[What is the precedent?]
কোন মােকদ্দমার পূর্ব-মীমাংসার নীতি অনুসরণ করাকে নজীর’ বা ‘স্টেয়ার ডেসাইসিস বলা হয়। অর্থাৎ পূর্ব-মীমাংসার এ নীতিকে পরবর্তীকালে আইনের নজীর হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এরূপ পূর্ববতী মােকদ্দমার মীমাংসার নীতি প্রত্যক্ষভাবে অনুরূপ মােকদ্দমায় পরবর্তীকালে তথা ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে অনুসৃত হয়ে থাকে। পূর্ববর্তী মামলার মীমাংসার নীতির প্রতি নির্ভরশীলতা এবং এর আলােকে অনুরূপ মামলায় পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকেই নজীর বা বিচার বিভাগের আইন বলা হয়ে থাকে। উচ্চ আদালতের রায় নিম্ন আদালত অগ্রাহ্য করতে পারেন না এবং উচ্চ আদালতের মীমাংসার নীতি নির্ভরযােগ্য আইন বলে নিম্ন আদালত তা অনুসরণ করতে বাধ্য। একেই বলা হয় বিচারক প্রণীত আইন, যা নজীর হিসেবে আইনের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে বিশেষভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
সুতরাং, কোন বিশেষ মামলার বিচারকালে আদালত যদি এমন সমস্যার সম্মুখীন হন যে, উক্ত মামলার বিচারের জন্য নির্ধারিত কোন আইন নেই, প্রথা নেই, এমনকি ইতিপূর্বে অনুরূপ কোন মামলার বিষয় কোন আদালতে সিদ্ধান্ত হয়নি, অথচ মামলাটি মীমাংসিত হওয়া প্রয়ােজন। আইন নেই, প্রথা নেই পূর্ব সিদ্ধান্ত নেই বলে আদালত উক্ত মামলা ফেরত দিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে আদালত প্রচলিত আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ন্যায়পরতা, সু-বিবেচনা ও সুবিচারের ভিত্তিতে তার নিকট আনীত মামলা মীমাংসাকল্পে সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। পরবর্তীতে অনুরূপ মামলায় উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকে পূর্ব দৃষ্টান্ত, বা পূর্ব মীমাংসার জের, বা নজির বা Precedents বা Stare decisis মতবাদ(স্টেয়ার ডেসাইসিস) বলা হয়।
মাইকেল জ্যাণ্ডার বলেন, পূর্ব দৃষ্টান্তগুলাে হচ্ছে মৌলিক উপকরণ, যা হতে আইনজীবি ও বিচারকগণ আইনের বিধিগুলাে বের করে থাকেন। বিচারক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ বা ছাত্র যিনিই হােন না কেন, তিনি সংবিধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না এমন বিষয়ে আইনের উল্লেখ করতে চাইলে, তাকে অবশ্যই মীমাংসসিত মামলার দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে।
উদাহরণ: আমাদের দেশে প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৮৮ ধারায় পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে যে, সন্তানের ভরণ-পােষণের মামলা বিচার করার অধিকার ম্যাজিস্ট্রেটের। অন্যদিকে সন্তানের ভরণ-পােষণের মামলা বিচার করার অধিকার দেশে প্রচলিত পারিবারিক আদালত বিদ্যমান থাকাবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অনুরূপ একটি মামলা দায়ের হলে উক্ত মামলার নােটিশ পেয়ে মামলার অপরপক্ষ সন্তানের ভরণপােষণের উক্ত মামলা বিচার করার এখতিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নেই মর্মে দাবী করে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেন। উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এক পর্যায়ে উপরােক্ত দুই আইনের দুই অবস্থানের সংঘাত নিরসন কল্পে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, “সন্তানের ভরণ-পােষণের বিচারের অধিকার একমাত্র পারিবারিক আদালতের, ম্যাজিস্ট্রেটের নয়। এ সিদ্ধান্তের নামই নজির বা রুলিং। বাংলাদেশের সকল । আদালত এ রুলিং মানতে বাধ্য।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, নজির বলতে এমন এক পৃষ্টান্ত বা রায়কে বােঝায়, যাকে পরবর্তী কোন মামলার আদর্শ বা আইন হিসেবে গণ্য করা হয় এবং পরবর্তী একই ধরণের কোন ঘটনা বা মামলার নিষ্পত্তি ইহার আলােকে করা হয়।
২। নজীরের শ্রেণী বিভাগ
(Classification of precedent)
স্যামন্ড নজীর বা পর্ব মীমাংসার নীতিকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা
(১) কর্তৃত্বমূলক (Authoritative):
যে সকল নজীর গ্রহণ করা বিচারকদের জন্য বাধ্যতামূলক তাকে কতৃমূলক নজীর বলা হয়। বিচার পরিচালনায় এগুলিকে গ্রহণ করা বা প্রত্যাখ্যান করার মত স্বেচ্ছাধীন। ক্ষমতা বিচারকদের নেই। যে সকল নজীর গ্রহণ করতে বিচারকগণ বাধ্য থাকেন না বটে । কর্তৃত্বমূলক নজীর আবার দু’ভাগে বিভক্ত, (১) চূড়ান্ত ও (২) শর্তসাপেক্ষ। চূড়ান্ত কতৃমূলক নজীর বিচারকগণ কোনরূপ প্রশ্ন উত্থাপন না করে মানতে বাধ্য। শর্তসাপেক্ষ কর্তৃত্বমূলক নজীরের ক্ষেত্রে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকগণ মানতে অস্বীকার করতে পারেন। কোন প্রতিষ্ঠিত আইনের শাসনের নীতি বা কোন আইনের পরিপন্থী। প্রতীয়মান হলে তা শর্তসাপেক্ষ কর্তৃত্বমূলক নজীর হিসেবে আদালত তা মানতে বাধ্য থাকেন না।
(২) অনুসরণযােগ্য (Persuasive):
বিচারকার্য পরিচালনায় গুরুত্ব সহকার বিবেচনা করে থাকেন, সেগুলিকে অনুসরণযােগ্য নজীর বলা হয়। এগুলির প্রভাব তাদের নিজস্ব গুণাগুণের উপর নির্ভর করে। এবং এগুলি অনুসরণ করার কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বিচারকার্যে যথেষ্ট। সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্ত এ । দেশের আদালতগুলি জন্য কতৃমূলক নজীর, কিন্তু ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্ত এ দেশের আদালতগুলির জন্য কর্তৃত্বমূলক নয়, এগুলি অনুসরণযােগ্য নজীর।
এগুলি ছাড়াও নজীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়- (১) ঘােষণামূলক ও (২) মৌলিক নজীর। দেশে প্রচলিত আইনের নীতি বা বিধি প্রয়ােগ হয় যে নজীরে তা হচ্ছে ঘােষণামূলক এবং আইনের নুতন নীতি সৃষ্টি করে যে নজীর তা হচ্ছে মৌলিক নজীর। ঘােষণামূলক নজীর অনুসরণ করা হয় এজন্য যে, এটা একটা প্রতিষ্ঠিত আইন, কিন্তু মৌলিক নজীর ভবিষ্যতের জন্য প্রয়ােগযােগ্য নতুন আইন।
৪। কর্তৃত্বমূলক ও অনুসরণযােগ্য নজিরের পার্থক্য
[distinction between authoritative and persuasive precedent]
কর্তৃত্বমূলক ও অনুসরণযােগ্য নজীরের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলি বিদ্যমান: |
Leave a comment