বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্বে আজ যে সমস্যা রয়েছে মাদকাসক্ত হলো ও তার মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার – অনুচ্ছেদ লিখতে আসে। তাই আমি মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার – অনুচ্ছেদ যথাযথভাবে লিখার চেষ্টা করেছি।
প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা আমার এই অনুচ্ছেদ পড়তে পারো। মনে রেখো, তোমরা কখনোই কোন কিছু না বুঝে শুধু মুখস্থ করার চেষ্টা করবে না। নিচে মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার – অনুচ্ছেদ বিস্তারিত লিখা হলো-
মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার – অনুচ্ছেদ
বর্তমানে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব আজ যে সমস্যায় জর্জরিত তার অন্যতম প্রধান সমস্যা হল মাদকাসক্তি। মাদকাসক্তির ব্যবহার এবং অবৈধ বিস্তার এত বেড়ে গেছে যে বিশ্ববাসী আজ শঙ্কিত। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ও ছড়িয়ে গেছে এই মাদকের ভয়াল নেশা। যে দ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষের স্নায়ুবিকশক্তি বৈকল্য সহ নেশার সৃষ্টি হয় সাধারণত তাকেই মাদকদ্রব্য বলা হয়। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মানুষ আনন্দ উপভোগ করে।
তাই গবেষকেরা একে ব্রেনের ডিসঅর্ডার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কারণ মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মাদক মস্তিষ্কের ডোপামিন নিঃসরণের মাধ্যমে ভালোলাগা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার মতো চিন্তা প্রক্রিয়া এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা করতে না পারার মতো পরিবর্তন দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মাদকাসক্তি হল চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা গ্রহণযোগ্য নয় এমন দ্রব্য অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করা এবং ধীরে ধীরে এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া।
আর দীর্ঘদিন ধরে মানুষের যদি এই পরিবর্তন থাকে তাহলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সাধারণত যেসব মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে তা হল – গাঁজা, মদ, হেরোইন, ফেনসিডিল, বিয়ার, ঘুমের ঔষধ, তাড়ি, প্যাথেডিন, ইয়াবা, ইঞ্জেকশন ইত্যাদি। বিভিন্ন কারণে মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে যেমন – মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা, পারিবারিক কলহ, সঙ্গ দোষ, কৌতূহল, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব ইত্যাদি।
আর মাদকদ্রব্যে সবচেয়ে বেশি আচ্ছন্ন হল আমাদের যুবসমাজ। তবে বর্তমানে বয়স্ক এবং শিশুরাও এই মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মায়ানমার সহ বিভিন্ন দেশ মাদকদ্রব্যের চোরা চালানের প্রধান অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাচীন হল আফিম থেকে তৈরি হয় মার্চ আর এই মাদকদ্রব্য তৈরি হয় বিশেষ প্রক্রিয়ায় এবং তা ব্রাজিলে তৈরি হয়। আর এই মাদকদ্রব্য উৎপাদনের একটি বড় নেটওয়ার্ক পুরো বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছে।
১৯৮০ থেকে ১৯৯০ দশকের মধ্যে মরফিন জাতীয় এক প্রকার দ্রব্য ব্যথা নাশক ঔষধ হিসেবে কোম্পানিগুলো প্রচলন শুরু করে আর এই ঔষধ কোম্পানিগুলো এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে লুকিয়ে প্রচারণা শুরু করে যার ফলে হাজার হাজার মানুষ এর কবলে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাদকাসক্তের কবলে শিশু রয়েছে ৩৭ ভাগ, তরুণ ও কিশোরী রয়েছে ৬৩ ভাগ। তবে ১৮ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষ ৩.৩ শতাংশ মাদক সেবী এবং ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে রয়েছে ১.৫ শতাংশ।
তবে যেভাবে মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ুক না কেন তাদের এই ভয়াল কবল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বা বের করে আনতে হবে। তবে মানুষ যখন প্রথমবার মাদক ছেড়ে দেয় তখন সে ডিপ্রেশনে চলে যায় ঘুমাতে পারেনা, উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়, দুশ্চিন্তা তার জন্য খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এইসব রোগীরাই বারবার মাদকদ্রব্য গ্রহণে বেশি ভূমিকা রাখে। তাই তাদের বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্র, পরিবার এবং সামাজিকভাবে সমর্থন করে তাদের মাদকাসক্তের পথ থেকে বের করে আনতে হবে।
২০১৯ সালে প্রতিদিন ১১৪ জন মাদক সেবী মাদক নিরানময় কেন্দ্রে এসেছে চিকিৎসা নিতে অথচ এর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে এর সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৯ জন। বাংলাদেশের ২৩ টি জেলায় এখনো কোন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র তৈরি হয়নি তাই সরকারের উচিত দেশের প্রতিটি জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র তৈরি করা এবং মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে দেশের যুবসমাজ তথা পুরো দেশকে রক্ষা করা।
শেষ কথা
প্রিয় শিক্ষার্থী আমি আশা করি আমার লেখা এই অনুচ্ছেদ পড়ে তোমরা অনেক উপকৃত হবে। আর যদি তোমরা উপকৃত হও তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে বন্ধুদের মাঝে জানাবে।
Leave a comment