষা কৃত কম সময় লাগে এবং কম জায়গাতেও করা সম্ভব হয়। যেগুলো আপনি বাড়ির আশেপাশে বারো মাস উৎপাদন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনি আপনার বাড়ির পাশে যে জায়গাতে বেশি আলো বাতাস রয়েছে
সে জায়গা নির্বাচন করে নিতে পারেন। আপনি আপনার বাড়ির পাশের জায়গা ফেলে না রেখে সেখানে ভালোভাবে চাষ মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিয়ে একটি প্রশস্ত বেড তৈরি করে নিবেন এবং বেডের মাঝখানে একটি নালা তৈরি করবেন যাতে দুই পাশে বেড এবং মাঝখানে নালা থাকে এবং নালা দিয়ে পানি বাইরে চলে যেতে পারে এবং আপনার সবজির কোন ক্ষতি না হয়। কারণ বর্ষার মৌসুমে অনেক পানি থাকে যেগুলো সবজির ক্ষতি করে।
আপনার বাড়ির যে পাশের ছায়া রয়েছে সেই ছায়াযুক্ত স্থানে আপনি বেড তৈরি করে মাঝখান দিয়ে নালা তৈরি করে মসলা সবজি আবাদ করলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। এক্ষেত্রে আপনি বাড়ির আঙ্গিনায় যেসব শাকসবজি করতে পারেন সেগুলো হল – লাল শাক, পাট শাক, মুলা শাক, ডাটা শাক, শালগম, গাজর ইত্যাদি। এছাড়াও আপনি যে বেড তৈরি করবেন তাতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ঢেঁড়স, কচু, ওল কচু এসব তৈরি করতে পারেন।
তবে এইসব চারা আপনাকে অবশ্যই নির্ধারিত দূরে লাগাতে হবে তাহলে আপনি এতে বেশ ভালো ফলন পাবেন। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো হয় আপনি যদি আগে থেকে চারা তৈরি করে নিয়ে বেডে লাগাতে পারেন তাহলে বেশি ফলন পাবেন। এছাড়াও আপনি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, চালকুমড়া, পটল, কাঁকরোল, করোলা, ঝিঙা, শিম, বরবটি ইত্যাদি লতা জাতীয় সবজি চাষ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে বেডের সামনের দিকে চারা রোপনা করে সাইডে করতে হবে।
কারণ এগুলো লতা জাতীয় গাছ এবং এর জন্য জানলা দেওয়ার প্রয়োজন হবে। এছাড়াও আপনি লতা জাতীয় সবজি আপনার বাড়ির ধারের রাস্তা, পুকুরপাড় অথবা যেখানে বিশেষ করে আমাদের ভালো ফলন হয় সেখানে লাগাতে পারেন। সবজির ভালো উৎপাদন পেতে আপনি অবশ্যই আপনার সবজি বাগানে জৈব সার বেশি ব্যবহার করবেন কারন রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈব সারে উৎপাদন বেশি হয়।
শেষ কথা
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এদেশের শতকরা ৮০ভাগ লোক কৃষি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে বাংলাদেশের আবহাওয়া ফসল উৎপাদনের জন্য অনেক উপযোগী যে কোন মাসেই আমাদের দেশে সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হয় প্রতিমাসে প্রায় সব ধরনের সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। আমাদের উচিত কৃষির প্রতি বেশি যত্নশীল হওয়া এবং কৃষকদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাতে করে তারা প্রত্যেকটি ফসল সঠিকভাবে পলাতে পারে এবং উৎপাদন বাড়াতে পারে।
Leave a comment