প্রশ্নঃ আধুনিক মনের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? একটি আধুনিক সমাজব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
অথবা, আধুনিক মনের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? একটি আধুনিক সমাজব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধর।

ভূমিকাঃ বর্তমান বিশ্বের আধুনিকীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। সাম্প্রতিককালে শিল্পবিপ্লব ও নগরায়ণ একসাথে হচ্ছে। ফলে মানুষ নতুন এক পরিবেশ পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হচ্ছে। সাথে সাথে মানুেেষর মন- মানসিকতার পরিবর্তন আসছে। যেমন মানসিকতার কারণে মানুষ গতানুগতিক সমাজব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে প্রগতিশীল ও আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে আগ্রহী হয়, তাকে আধুনিক মন বলে।

আধুনিক মনের বৈশিষ্ট্যঃ মানুষের মন মানসিকতা যতো উন্নত হবে দেশ ও সমাজ ততো আধুনিক হবে। আধুনিক মনের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। নিম্নে আধুনিক মনের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলোঃ

(১) সাম্প্রতিক জ্ঞানঃ আধুনিক মনের অধিকারী হতে হলে সাম্প্রতিক বিষয়াবলি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। 

(২) ধর্মনিরপেক্ষতাঃ একজন আধুনিক মনের অধিকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ হতে হবে। তবে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা হলো সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ও কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু না বলা।

(৩) ভোগের মানসিকতাঃ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষসাধন ও শিল্পায়ণের ফলে নতুন নতুন জিনিস তৈরি হচ্ছে। এসব জিনিস ব্যবহার করার মূল উদ্দেশ্য সময় ও শ্রম বাঁচানো। একজন আধুনিক মনের অধিকারী ব্যক্তি এমন জিনিস ভোগ করতে আগ্রহী হবে। 

(৪) ভৌগোলিক গতিশীলতাঃ জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনেই মানুষকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে, একদেশে থেকে অন্যদেশে যেতে হয়। প্রয়োজনে তাগিদে স্থান পরিবর্তনের এ মন মানসিকতাই হলো ভৌগোলিক গতিশীলতা।

(৫) অংশগ্রহণঃ আধুনিকব্যবস্থায় সমাজে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন থাকে। সংগঠন যদি বৈধ ও কার্যক্রম যদি ইতিবাচক হলো তাহলে সংগঠনের এসকল কাজকর্মে অংশগ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে।

(৬) মানসিক নমনীয়তাঃ যেকোনো পরিবেশ পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার যে মানসিকতা থাকে তাকে, মানসিক নমনীয়তা বলে। আধুনিক মনের অধিকারী একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই মানসিক নমনীয়তা থাকতে হবে।

(৭) পাশ্চাত্য মূল্যবোধঃ সাধারণভাবে পাশ্চাত্য মূল্যবোধকে আধুনিকতার বাহ্যিক ব্যাপার হিসেবে ধরা হয়। আধুনিক মন মানসিকতার অধিকারী একজন ব্যক্তিকে পাশ্চাত্য মূল্যবোধে বিশ্বাসী হতে হয়।

আধুনিকীকরণ হলো উন্নয়নের একটি বিশেষ সম্পূর্ণ। আধুনিক একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে আধুনিক মন মানসিকতাসম্পন্ন লোক খুবই প্রয়োজন। আধুনিক মনের অধিকারী ব্যক্তিদের দ্বারাই সমাজে আধুনিক চিন্তাভাবনা ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে । একটি রক্ষণশীল সমাজ প্রগতিশীল হয়ে ওঠে। সমাজে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বিকাশ ঘটে। সাথে সাথে সমাজে সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিবর্তন দেখা যায়।

আধুনিক সমাজব্যবস্থাঃ প্রাচীন কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানে অনেক সময় আধুনিক বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হচ্ছে। আধুনিক সমাজব্যবস্থা মূলত আধুনিক যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আধুনিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বর্তমানে মানুষ এখন অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে যা অতীতে ছিল না। মূলত শিল্পায়ণ ও নগরায়ণের মধ্যদিয়েই আধুনিক সমাজব্যবস্থা বিকাশ লাভ করছে।

আধুনিক সমাজের বৈশিষ্ট্যঃ আধুনিক সমাজের স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। নিম্নে আধুনিক সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলোঃ

(১) শিল্পায়ণঃ আধুনিক সমাজের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শিল্পায়ণ। আধুনিক সমাজ হচ্ছে মূলত শিল্পভিত্তিক সমাজ। শিল্পায়ণের মাধ্যমে কল-কারখানা প্রতিষ্ঠার ফলে সমাজে নতুন নতুন পণ্যদ্রব্য উৎপাদিত হয় যা আধুনিক সমাজের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয়।

(২) নগরায়ণঃ আধুনিক সমাজ হচ্ছে নগরভিত্তিক সমাজ। সাধারণত নগরেই উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া পাওয়া যায়। একজন মানুষের প্রায় সকল প্রয়োজন নগরে পাওয়া যায়। আধুনিক সমাজের বিস্তৃতির লক্ষ্যে নতুন নতুন নগর গড়ে ওঠে। অর্থাৎ নগরায়ণ আধুনিক সামজের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

(৩) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ আধুনিক সমাজে অবশ্যই উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি একটি আধুনিক সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

(৪) রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানঃ আধুনিক সমাজের মানুষ হবে রাজনীতি সচেতন। সরকার গঠনে তাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ থাকবে। সাধারণ জনগণকে সরকার গঠন প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত করার জন্য একটি আধুনিক সমাজে অনেক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থাকে।

(৫) গণতান্ত্রিক মূল্যবোধঃ আধুনিক সমাজ হবে গণতান্ত্রিক সমাজ। আধুনিক সমাজের লোকজন অবশ্যই গণতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বাসী হবে।

(৬) উন্নত কৃষিব্যবস্থাঃ আধুনিক সমাজের কৃষিব্যবস্থা হবে উন্নত ধরনের। উন্নত কৃষিব্যবস্থার ফলে দেশের চাহিদা মেটানোর পরেও খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকবে। ফলে অকৃষিজ পেশায় নিয়োজিত লোকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বাড়তে থাকবে।

(৭) উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ আধুনিক সমাজে যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে উন্নত ধরনের। ফলে লোকজন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকার সুযোগ পায়।

(৮) ধর্মনিরপেক্ষতাঃ আধুনিক সমাজের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। এখানে সকল ধর্মের লোক সমান সুযোগ ভোগ করে। সকলেই তাদের ধর্মীয় কার্যাবলি সহজভাবে পালন করতে পারবে, কাউকে কোনো প্রকার বাধা দেয়া হয়না। 

(৯) উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাঃ আধুনিক সমাজে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হবে অনেকটা প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফলে শারীরিক পরিশ্রমের হ্রাস ঘটে। ইন্টারনেটের মাধ্যমেওে বাণিজ্যিক লেনদেন ও কোনোকাটা হয়।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক মনও আধুনিক সমাজ একে অপরের পরিপূরক। আধুনিক মন ছাড়া আধুনিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আধুনিক সমাজ গঠনে আধুনিক মন-মানসিকতা থাকা একটি অপরিহার্য বিষয়। সমাজের বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান আধুনিক মন-মানসিকতা অর্জনে সাহায্য করে থাকে। পরবর্তীতে আধুনিক মন-মানসিকতার অধিকারী হয়ে মানুষ আরও অনেক ধরনের আধুনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায় ফলে সমাজব্যবস্থা আরও আধুনিক হয়।