উত্তরঃ সাক্ষ্য আইনের প্রধান নীতিগুলোঃ সাক্ষ্য আইনের মূলনীতিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম খণ্ডে রয়েছে কি প্রমাণ হবে এবং দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে কি ধরনের প্রমাণ দিতে হবে এবং তৃতীয় খণ্ডে রয়েছে কার দ্বারা ও কি পদ্ধতিতে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে এবং এর ফলাফল কি।
সাক্ষ্য আইনের প্রথম খণ্ডে ৬ হতে ৫৫ ধারায় প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ-
(ক) মূল ঘটনা বা প্রাসঙ্গিক ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ঘটনাবলী (৬ হতে ১৬ ধারা);
(খ) মূল ঘটনা বা প্রাসঙ্গিক ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত উক্তি (১৭ হতে ৩৯ ধারা);
(গ) মূল ঘটনা বা প্রাসঙ্গিক ঘটনার সাথে সংযুক্ত সিদ্ধান্তবলী (৪০ হতে ৪৪ ধারা);
(ঘ) মূল ঘটনা বা প্রাসঙ্গিক ঘটনার সাথে সংযুক্ত মতামত (৪৫ হতে ৫১ ধারা);
(ঙ) মূল ঘটনা বা প্রাসঙ্গিক ঘটনার সাথে সংযুক্ত ব্যক্তিগণের চরিত্র (৫২ হতে ৫৫ ধারা)।
কিভাবে প্রমাণ করতে হবে (৫৬-১০০ ধারা): সাক্ষ্য আইনের দ্বিতীয় খণ্ডে বিবৃত রয়েছে কিভাবে প্রমাণ করতে হবে। এটা একটা মৌলিক নীতি যে, কোন ঘটনার অস্তিত্ব সম্পর্কে যদি ‘প্রিজাম্পশন’ বা ধরে নেয়ার বিধি না থাকে তবে যে পক্ষ সে ঘটনার অস্তিত্ব সম্পর্কে বিশ্বাস করাতে চায় তাকেই তা আদালতে প্রমাণ করতে হবে। তবে এই বিধির দুটো ব্যতিক্রম রয়েছে যেক্ষেত্রে প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। এগুলো হচ্ছে,
(১) যেগুলো আদালত দৃষ্টিগোচরে বা ‘জুডিশিয়াল নোটিশ নিয়ে থাকেন যার বিবরণ ৫৬ ও ৫৭ ধারায় রয়েছে।
(২) যা অপর পক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত (ধারা ৫৮)। ৫৯ ও ৬০ ধারাগুলি হচ্ছে মৌখিক সাক্ষ্যের বিষয়বস্তু। যা দলিলের বিষয়বস্তু নয়, তাছাড়া অন্য সকল বিষয় মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায়। তবে মৌখিক সাক্ষ্যকে প্রত্যক্ষ হতে হবে। “সব চেয়ে উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য দিতে হবে” এই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে সমগ্র সাক্ষ্য আইনটি।
সাক্ষ্য উপস্থাপন ও এর পরিমাণ (ধারা-১০১-১৬৭): সাক্ষ্য আইনের তৃতীয় ও শেষ খণ্ডে অনেকগুলো সূত্র লিপিবদ্ধ রয়েছে। বিচার্য বিষয়টি প্রমাণের ভার কার উপর রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ ১০১ হতে ১১৪ ধারায় রয়েছে। নিবৃত্তির নীতি বিবৃত হয়েছে ১১৫ হতে ১১৭ ধারায়। কোন ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত ঘোষণার, কাজের বা নিবৃত্তির দ্বারা যদি অন্য কোন ব্যক্তির মনে কোন বিষয় সম্পর্কে একটি ধারণার সৃষ্টি হয় এবং ঐ ধারণার বশবর্তী হয়ে সে ব্যক্তি কোন কাজ করে তবে পরবর্তীকালে প্রথম ব্যক্তি সেই বিষয়টিকে আর অস্বীকার করতে পারে না (১১৫ ধারা)। নিবৃত্তির এই নীতিটি যে সূত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত সেই সূত্রটির বাংলা অনুবাদ হচ্ছে এই যে, কোন ব্যক্তির পরস্পর বিরোধী বক্তব্য গ্রহণীয় নয়।
সাক্ষীর যোগ্যতা, বাধ্যবাধকতা গ্রহণীয়তা ইত্যাদির নীতিসমূহ ১১৮ হতে ১৩৪ ধারায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। ১১৮ ধারার বিধান মতে প্রত্যেক ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয়ার অধিকারী। তবে অপরিণত বয়স, অত্যধিক বার্ধক্য, শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা বা এ ধরনের অন্য কোন কারণে যদি জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দিতে অক্ষম বলে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় তবে সে ব্যক্তি সাক্ষী হতে পারবে না।
Leave a comment