প্রশ্নঃ নামজারির দরখাস্তের কারণে উদ্ভূত কোন সিদ্ধান্ত কি চূড়ান্ত? নামজারির মামলার বিরুদ্ধে আপীল, রিভিউ ও রিভিশনের বিধান উল্লেখ কর।

ভূমিকাঃ ভূমি আইনে খতিয়ানের ন্যায় নামজারি বা মিউটেশনও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নামজারির মাধ্যমে সরকারি রেকর্ডে পুরাতন মালিকের নামের স্থানে নতুন মালিকের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। জমি হালনাগাদ করার একটি প্রক্রিয়া হলো নামজারি।

নামজারির দরখাস্তের কারণে উদ্ভূত কোন সিদ্ধান্ত কি চূড়ান্তঃ বিক্রয়, বিনিময়, দান ইত্যাদি কারণে জমির মালিকানা হস্তান্তর হয়। এক্ষেত্রে দলিল রেজিষ্ট্রির পর হস্তান্তরের নোটিশ সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে পাঠাতে হয়। সহকারি কমিশনার (ভূমি) নামজারির একটি নথি খুলবেন এবং তদন্তের জন্য তহসিল অফিসে পাঠাবেন। তহসিলদার সরেজমিন রেকর্ড যাচাই করে প্রতিবেদন দিবেন। উক্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সহকারি কমিশনার (ভূমি) সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ দিয়ে শুনানি করবেন এবং সংশোধনের আদেশযুক্ত নামজারি মঞ্জুর বা না মঞ্জুর ক্রমে নিষ্পত্তি করবেন।

কোন ব্যক্তি নামজারির জন্য আবেদন করলে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে যে রায় প্রদান করা হয় উক্ত রায় চূড়ান্ত বলে ধরা হয়। তবে আবেদনকারী যদি উক্ত রায়ে সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি অত্র আইনের ১৪৭ এবং ১৪৮ ধারা অনুযায়ী নিম্নোক্তভাবে আপীল করতে পারেন-

নং 

যার আদেশের বিরুদ্ধে আপীল

যার নিকট আপীল

কত দিনের মধ্যে

০১

রাজস্ব অফিসার

কালেক্টর

৩০ দিন

০২

কালেক্টর 

বিভাগীয় কমিশনার

৬০ দিন 

০৩

বিভাগীয় কমিশনার

ভূমি আপীল বোর্ড

৯০ দিন 

এছাড়া আবেদনকারী অত্র আইনের ১৪৯ ধারা অনুযায়ী রিভিশন করতে পারেন এবং ১৫০ ধারা অনুযায়ী রিভিউ করতে পারেন।

নামজারির মামলার বিরুদ্ধে আপীলঃ কোন ব্যক্তি নামজারির জন্য আবেদন করলে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে যে রায় প্রদান করা হয় উক্ত রায় চূড়ান্ত বলে ধরা হয়। তবে আবেদনকারী যদি উক্ত রায়ে সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি অত্র আইনের ১৪৭ এবং ১৪৮ ধারা অনুযায়ী আপীল দায়ের করতে পারেন। নিম্নে উক্ত আপীলের বিধান ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো-

 

নং 

যার আদেশের বিরুদ্ধে আপীল

যার নিকট আপীল

কত দিনের মধ্যে

০১

রাজস্ব অফিসার

কালেক্টর

৩০ দিন

০২

কালেক্টর 

বিভাগীয় কমিশনার

৬০ দিন 

০৩

বিভাগীয় কমিশনার

ভূমি আপীল বোর্ড

৯০ দিন 

নামজারির মামলার বিরুদ্ধে রিভিউঃ রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৫০ ধারা অনুযায়ী নিম্নে রিভিউ এর বিধান উল্লেখ করা হলো-

* যে অফিস থেকে আদেশ প্রদান করা হয় সেই অফিসেই রিভিউ আবেদন করতে হয়।

* কোন আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে হয়।

* যুক্তিসঙ্গত বা আইনসঙ্গত কারণ থাকলে ৩০ দিনের পরেও রিভিউ আবেদন করা যায়।

* কোন আদেশের বিরুদ্ধে আপীল বা রিভিশন করা হলে রিভিউ আবেদন করা যাবে না। 

* রিভিউ আবেদন খারিজ হলে বা বাতিল হলে তার বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না।

নামজারির মামলার বিরুদ্ধে রিভিশনঃ রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৯ ধারা অনুযায়ী নিয়ে রিভিশনের বিধান উল্লেখ করা হলো-

(১) কালেক্টর কর্তৃক রিভিশন : কালেক্টর তার নিজ উদ্যোগে তার অধীনস্ত রাজস্ব কর্মকর্তার মি কোন আদেশ প্রদানের ১ মাসের মধ্যে উক্ত আদেশ পরিমার্জন করতে পারবেন। [ধারা-১৪৯(১)] 

(২) বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক রিভিশন : বিভাগীয় কমিশনার তার নিজ উদ্যোগে তার অধীনস্ত কালেক্টরের কোন আদেশ প্রদানের ৩ মাসের মধ্যে উক্ত আদেশ পরিমার্জন করতে পারবেন। [ধারা-১৪৯ (১এ)]

(৩) ভূমি প্রশাসন বোর্ড কর্তৃক রিভিশন : ভূমি প্রশাসন বোর্ড তার নিজ উদ্যোগে বিভাগীয় কমিশনারের কোন আদেশ প্রদানের ৬ মাসের মধ্যে উক্ত আদেশ পরিমার্জন করতে পারবেন। [ধারা-১৪৯(৩)]

এছাড়া ভূমি প্রশাসন বোর্ড খতিয়ানে বা খাজনা তালিকায় কোন ভুল অন্তর্ভুক্ত হলে তা সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। কোন আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা হলে রিভিশন করা যাবে না।

উপসংহারঃ কোন জমির নামজারি করা না হলে পার্শ্ববর্তী জমির মালিক বা সহ-শরীক তাদের নামে নামজারি করাতে পারে। এটি মালিকানার জন্য হুমকিস্বরূপ। নিজ নামে নামজারি করে রাখা হলে উক্ত জমি নিরাপদে থাকে। এছাড়া নামজারির কারণে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।