বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি [ADR] কাকে বলে? কি কি উপায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়? বাংলাদেশের ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’তে বিভিন্ন আইনের বিধানগুলো আলোচনা করুন।

 

কোন বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সচরাচর আদালত  ব্যবস্থার নির্ধারিত প্রক্রিয়া হতে বের হয়ে মামলার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু সমাধানের ক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বে বিকল্প  পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির দিকে যাচ্ছে।আদালতের আইনি প্রক্রিয়া মামলায় অনেক সময় দীর্ঘসূত্রিতা জন্ম দেয়, ফাইল চালাচালি সময় ও অর্থের অপচয় হয়ে থাকে। এসব থেকে মুক্তি পেতে আইনজ্ঞগণ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি [Alternative Dispute Resolution] পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে শুরু করলেন। এরপর থেকে সার্বিক বিবেচনায় দ্রুত বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে Alternative Dispute Resolution, ADR ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি [ADR] কাকে বলে?

What is Alternative Dispute Resolution?

যখন কোনো একটি বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে আইনসিদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে আইন-আদালতের সচরাচর প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে উক্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় তাকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি [Alternative Dispute Resolution] বলে।  সাধারণত কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আদালত ব্যবস্থা বা  বিচার বিভাগীয় [Judicial], আধা বিচার বিভাগীয় [Quasi-judicial] এবং বিচার বিভাগ বহির্ভূত[ Non Judicial] পদ্ধতিতে মীমাংসা করা হয়ে থাকে। বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির  উপায়গুলোর বেশিরভাগই বিচার বিভাগ বহির্ভূত[ Non Judicial] পদ্ধতির অন্তর্ভুক্তযেখানে বিচার বিভাগ কোন ভাবেই সম্পৃক্ত থাকে না। 

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উপায়সমূহ

[alternative methods of resolving disputes]

একটি বিরোধ নিষ্পত্তি ক্ষেত্রে মামলার জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে কিভাবেবা কোন উপায় অবলম্বন করে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়, সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-

১. আলাপ-আলোচনা [Negotiation]

আলাপ-আলোচনা [Negotiation] হল এমন একটি পদ্ধতি যেখানেই কোন বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে বিরোধের দুই পক্ষই যখন তৃতীয় পক্ষের সাহায্য ছাড়াই একটি সুবিধাজনক পরিণতির  দিকে পৌঁছে বা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে সমাধান করে থাকে। আলাপ-আলোচনার [Negotiation] মাধ্যমে শিল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬  এর  ২১০(২) ২১০(৩) উপধারায়  বলা আছে।  

২. মধ্যস্থতা কার্যক্রম[Mediation] 

এ পদ্ধতিতে কোন বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে পক্ষদ্বয়ের  মধ্যে নিরপেক্ষ তৃতীয় কোন পক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং কোন পক্ষের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দুটি পক্ষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা হয়। দেওয়ানী কার্যবিধির ৮৯[ক] এবং অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ২২  ধারাতে মধ্যস্থতা বিষয়ে বলা হয়েছে। 

৩.সালিশ প্রক্রিয়া[Arbitration]

সালিশ[Arbitration] প্রক্রিয়াটি অনেকটা মধ্যস্থতা পদ্ধতির অনুরূপ।এ কারণেই সালিশ কার্যক্রম [Arbitration] কে  মধ্যস্থতা কার্যক্রমের উন্নত সংস্করণ বলে মনে করা হয়। কেননা মধ্যস্থতা কার্যক্রমে মধ্যস্থতাকারী বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে পক্ষগণের উপর কোন পন্থা চাপিয়ে দিতে পারেন কিন্তু সালিশ কার্যক্রমের সালিশকারী (Conciliator)পক্ষগণের ওপর রায় চাপিয়ে দিতে পারে। এ ধরনের রায়কে রোয়েদাদ[Award] বলা হয়।  সালিশ[Arbitration] প্রক্রিয়াটি সালিশ আইন-২০০১  দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ আইনের ২১০ বিরোধ সালিসীর (Conciliation) মাধ্যমে নিষ্পত্তি কথা বলা হয়েছে। 

Dispute resolution methods

  • Arbitration;
  • Mediation;
  • Conciliation;
  • Case appraisal;
  • Expert determination.

Six-Step Method for Resolving Conflict

  • Defining the problem;
  • Come together and communicate;
  • Establishment relationships;
  • Developing an action plan;
  • Gaining commitment;
  • Providing feedback.

 

বাংলাদেশে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’তে বিভিন্ন আইনের বিধান

বাংলাদেশে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’র মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন আইনে প্রণীত যেসকল বিধান অনুসরণ করা হয়ে থাকে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো – 

ক্রমিক নম্বর

প্রাসঙ্গিক আইন  

ধারা বা  ধারাসমূহ

নিষ্পত্তিকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান

১.

দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮[Code of Civil Procedure, 1908]

ধারা ৮৯ক, ধারা ৮৯খ, ধারা৮৯[গ]

 

 

আদালত,  মধ্যস্থতাকারী  

২.

অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩

ধারা ২২, ধারা ২৩, ধারা ২৪

এবং

ধারা ২৫

৩.

পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫

ধারা ১০(৩), ১০(৪) এবং ১৩

আদালত

৪.

গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬

ধারা-৬(খ)

স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি

 এবং

উভয় পক্ষ কর্তৃক নিযুক্ত প্রতিনিধি 

৫.

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮[The Code of Criminal Procedure, 1898]

 

 

 

ধারা ৩৪৫

CrPC এর ৩৪৫ ধারার চার্টে উল্লিখিত আপোষযোগ্য অপরাধসমূহ 

৬.

সালিশ আইন, ২০০১[Arbitration Act, 2001]

ধারা ২২

৭.

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১

ধারা ৭

স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি

 এবং

স্বামী-স্ত্রী

 

৮.

বিরোধ মীমাংসা [পৌর এলাকা] বোর্ড আইন, ২০০৪ 

ধারা ৮,

ধারা ১১

ধারা ১৩

ধারা ১৬

 

 

 

গ্রাম আদালত

এবং

আইনবলে গঠিত বোর্ড

৯.

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬

ধারা ২১০

Conciliator

এবং

মালিক শ্রমিক প্রতিনিধি

১০.

অর্থ ঋণ আদালত আইন,২০০৩ 

ধারা ২২,

ধারা ২৪

 

আদালত,  মধ্যস্থতাকারী