প্রশ্নঃ 
ক্ষমতার প্রকারভেদ আলোচনা কর। 

ভূমিকাঃ সাম্প্রতিককালে লোক প্রশাসনে যে সকল ধারণা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে, এগুলোর মধ্যে ‘ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব’-এর ধারণা নিঃসন্দেহে অন্যতম। তবে এখানে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বলতে মূলতঃ প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বকেই বুঝানো হয়েছে। 

ক্ষমতা বা প্রশাসনিক ক্ষমতা (Power or Administrative Power): বর্তমানে ‘ক্ষমতা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন্দ্রীয় ধারণায় পরিণত হয়েছে। তবে ক্ষমতা শব্দটি মূলতঃ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। সাধারণত ক্ষমতার ধারণাকে তিনটি অর্থে ব্যবহার করা যায়। যথাঃ

প্রথমত, সাধারণ অর্থে, ক্ষমতা হলো দক্ষতা বা সামর্থ্য।

দ্বিতীয়ত, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ক্ষমতাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এখানে ক্ষমতা বলতে একটি বিশেষ ধরনের দক্ষতাকে বুঝায়, যার সাহায্যে কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তিকে তার মতানুযায়ী কোন কাজ করতে বাধ্য করতে পারে।

তৃতীয়ত, কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজে বাধ্য করতে পারে। এ ক্ষমতাকে বল প্রয়োগের ক্ষমতা বলা চলে।

কিন্তু প্রশাসনিক ক্ষমতা বলতে সরকারি নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রশাসনিক সংস্থার নিকট অর্পিত ক্ষমতাকে বুঝায়। প্রশাসনিক সংস্থার ক্ষমতার উৎস প্রধানত দু’টি, যথাঃ আইন এবং আইন, রীতিনীতি ও প্রথার অনুমোদনসাপেক্ষে স্ববিবেচনামূলক ক্ষমতা।

ক্ষমতার প্রকারভেদ (Different Types of Power): ক্ষমতা প্রয়োগ করার হিসেবে ক্ষমতাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ (ক) অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা; (খ) বাহ্যিক ক্ষমতা। অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ক্ষমতা বলতে কোন একটি সংস্থার মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক অধীনস্থ কর্মীর নিয়ন্ত্রণকে বুঝায়; যেমনঃ শৃঙ্খলাজনিত বিষয়ে অধস্তন কর্মীদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক কার্যব্যবস্থা গ্রহণ। অন্যদিকে বাহ্যিক প্রশাসনিক ক্ষমতা সংগঠন বহির্ভূত ব্যক্তি বা নাগরিকের কার্য প্রভৃতি। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক এ দুই ধরনের প্রশাসনিক ক্ষমতারই উদ্দেশ্য হলো একই সরকারি নীতির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন।

এল. ডি. হোয়াইট (L. D. White) প্রশাসনিক ক্ষমতাকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথাঃ (ক) বলপূর্বক ক্ষমতা এবং (খ) বলপূর্বক নয় এরূপ ক্ষমতা।

(ক) বলপূর্বক ক্ষমতাঃ প্রশাসকরা বলপূর্বক ক্ষমতার ক্ষেত্রে জনগণকে সরকারি নীতি কাঠামোর মধ্যে কোন কার্যপন্থা গ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারেন। জনগণ উক্ত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে শাস্তি পেতে হবে। এরূপ শাস্তি যে কোন ধরনের হতে পারে। নিম্নোক্ত বিষয়ে প্রশাসকরা বলপূর্বক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেনঃ

১। লাইসেন্স। 

২। পরিদর্শন।

৩। তদন্ত।

৪। নির্দেশনা অথবা প্রশাসনিক আদেশ বলবৎকরণ।

৫। হস্তান্তরিত আইন।

৬। প্রশাসনিক বিচার।

৭। অনুমোদন।

(খ) বলপূর্বক নয় এরূপ ক্ষমতাঃ বলপূর্বক নয় এরূপ ক্ষমতার ক্ষেত্রে গোপনে বা প্রকাশ্যে কোনভাবেই কোন কিছু গ্রহণের জন্য নাগরিকের উপর শক্তি প্রয়োগ করা হয় না। এগুলো মেনে চলার জন্য নাগরিককে প্রভাবান্বিত করা হয় বা বুঝানো হয়। এল. ডি. হোয়াইট (L. D. White) এরূপ এগারটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। এগুলো নিম্নরূপঃ

১। সরকারি নীতির ঘোষণা।

২। আইনানুগ বাধ্যবাধকতার ঘোষণা – নীতি অমান্যকারীকে কোনভাবেই তা মেনে চলতে বাধ্য করা যায় না৷

৩। স্বেচ্ছামূলক বাণিজ্যিক দ্রব্যের মান নির্মাণ।

৪। দৃষ্টান্তমূলক নিয়মকানুন প্রবর্তন।

৫ । শিক্ষামূলক প্রচার।

৬। প্ৰদৰ্শনী।

৭ । সভা।

৮। আপোষের মাধ্যমে নিষ্পত্তি।

৯। সম্মতির মাধ্যমে ক্রয়।

১০। প্রচারের মাধ্যমে মান্য করানো।

১১। মান নিয়ন্ত্রণ।

উপসংহারঃ শিল্পায়ন, শহরায়ন, অর্থনৈতিক মন্দা এবং যুদ্ধ প্রভৃতি কারণে প্রশাসনের ভূমিকার দ্রুত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। জনগণও আজ অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে সরকারের অধিকতর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এতে করে ক্ষমতার বিভিন্ন রূ্প ক্রমাগত দৃশ্যমান হচ্ছে।