প্রশ্নঃ স্বীকারোক্তি কি? স্বীকারোক্তি ও স্বীকৃতির মধ্যে পার্থক্য কি তা লিখ। বিচার বহির্ভূত স্বীকারোক্তির সাক্ষ্যগত মূল্য কি?

স্বীকারোক্তিঃ সাক্ষ্য আইনে স্বীকারোক্তি বা দোষ স্বীকারের কোন সংজ্ঞা দেয়া হয় নি। সাধারণত অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় নিজের দোষ স্বীকার করে যে বিবৃতি দেয় তাকে স্বীকারোক্তি বলে। সাক্ষ্য আইনে স্বীকারোক্তি বলতে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রদত্ত দোষ স্বীকারমূলক বিবৃতি বুঝায় এবং ম্যাজিস্ট্রেট ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তির নিকট এরূপ বিবৃতি দিলে তা বিচার বহির্ভূত স্বীকারোক্তি বুঝায়।

তবে শুধুমাত্র অপরাধটি স্বীকার করলে চলবে না অপরাধের সহিত সংযোগও স্বীকার করতে হবে । স্বীকারোক্তি হচ্ছে ফৌজদারী অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় এবং সাক্ষ্য আইনের ২৪ হতে ২৬ ধারায় এ সম্পর্কে বিধি বিধান রয়েছে।

স্বীকারোক্তি ও স্বীকৃতির মধ্যে পার্থক্যঃ স্বীকারোক্তি ও স্বীকৃতির মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যগুলি পরিলক্ষিত হয়।

(১) স্বীকারোক্তি বলতে অপরাধী কর্তৃক স্বেচ্ছায় অপরাধ স্বীকার করাকে বুঝায়।

অপরদিকে ‘স্বীকৃতি’ হচ্ছে মৌখিক বা লিখিত উক্তি যা বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক ঘটনা সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তের সূচনা করে ৷

(২) স্বীকারোক্তির কোন সংজ্ঞা সাক্ষ্য আইনে দেয়া নাই। তবে স্বীকারোক্তি স্বীকৃতির একটি শাখা যা শুধু ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই বলা হয় যে, সকল স্বীকারোক্তিই স্বীকৃতির পর্যায়ভুক্ত, কিন্তু সকল স্বীকৃতিই স্বীকারোক্তি নয়। 

পক্ষান্তরে, স্বীকৃতির সংজ্ঞা ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনে ১৭ ধারায় দেয়া হয়েছে। এর পরিধি স্বীকারোক্তির চেয়ে ব্যাপক এবং সাধারণত দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য হলেও ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রেও ইহা প্রযোজ্য হতে পারে।

(৩) স্বীকারোক্তি অবশ্যই অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক স্বেচ্ছামূলকভাবে প্রদত্ত হতে হবে। কিন্তু স্বীকৃতির ক্ষেত্রে এরূপ কোন বাধা-নিষেধ নেই। একজন আগন্তুকের স্বীকৃতিও গ্রহণযোগ্য।

(৪) স্বীকারোক্তি গ্রহণীয় হতে হলে সাক্ষ্য আইনের ২৪ ও ২৫ ধারায় বর্ণিত শর্তসমূহ পূরণ করতে হয়। কিন্তু সেগুলি স্বীকৃতি হিসেবেও গণ্য হতে পারে।

স্বীকৃতি যখন স্বীকারকারীর স্বার্থ বিরুদ্ধ হয় তখন তা আদালতে গ্রহণযোগ্য । যদি তার স্বার্থের অনুকূলে হয় তখন তা গ্রহণযোগ্য নয় ৷

বিচারকার্য বহির্ভূত স্বীকারোক্তির সাক্ষ্যগত মূল্যঃ বিচারকার্য বহির্ভূত স্বীকারোক্তি অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রদত্ত নয় এমন স্বীকারোক্তি যদি সন্দেহমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হয় তবে তা একটি মূল্যবান সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হতে পারে। কেননা, ইহা সরাসরিভাবে অপরাধকারীর নিকট হতে উদ্ভূত হয়। তবে দোষ স্বীকার স্বেচ্ছাপ্রদত্ত তা নিশ্চিত হতে হবে। ইহা কোন প্রকার বিচারকার্য বহির্ভূত দোষ স্বীকারের সমর্থনকারী সাক্ষ্য হলেই তার উপর নির্ভর করা যায়। এ সম্পর্কে সাক্ষ্য আইনের ২৪, ২৫ ও ২৬ ধারায় বিধি বিধান রয়েছে।

২৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ফৌজদারী মামলার আসামী দোষ স্বীকার করলে যদি প্রতীয়মান হয় যে, ক্ষমতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তির দ্বারা প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতি দানের ফলে আসামী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে দোষ স্বীকার করেছে এবং আদালত যদি মনে করেন যে, এর ফলে আসামী মামলায় প্রার্থিব কোন সুবিধা পাবে বা কোন অসুবিধা এড়াতে পারবে বলে আসামীর ধারণা হওয়ার যথেষ্ট কারণ ঘটেছিল, তবে সেই স্বীকারোক্তি অপ্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ ক্ষমতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তির প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদির দরুণ স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক হবে না।

২৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি পুলিশ অফিসারের নিকট কোন স্বীকারোক্তি করে থাকলে তা তার বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যাবে না।

২৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, পুলিশ অফিসারের হেফাজতে থাকাকালে কোন ব্যক্তি স্বীকারোক্তি করলে তা যদি কোন ম্যাজিস্ট্রেটের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে না হয়, তাহলে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যাবে না। অর্থাৎ, পুলিশের নিকট অপরাধ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি অগ্রাহ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

উপরিউক্ত ধারাগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, নিম্নোক্ত শর্তগুলির উপর বিচার বহির্ভূত স্বীকারোক্তির সাক্ষ্যগত মূল্য নির্ভর করে- 

(১) স্বীকারোক্তি প্রদানের সময় দোষ স্বীকারকারী আসামী ছিল কি’না। আসামী না থাকলে তা স্বীকারোক্তি হিসেবে গণ্য হবে না,

(২) স্বীকারোক্তিটি প্রকৃত অর্থে দোষ-স্বীকারের পর্যায়ে পড়ে কি-না। আত্মরক্ষার্থে অপরাধটি সংঘটন করেছিল এমন বক্তব্য স্বীকারোক্তি নয়।

(৩) স্বীকারোক্তিটি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত কি-না। কোনরূপ প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতির দ্বারা স্বীকারোক্তি আদায় করলে তা আইনত গ্রাহ্য হবে না।

এভাবে বিচার বহির্ভূত স্বীকারোক্তির সাক্ষ্যগত মূল্য নিরূপণ হয়৷