প্রশ্নঃ হিন্দু বিবাহের ধর্মীয় ও পার্থিব উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কে তুমি কি জান?

হিন্দু বিবাহের ধর্মীয় ও পার্থিব উদ্দেশ্যঃ হিন্দু আইনে বিয়ে হচ্ছে একটি সংস্কার (Sacrament), একটি ধর্মীয় আচার। ধর্মীয় বিধান মতে, বিয়ের মাধ্যমে নর ও নারীর মিলনকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এই মিলন শুধু জৈবিক প্রয়োজনের জন্যই নয় ধর্মীয় প্রয়োজনই বেশী। ধর্মশাস্ত্রে বিয়ের জন্য যথেষ্ট তাগিদ রয়েছে। যোগ্য পাত্রের নিকট কন্যা সম্প্রদানের মাধ্যমে যথেষ্ট পুণ্য রয়েছে, কেননা এর মাধ্যমে পুরুষের দেহের জাত কালিমা দূর হয় এবং নারীর আত্মশুদ্ধি হয়। অস্থির সহিত অস্থি এবং মজ্জার সহিত মজ্জার মিলন বলে গণ্য করা হয়। তাই স্ত্রীকে স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী বলা হয়। স্বামী যতদিন জীবিত থাকবেন স্ত্রীর কাছে ততদিন তিনি দেবতা হিসেবে গণ্য এবং ইহলোকে পরলোকে স্বামীর সকল কর্মের ও কর্মফলের তিনি অংশীদার। তাই স্ত্রীকে সহধর্মিনীও বলা হয়।

হিন্দু বিয়ের প্রকৃতি সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে ১৯৭৯ সালের গোপাল কৃষ্ণ বনাম মিথিনেশ কুমারী মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলেন, “হিন্দু আইন বিয়ে বিধি একটি ধর্মীয় আচার-কোন সামাজিক বা আইনগত চুক্তিমাত্র নয়। হিন্দু বিয়ে শুধু উচ্ছ্বাসের অবদমনের জন্য করা হয় না, বা এটা নিছক বাগদান মাত্র নয়। হিন্দু বিয়েকে আত্মার জীবনীশক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। এর ফলেই স্বামী-স্ত্রী মিলে ‘একজন’ এ রূপান্তরিত হয়। ‘সপ্তপদীর’ সপ্তম পদক্ষেপে কনে তার গোত্রান্তরিত হয়ে স্বামীর গোত্রের অন্তর্ভূক্ত হয় এবং এতে এমন একটি সম্বন্ধ স্থাপিত হয় যা নিছক বন্ধুত্ব হিসেবে বিবেচিত হয় না। এভাবে অনুষ্ঠিত হিন্দু বিয়ে অবিচ্ছেদ্য।”

বংশ রক্ষা, সুষ্ঠু সামাজিক ও যৌন জীবন যাপন ও ধর্ম রক্ষা করা বিয়ের উদ্দেশ্য হলেও মুখ্য উদ্দেশ্য পুত্ৰ লাভ। শাস্ত্র অনুসারে, “পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা।”

অর্থাৎ পুত্রহীন লোকদের স্বর্গে স্থান নেই। পুত্ৰ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, শ্রাদ্ধাদি দ্বারা পিতা ও পূর্বপুরুষদের আত্মাকে নরক হতে উদ্ধার করে স্বর্গাবাসে সহায়তা করতে পারে। এই আধ্যাত্মিক মোক্ষ লাভের জন্য বিয়ে একটি ধর্মীয় আচার।

ধর্মীয় দিক ছাড়াও বিয়ের একটি পার্থিব দিক রয়েছে। বিধিসম্মত বিয়েতে পক্ষগণের সম্মতি, কন্যা সম্প্রদান ও গ্রহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে দানের পার্থিব উপাদানগুলো অপরিহার্য। সম্পূর্ণ বিচারবুদ্ধিহীন পুরুষ কন্যা গ্রহণে অনুপযুক্ত। তাই তার বিয়ে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। তবে পাত্রের বিচার ও বুদ্ধিমত্তা যদি কম হয় এবং সে বিয়ের অনুষ্ঠানাদি পালনে যথার্থ ভূমিকা পালন করে তবে বিয়ে বৈধ বলে গণ্য হবে (রত্নেশ্বরী ব. ভগৱতী, ১৯৫০)। জন্মগত নির্বোধ ব্যক্তির বিয়ে তার পিতার সম্মতিতে হয়ে থাকলে এবং স্ত্রী পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকলে এ বিয়েকে বৈধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে প্রতারণামূলক কোন বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে তা অবৈধ হবে। তাই অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ন্যায় বিয়ে শুধু যৌনক্ষুধা নিবৃত্তির উদ্দেশ্যে গঠিত একটি চুক্তি কিংবা বংশবৃদ্ধির জন্য নর-নারীর মিলনের স্বীকৃতি নয়। এটি পার্থিব প্রয়োজন অপেক্ষা ধর্মীয় অনুশাসনের জন্য একান্ত অপরিহার্য।