কীভাবে পানিতে ভাসে মাছ?
মাছ পানিজ প্রাণী। মাছ যেমন পানিতে স্থির হয়ে ভাসতে পারে, তেমনই পানির অনেক গভীরেও চলে যেতে পারে, আবার চাইলে পানি থেকে মাথা তুলে ভেসেও উঠতে পারে। কিন্তু মাছ কীভাবে পারে এসব করতে?
মাছ যখন পানির ওপরের দিকে থাকে, তখন তার দেহের ওপর পানির চাপ কম পড়ে। আর নিচের দিকে থাকলে পানির চাপ বেশি পড়ে।
তাই পানি যত গভীর হবে চাপ ততই বেশি। মাছ যখন একটা নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে ভাসে, তখন তার দেহের ওজন সমান পানি সরিয়ে দেয়। এ জন্য ভাসতে পারে। কিন্তু মাছের দেহের ওজন তো হঠাৎই বাড়বে বা কমবে না। তাহলে পানির ওপর নিচে ওঠানামা করবে কীভাবে কিংবা পানির নির্দিষ্ট তলে কীভাবে ভাসবে?
মাছের দেহের খাদ্যনালির কাছেই বেলুনের মতো একটা অঙ্গ থাকে। সেটা পটকা নামে পরিচিত। পটকার মাঝখানটা খাজের মতো হয়ে পটকাকে দুটি ভাগে ভাগ করে। পটকার গায়ে রয়েছে অসংখ্য রক্তজালক।
এই রক্তজালক থেকে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বেরিয়ে এসে পটকার প্রকোষ্ঠে বা খোপে জমা হয়। আবার পটকার পেছনের প্রকোষ্ঠ বা খোপ থেকে রক্তজালক ও গ্যাসগুলো শুষে নেয়। এভাবে পটকার প্রয়োজনে গ্যাস ভর্তি হয়, আর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে গ্যাস কমে যায়। পটকায় গ্যাস ভর্তি থাকলে তা ফুলে ওঠে, আর না থাকলে চুপসে থাকে। মাছ যখন গভীর পানিতে চলে যায়, তখন পানির চাপ হয় বেশি।
তখন বাড়তি চাপে পটকাও ছোট হয়ে যায়। ফলে অপসারিত পানির ওজন মাছের দেহের ওজনের অনেক কম হয়। তখন সহজেই মাছ পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।
আবার মাছ যখন একটু ওপরে ওঠে, তখন পটকা আবার গ্যাসে ভর্তি হয়ে ফুলে ওঠে। ফোলানো পটকা বেশি পানি অপসারিত করে, ফলে মাছের ওজন অপসারিত পানির ওজনের সমান হয়। এভাবে মাছ তখন পানির একটা নির্দিষ্ট তলে ভাসতে পারে। আবার মাছ যখন পানির ওপরের দিকে উঠে আসে, তখন পানির চাপ কমে যায়। এই সময় মাছের পটকা গ্যাসভর্তি থাকলে মাছ পানির ওপরে ভেসে ওঠে। এ জন্যই ওপরে ওঠার সময় মাছের পটকা থেকে গ্যাস বের হয়ে যায়। ওদিকে রক্তজালক পটকার গ্যাস শুষে নেয়। ফলে পটকার আয়তনও ছোট হয়ে আসে। তখন মাছের দেহে গভীর পানির মতো ভারসাম্য তৈরি হয়। মাছ স্থির হয়ে পানির ওপরের স্তরে ভেসে থাকে।
Leave a comment