প্রশ্নঃ রেজিষ্ট্রেশনের ব্যাপারে শঠতা বা প্রতারণা বা তঞ্চকতা কাকে বলে? রেজিষ্ট্রেশন আইনে কোন কোন অপরাধ দণ্ডনীয়?

ভূমিকাঃ রেজিষ্ট্রেশন আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এটি ১৯০৮ সালের আইন। কোন দলিল রেজিষ্ট্রেশন করা, কোথায় রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে, কে উপস্থাপন করবে ইত্যাদি বিষয় রেজিষ্ট্রেশন আইন দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। রেজিষ্ট্রেশন বা নিবন্ধন আইন সাক্ষ্য আইনকে পরিপূর্ণতা দান করেছে।

রেজিষ্ট্রেশনের ব্যাপারে শঠতা (Fraud on registration) বা প্রতারণা বা তঞ্চকতা কাকে বলেঃ

রেজিষ্ট্রেশন আইনে শঠতা বা প্রতারণা বা তঞ্চকতার কোন সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। তবে বলা যায় ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মিথ্যা বিবৃতি প্রদান করলে তাকে শঠতা বা প্রতারণা বা তঞ্চকতা বলে।

রেজিষ্ট্রেশন আইনের ৮২ ধারা অনুযায়ী নিম্নের বিষয়গুলি ক শঠতা বা প্রতারণা বা তঞ্চকতা হিসেবে গণ্য-

(১) মিথ্যা বিবৃতি প্রদান : অফিসারের সামনে শপথ গ্রহণ করে অথবা না করে, নথিভুক্ত হোক বা না হোক স্বেচ্ছায় মিথ্যা বিবৃতি দান করলে শঠতা বা প্রতারণা বা তঞ্চকতা হিসেবে গণ্য হবে।

(২) মিথ্যা নকল প্রদান : অফিসারের সামনে এই আইনের ১৯ অথবা ২১ ধারা অনুযায়ী কার্য পরিচালনার সময় দলিলের মিথ্যা নকল প্রদান করলে বা মিথ্যা অনুবাদ প্রদান করলে বা মিথ্যা নকশা প্রদান করলে বা মিথ্যা পরিকল্পনা প্রদান করলে শঠতা বা প্রতারণা বা তঞ্চকতা হিসেবে গণ্য হবে।

(৩) অন্য ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচয় প্রদান করলে : এই আইন অনুযায়ী কোন কার্যক্রম পরিচালনার সময় অন্য ব্যক্তিরূপে নিজেকে পরিচয় দিলে এটিও শঠতা বা প্রতারণা বা তঞ্চকতা হিসেবে গণ্য হবে।

রেজিষ্ট্রেশন আইনে কোন কোন অপরাধ দণ্ডনীয়ঃ রেজিষ্ট্রেশন আইনের ৮১-৮৪ ধারায় এই আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-

(১) ক্ষতি জানার পরও রেজিষ্ট্রি করলে : এই আইন অনুযায়ী রেজিষ্ট্রিকারী অফিসার বা তার অফিসে কর্মরত প্রত্যেক ব্যক্তি দাখিলকৃত কোন দলিল, অনুবাদ ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে হতে পারে জানা সত্বেও উক্ত দলিল রেজিষ্ট্রি করলে ৭ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে৷

(২) প্রতারণা বা শঠতা বা তঞ্চকতা করলে : [ধারা-৮২]

(ক) মিথ্যা বিবৃতি প্রদান : অফিসারের সামনে শপথ গ্রহণ করে অথবা না করে, নথিভুক্ত হোক বা না হোক স্বেচ্ছায় মিথ্যা বিবৃতি দান করলে শঠতা বা প্রতারণা বা তঞ্চকতা, হিসেবে গণ্য হবে।

(খ) মিথ্যা নকল প্রদান : অফিসারের সামনে এই আইনের ১৯ অথবা ২১ ধারা অনুযায়ী কার্য পরিচালনার সময় দলিলের মিথ্যা নকল প্রদান করলে বা মিথ্যা অনুবাদ প্রদান করলে বা মিথ্যা নকশা প্রদান করলে বা মিথ্যা পরিকল্পনা প্রদান করলে শঠতা বা প্রতারণা বা তঞ্চকতা হিসেবে গণ্য হবে।

(গ) অন্য ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচয় প্রদান করলে : এই আইন অনুযায়ী কোন কার্যক্রম পরিচালনার সময় অন্য ব্যক্তিরূপে নিজেকে পরিচয় দিলে এটিও শঠতা বা প্রতারণা বা তঞ্চকতা হিসেবে গণ্য হবে।

(ঘ) দণ্ড : উপরোক্ত কাজের জন্য ৭ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে৷

(৩) টাউটের শাস্তি : টাউট হিসেবে কোন কাজ করলে তার ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। [ধারা-৮২(এ)]

(৪) ফৌজদারিতে সোপর্দ : সরকারি পদে থেকে কোন ব্যক্তি অপরাধ করলে এবং রেজিষ্ট্রারের গোচরীভূত হলে উক্ত এলাকার ইন্সপেক্টর জেনারেল অথবা রেজিষ্ট্রার অথবা সাব-রেজিষ্ট্রার কর্তৃক বা তাদের অনুমতি সাপেক্ষে তাকে কৌজদারিতে সোপর্দ করা যায়। দ্বিতীয় শ্রেণির নিচে নয় এমন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এই আইনে দণ্ডনীয় অপরাধের বিচার হবে। [ধারা-৮৩]

উপসংহারঃ কোন দলিল নিবন্ধনের জন্য রেজিষ্ট্রারের নিকট বা নিবন্ধকের নিকট পেশ ক হলে উক্ত অফিসারকে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। উক্ত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তার নিজের যেমন শাস্তি হতে পারে, আবার দলিল পেশকারী পক্ষ কোন প্রতারণা করলে তাদেরও শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।