ব্ল্যাক হোল বিভিন্ন রকম হতে পারে। কোন কোন ব্ল্যাক হোল আকারে অনেক বড়, আবার কোন কোন টি তুলনামূলক অনেক ছোট। ভরের দিকেও রয়েছে বিভিন্নতা। বিজ্ঞানীদের মতে ক্ষুদ্রতম ব্ল্যাক হোল একটি পরমাণুর সমানও হতে পারে। প্রধানত নিম্নোক্ত চার প্রকারের ব্ল্যকহোলের কথা জানা যায়;

১. মাইক্রো বা মিনি ব্ল্যাক হোল (Micro Black hole)

২. স্টেলার ব্ল্যাক হোল (Stella Blackhole)

৩. ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল (Intermediate Blackhole)

৪. সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (Super Massive Blackhole)

মাইক্রো বা মিনি ব্ল্যাক হোল (Micro Blackhole): এই জাতীয় ব্ল্যাক হোল গুলো আকারে অনেক ক্ষুদ্র। তবে এদের ভর কিন্তু মোটেও কম নয়। এদের ভর একটি পর্বতের সমানও হতে পারে। এই ধরনের ব্ল্যাক হোলকে বলা হয় Micro Blackhole। এ ধরনের ব্ল্যাক হোল সম্পূর্নই তাত্ত্বিক। যে সকল বস্তুর ভর আমাদের সূর্যের ভরের চেয়েও কম তাদের যদি ব্ল্যাক হোলে পরিণত করা যায় তবে তারা মাইক্রো ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে। এদের আকার একটি পরমাণুর সমানও হতে পারে। এই ধরনের ব্ল্যাক হোলকে Primordial Black Hole ও বলা হয়। এই ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে আমরা যা জানি তার পুরাটাই থিওরিটিক্যাল বা তত্ত্বীয়। বাস্তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখনও এই ধরনের ব্ল্যাক হোল দেখতে পারেন নি। গাণিতিকভাবে চিন্তা করলে সবকিছুই ব্ল্যাক হোলের পরিণত হতে পারে। প্রত্যেক নির্দিষ্ট ভরের বস্তুর জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধ আছে যে ব্যাসার্ধে বস্তুটি ব্ল্যাক হোল পরিণত হতে পারে। পূর্বেই যেটিকে শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

স্টেলার ব্লাকহোল (Stella Black hole): এটি বিশ্বাস করা হয় যে স্টেলার ব্ল্যাক হোল গুলি দুটি ভিন্ন উপায়ে গঠিত হতে পারে; হয় একটি বৃহত্তর নক্ষত্র সুপারনোভা বিস্ফোরণ ছাড়াই সরাসরি ব্ল্যকহোলে পতিত হয়ে বা প্রোটো-নিউট্রন নক্ষত্রের মধ্যে একটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। ৫ সৌর ভর থেকে শুরু করে ১০০ সৌর ভর পর্যন্ত নক্ষত্র গুলো সাধারনত স্টেলার ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ধারণা করা হয় যে, একটি নক্ষত্রের জীবনকালের শেষে নক্ষত্রটি যদি যথেষ্ট বড় (আমাদের সূর্যের ভরের ৩ গুণের বেশি) হয় তাহলে সেটা সুপারনোভার মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয়ে স্টেলার ব্লাকহোলে পরিণত হয়। Harvard-Smithsonian Center for Astrophysics এর মতে মিল্কিওয়েতে কয়েকশ মিলিয়ন স্টেলার ব্ল্যাক হোল রয়েছে।

ইন্টারমিডিয়েট ব্লাকহোল (Intermediate Black hole): একসময় ব্ল্যাক হোল বলতে শুধু স্টেলার ও সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলকেই বুঝানো হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা স্টেলার ও সুপার ম্যাসিভ এর মাঝামাঝি ভরের একধরনের ব্ল্যাক হোল খুঁজে পেয়েছেন। এই ধরনের ব্ল্যাক হোলকে বলা হয় ইন্টারমিডিয়েট ম্যাস ব্ল্যাক হোল (Intermediate Mass Black Hole)। ভরের তুলনায় এই ধরনের ব্ল্যাক হোল আমাদের সূর্যের থেকে ১০০ থেকে ১ লক্ষ্য গুন বড় হতে পারে। স্টেলার ব্ল্যাক হোলের মত এদের জন্মও হয় কোনো একটি বিপুল ভর বিশিষ্ট নক্ষত্রের মৃত্যু থেকে। ২০১৯ সালের ২১ মে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এন্ট্রেনায় একটি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরা পড়ে। ৮৫ ও ৬৫ সৌরভোরের দুটি স্টেলার ব্ল্যাক হোলের মিলনে ১৪২ সৌরভরের একটি ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল জন্মের সময় উৎপন্ন হয়েছিল ঐ মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল খুঁজে পাওয়া অনেক কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে এই ধরনের ব্ল্যাক হোল ছোট গ্যালাক্সির কেন্দ্রেও পাওয়া যায়। এই ধরনের ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে আমাদের এখনও অনেক জ্ঞানই অস্পষ্ট।

সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (Super Massive Black hole): সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল গুলোর ব্যাসার্ধ কয়েক শত মিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে. এদের ভর আমাদের সূর্যের ভরের তুলনায় কয়েক হাজার মিলিয়ন গুন বেশি হতে পারে। গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত কয়েকটি ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল ঘটনাক্রমে একসাথে হয়ে একটি সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলে রূপান্তরিত হতে পারে।

সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলগুলির ভর সাধারণত 0.1 থেকে 1 মিলিয়ন সৌরভরের চেয়ে বেশি হয়। অবশ্য কোন কোন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর মতে যাদের ভর কমপক্ষে 10 বিলিয়ন সৌরভর তাদের আল্ট্রাম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল বলে আখ্যায়িত করেন। বিজ্ঞানীদের মতে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ভর সর্বাধিক ৫০ বিলিয়ন সৌরভর হতে পারে। আবার একটি ১ বিলিয়ন সৌরভরের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্তের ব্যাসার্ধ ইউরেনাস গ্রহের কক্ষপথের সেমি-মেজর অক্ষের সাথে তুলনীয়। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের কিছু বৈশিষ্ট তাদেরকে নিম্ন-ভর বিশিষ্ট ব্ল্যাক হোল গুলি থেকে সম্পূর্ন আলাদা করেছে। এদের ঘটনা দিগন্তের আশেপাশের টাইডাল ফোর্স অপেক্ষাকৃত দুর্বল।

আবার ঘূর্ণনের ভিত্তিতে ব্ল্যাক হোল দুইভাগে ভাগ করা যায়:

১। ঘূর্ণণরত ব্ল্যাক হোল (Rotating or Spinning Black hole): এদের ঘূর্ণনরত ব্ল্যাক হোল বলা হয় কারণ এদের কৌণিক ঘূর্ণন রয়েছে। এরা পৃথিবী ও সুর্যের মত নিজ অক্ষরের ওপর ঘূর্ণনশীল। বস্তবজগতে সব ব্ল্যাক হোলই এই ধরনের।

২। ঘূর্ণনহীন ব্ল্যাক হোল (Non Rotating or Non Spinning Black hole): যে ব্ল্যাক হোল গুলো ঘূর্ণয়মন অবস্থায় থাকে না তাদের বলা হয় ঘূর্ণন হীন বা নন রোটেটিং ব্ল্যাক হোল। বাস্তব জগতে এদের কোনো অস্তিত্ব নেই। এরা শুধু মাত্র তত্ত্বীয়।

আরও পড়ুন –