প্রশ্নঃ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তি- ১৯৯৬ কে কিভাবে মূল্যায়ন করবে? ফারাক্কা চুক্তির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। দখল ও সমর্পণের পার্থক্য কি? বাংলাদেশ অর্জিত না কি হৃত?
ভূমিকাঃ আন্তর্জাতিক নদী আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে নদীর ব্যবহার বিশেষ করে আন্তর্জাতিক নদীর ব্যবহার অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং আন্তর্জাতিক নদীর নানামূখী ব্যবহারের ফলে এর গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তি-১৯৯৬ কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেঃ
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে প্রধান দ্বি-পাক্ষিক সমস্যা হলো গঙ্গার পানি বন্টন সমস্যা। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা নিরসনে বার বার বৈঠক করলেও সমাধান মেলেনি। ভারত বার বার বৈঠকের সিদ্ধান্ত লংঘন করেছেন। বৈটকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে পরেমাণ পানি বাংলাদেশকে দেওয়ার কথা ভারত তা কখনই দেয়নি। যারফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার ফলে এই সমস্যা আরো প্রকট হয়। অবশেষে ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বন্টন বিষয়ে ৩০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে ফারাক্কার সমস্যার একটি সমাধান হয়৷
ফারাক্কা চুক্তির বৈশিষ্ট্য : নিম্নে ফারাক্কা চুক্তির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-
(১) পানি প্রদান : দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত চুক্তি অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশকে পানি প্ৰদান করবে।
(২) পানি প্রদানের সময় : প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে প্রতি ১০ দিন অন্তর ভারত এই পানি প্রদান করবে।
(৩) পানি বন্টনের অনুপাত : চুক্তি অনুযায়ী- ফারাক্কায় যদি ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানি থাকে তাহলে পানি বন্টনের অনুপাত সমান হবে। পানি যদি ৭০-৭৫ হাজার কিউসেক থাকে তাহলে বাংলাদেশ পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক এবং বাকিটা ভারত পাবে। পানি যদি ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি থাকে তাহলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক এবং বাকিটা বাংলাদেশ পাবে।
(৪) সরকারি সিদ্ধান্ত : পানির প্রবাহ যদি ৫০ হাজার কিউসেকের কম হয় তাহলে দুই দেশের সরকার আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আর এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে পানির পরিমাণ ৯০ ভাগের কম হবে না।
(৫) এপ্রিল মাসে পানির পরিমাণ : এপ্রিল মাসের প্রথম ১০ দিন এবং শেষ ১০ দিন বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে। আর মাঝখানের ১০ দিন ২৭ হাজার ৬৩৩ কিউসেক পানি পাবে।
(৬) যৌথ কমিটি : দুই দেশের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করবে। এই কমিটি প্রতিদিনের পানি প্রবাহ ও নাব্যতা পর্যবেক্ষণের জন্য ফারাক্কা ও হার্ডিজ ব্রীজে লোক নিয়োগ করবে।
(৭) রিপোর্ট পেশ : উক্ত কমিটি তাদের সংগৃহীত তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট উভয় দেশের সরকারের নিকট পেশ করবে।
(৮) উভয় দেশের পর্যলোচনা বৈঠক : ৫ বছর পর অথবা তার আগে অথবা উভয় দেশ যখন প্রয়োজন মনে করবে তখন পর্যালোনা বৈঠক করবে।
উপসংহারঃ আন্তর্জাতিক নদী আইন মূলত: বিভিন্ন প্রথার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ নদী ব্যবহারের বিভিন্ন প্রথা পরবর্তীতে আইনে রূপ লাভ করেছে।
Leave a comment