কিছুদিন আগে আমরা অনেকেই কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে পরপর দুদিন দুটি মৃত তিমি ভেসে আসার খবর শুনেছি। ৯ এপ্রিল ও ১০ এপ্রিল মৃত তিমি দুটি ভেসে আসে হিমছড়ি সৈকতে। যাদের মধ্যে একটি ছিল পুরুষ তিমি এবং একটি ছিল স্ত্রী তিমি। ধারনা করা হয় পুরুষ সঙ্গীর মৃত্যুর শোকে স্ত্রী তিমিটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে [তথ্যসূত্র: প্রথম আলো]। আত্মহত্যার এই ঘটনাটি যদিও তিমির ক্ষেত্রে নতুন কিছু নয়। এর আগেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তিমি মাছের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তাদের নিজেদের শেষ করে দেওয়ার প্রবণতার বিষয়টি।
মানুষের আত্মহত্যার মূল কারণ হল হতাশা। আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামক হরমোনের নিঃসরণের হার কমে গেলে ধীরে ধীরে আমরা হতাশ হয়ে পরি। সামান্য হতাশা ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে চরম হতাশার দিকে এবং এক সময় আমরা এগিয়ে যাই আত্মহত্যার দিকে। মানুষ অত্যন্ত সেন্সেটিভ প্রাণী হওয়ার কারণে অহরহই আত্মহত্যার খবর আমরা পেয়ে থাকি। তবে প্রকৃতিতে এমনই আরও কিছু প্রাণী আছে যারা আত্মহত্যা করে থাকে।
শুরুতেই তিমি মাছের আত্মহত্যার একটি উদাহরণ আমরা পেয়েছি। তিমি মাছ পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাণী এবং এরা স্তন্যপায়ী। এরা সাধারণত জোড়া বেধে বিচরণ করে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সঙ্গীর মৃত্যুতে এরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তবে অনেক বিজ্ঞানীর মতে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, সমুদ্রে বিষাক্ততা, SONAR wave সহ বিভিন্ন কারণে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় । পরিবেশের পরিবর্তন বা দূষণের কারণে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণেও নিজেদেরকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেওয়ার মত পথ বেছে নেয়।
লেমিংদের দলবেঁধে আত্মহত্যার কথা আমরা অনেকেই হয়তো শুনে থাকব। লেমিং হল ইঁদুর প্রজাতির এক ধরনের প্রাণী। কথিত আছে যে এদের মধ্যে দলবেঁধে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। লেমিংদের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে ধারণা করা হয় যে যখন খাবারের অভাব দেখা দেয়, বসবাসের জায়গা অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে কিংবা লেমিংদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়, তখন নিজেদের ভারসাম্য বজায় রাখতে নিজেরাই দল বেঁধে আত্মহত্যা করে। সাধারণত যে কয়জন মারা গেলে তাদের দলের ভারসাম্য ঠিক থাকবে তারাই মূলত আত্মহত্যা করে। পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফ দিয়ে পড়ে তারা এ কাজটি করে থাকে । তবে লেমিং দের এই আত্মহত্যার কাহিনী নিয়েও বেশ বিতর্ক আছে।
আবার তিমিদের মত ডলফিনের আত্মহত্যার উদাহরণও পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে ঘটনাটি সেটি হল ক্যাথি নামের সার্কাসে খেলা দেখানো একটি ডলফিনের আত্মহত্যার ঘটনা। ক্যাথি (Kathy) নামের ডলফিনটি সারাজীবন বন্দী দশায় থাকায় এতোই বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় । ক্যাথির ট্রেইনার ও’ব্যারি একটি সাক্ষাৎকারে এই আত্মহত্যার ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তিনি জানান, ক্যাথি নিজের শ্বাস বন্ধ করে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
আত্মহত্যার এমন উদাহরণ বিড়াল, ঘোড়া সহ আরও বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় । বিড়াল তার বাচ্চা মারা গেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আবার ঘোড়া দীর্ঘদিন অপুষ্টিতে ভুগলে আত্মহত্যা করে থাকে। আবার পোষা কুকুর অনেকসময় তার মালিকের মৃত্যুর পর দিনের পর দিন সমাধিস্থলে বসে থাকা এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার মত ঘটনাও আমরা অনেকে হয়তো শুনে থাকব।
তবে এসকল ঘটনা নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্ক। কারণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের ধারনা এসকল ঘটনা কে ঠিক আত্মহত্যা বলা চলে না। তাদের মতে, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী আছে যারা বিভিন্ন সমস্যার ও প্রতিবন্ধকতার কারণে নিজেদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে যা অনেকসময় তাদের মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে নিয়ে আসতে পারে। তবে সেটি যাই হোক না কেন, অন্যান্য প্রাণীদের এমন নিজেদের শেষ করে দেওয়ার প্রবণতাকে মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতার সাথে তুলনা করলে খুব একটা পার্থক্য পাওয়া যাবে না।
Leave a comment