বিদ্বেষঃ বিদ্বেষ বলতে হিংসা বা ক্ষতি করার ইচ্ছাকে বুঝায় এবং সাধারণ অর্থে অসৎ মনোভাবকেই বিদ্বেষ বলা হয়। আইনের দৃষ্টিতে বিদ্বেষ দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
প্রথমতঃ একটা অন্যায় কাজ যথার্থ কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে করা।
দ্বিতীয়তঃ এমন উদ্দেশ্যে কোন কাজ করা যা আইনে সমর্থনীয় নয়। বিদ্বেষ দুই রকমের হতে পারে– বাস্তবে বিদ্বেষ (malice-in-fact) এবং আইনে বিদ্বেষ (malice-in-law)। বাস্তবে বিদ্বেষকে প্রকাশ্য বা প্রকৃত বিদ্বেষ বলে এবং আইনে বিদ্বেষকে সুপ্ত বিদ্বেষ বলে। যথার্থ কারণ ছাড়া কোন অন্যায় কাজ করাই হচ্ছে আইনে বিদ্বেষ। আইনের বিদ্বেষ সর্বদা প্রতিকারযোগ্য কিন্তু কতিপয় ক্ষেত্র ছাড়া প্রকৃত বিদ্বেষ প্রতিকারযোগ্য নয়। কেননা খারাপ মোটিভের জন্য একটা বিধি সম্মত কাজ অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। পক্ষান্তরে, একটা অন্যায় কাজ করলে ভাল ‘মোটিভ’ দিয়ে রেহাই পাওয়া যায় না।
বাস্তবে বিদ্বেষ ও আইনে বিদ্বেষ এর মধ্যে পর্থক্যঃ (Distinction between malice in fact and malice in law):
১) বাস্তবে বিদ্বেষ হচ্ছে অসৎ মনোভাব এবং আইনে বিদ্বেষ হচ্ছে হিংসামূলক অন্যায় কাজ।
২) বাস্তবে বিদ্বেষ হচ্ছে প্রকৃত বা ব্যক্ত বিদ্বেষ যা ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত হয়; আইনে বিদ্বেষ হচ্ছে অব্যক্ত, যা আইনের দ্বারা প্রমাণিত হয় বা আইনে অনুমিত হয় (presumed)। যথার্থ কারণ ছাড়া কোন কাজ ইচ্ছাকৃত করা অথবা এমন এক উদ্দেশ্যে কোন কাজ করা যা আইনে সমর্থনীয় নয়—তা আইনের বিদ্বেষ।
৩) বাস্তবে বিদ্বেষ এর জন্য সাধারণতঃ কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। তবে এর কিছু ব্যতিক্রম আছে যে ক্ষেত্রে অসৎ মনোভাব প্রাসঙ্গিক।
সেগুলি হলোঃ
ক) বিদ্বেষ প্রসূত ফৌজদারী মামলা দায়ের।
খ) মানহানি— যে ক্ষেত্রে সীমিত বিশেষ অধিকার অথবা নিরপেক্ষ মন্তব্য আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য উত্থাপন করা হয়।
গ) অনিষ্টকর মিথ্যা (Injurious falsehood)।
ঘ) ষড়যন্ত্র।
ঙ) উৎপাত—যদিও উৎপাতের জন্য বিদ্বেষ প্রয়োজনীয় উপাদান নয় কিন্তু যেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয় সেক্ষেত্রে অসৎ মনোভাব উৎপাতকে প্রতিষ্ঠিত করে।
পক্ষান্তরে, আইনে বিদ্বেষ সর্বদা প্রতিকারযোগ্য কারণ। প্রতিটি অন্যায় কাজের মধ্যে আইনে বিদ্বেষ নিহিত থাকে। তবে যথার্থ কারণ থাকলে বা সাধারণ ব্যতিক্রমের অন্তর্ভূক্ত হলে কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না।
সর্বপরি, ঘটনায় বিদ্বেষ ও আইনে বিদ্বেষের মধ্যে পার্থক্য অনেক ক্ষেত্রেই বড় সূক্ষ্ম।
Leave a comment